স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী : টঙ্গীর কহর দরিয়া (তুরাগ) নদীর তীরে আগামীকাল শুক্রবার অনূষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানে প্রথম পর্বের সম্পন্ন হওয়া বিশ্ব ইজতেমার ময়লা আর্বজনা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে অপসারন করা হয়ে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা দলে দলে ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদের দেশী বিদেশী চিল্লাধারী জামাত কর্মীরা বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ ও আশপাশের জেলা এলাকার মসজিদ গুলোতে এসে অবস্থান নিচ্ছেন বলে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি জানান। তারা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ইজতেমাস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করবেন। এবার দ্বিতীয় পর্বে ৩৫ জেলার মুসল্লি¬রা ইজতেমা ময়দানে জেলা ভিত্তিক খিত্তায় অবস্থান করবেন। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এবং হরতাল এবং একটি রাজনৈতিক দল কর্তৃক অনিদিষ্টকালের জন্য ডাকা ধর্মঘটের কারণে দুর-দুরান্ত থেকে মুসল্লিদের বিশ্ব ইজতেমায় আসতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মুসল্লিদের কথা বিবেচনা করে ইজতেমা আয়োজক কমিটির নেবিশ্ব ইজতেমার জিম্মাদার মাওলানা মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের দ্বিতীয় পর্ব যাতে করে সুষ্ট ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয় সেলক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছরই মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। স্থান সংকুলানের কারনে এবারও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্টিত হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে দ্বিতীয় পর্বে অংশ গ্রহণকারী জেলা ভিত্তিক ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। জেলা ভিত্তিক দ্বিতীয় পর্বের খিত্তা গুলো হচ্ছে ঃ- খিত্তা নং-১ (নারায়ণগঞ্জ-১), খিত্তা নং-২ (নারায়ণগঞ্জ-২), খিত্তা নং-৩ (ঢাকা-১, হালকা-৩০১-৩২৫), খিত্তা নং-৪ (ঢাকা-২, হালকা-৬০১-৬৩৯), খিত্তা নং-৫ (কক্সবাজার), খিত্তা নং-৬ (মানিকগঞ্জ), খিত্তা নং-৭ (পিরোজপুর), খিত্তা নং-৮ (পটুয়াখালী), খিত্তা নং ৯(১) (টাঙ্গাইল-ক), খিত্তা নং ৯(২) (টাঙ্গাইল-খ), খিত্তা নং-১০(১) (জামালপুর-ক), খিত্তা নং-১০(২) (জামালপুর-খ), খিত্তা নং-১১ (বরিশাল), খিত্তা নং ১২(নেত্রকোনা), খিত্তা নং-১৩ (কুমিল্লা), খিত্তা নং-১৪(মেহেরপুর), খিত্তা নং-১৫ (ঝিনাইদহ), খিত্তা নং-১৬ (ময়মনসিংহ-১), খিত্তা নং-১৭ (ময়মনসিংহ-২), খিত্তা নং-১৮ (ময়মনসিংহ-৩), খিত্তা নং-১৯ (লক্ষ্মীপুর), খিত্তা নং-২০ (বি.বাড়ীয়া), খিত্তা নং-২১(কুড়িগ্রাম), খিত্তা নং-২২ (নোয়াখালী), খিত্তা নং-২৩ (নীলফামারি), খিত্তা নং-২৪ (ঠাকুরগাঁও), খিত্তা নং-২৫(পঞ্চগড়), খিত্তা নং-২৬ (চাপাইনবাবগঞ্জ), খিত্তা নং-২৭ (বগুড়া), খিত্তা নং-২৮ (পাবনা), খিত্তা নং-২৯ (নওগাঁ), খিত্তা নং-৩০ (মুন্সিগঞ্জ-১), খিত্তা নং-৩১ (মুন্সিগঞ্জ-২), খিত্তা নং-৩২ (মাদারীপুর), খিত্তা নং-৩৩ (গোপালগঞ্জ), খিত্তা নং-৩৪ (সাতক্ষীরা), খিত্তা নং-৩৫ (মাগুরা), খিত্তা নং-৩৬ (খুলনা), খিত্তা নং-৩৭ (সুনামগঞ্জ), খিত্তা নং-৩৮ (মৌলভী বাজার), ৩৯ (কুষ্টিয়া)।
ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশি¬ষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, প্রথম পর্বেও মতউ দ্বিীয় পর্বে ডেসকো তাদেও সকল প্রকার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে গতবারের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যাতে করে কোন একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া আছে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ও টঙ্গী সরকারী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট আবাসিক মেডিকেল অফিসার জানান, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় রুপান্তর করা আছে। এছাড়াও অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পে দুইজন করে চিকিৎসক, ২ জন নার্স থাকবে। এ্যাজমা, ট্রমা, হৃদরোগ, বার্ণ, চক্ষু ও ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা দেবেন। প্রতিটি বিভাগে একটি করে এ্যাম্বুলেন্স থাকবে। গাজীপুর স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রথম পর্বেও মতোই দ্বিতীয় পর্বে সকলে সম্মিলিত ভাবে কাজ করা হবে।
এদিকে রেলওয়ের ডিভিশন কর্মকর্তা জানান, প্রথম পর্বেও মতোই দ্বিতীয় পর্বেও ইজতেমার বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকবে। এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ইজতেমার আগের দিন থেকে ৪ টি আন্তঃনগর ও ৭ টি লোকাল ট্রেন দেওয়া হবে। তারা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আনা-নেওয়া করবে। ইজতেমার দিন থেকে দুরপাল্লার আন্ত:নগর ট্রেনগুলি টঙ্গীতে বিরতি করবে। ইজতেমার মুসল্ল¬¬ীদের জন্য ট্রেনে ওজু, নামাজ পড়াসহ সকল ব্যবস্থা করা আছে।
অপরদিকে বিআরটিসির প্রায় ৩০০ টি বাস দেওয়া হয়েছে, যেগুলিতে শুধু মুসল্ল¬¬ীরা যাতায়াত করতে পারবে। বাসগুলির সামনে বিশেষ স্টিকার লাগনো থাকবে। মোট ৭ টি স্থান থেকে এবাস গুলো চলাচল করবে বলে বিআরটিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এপ্রতিনিধিকে জানান।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান জানান, প্রথম পর্বের ন্যায় সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে দিনে দুইবার রাস্তার ধুলোবালি রোধ করার জন্য পানি ছিটানো হচ্ছে। মশা নিধনের জন্য মশা নাশক ছিটানো হচ্ছে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে বেশকিছু এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থাসহ মনিটরিং ক্যাম্প, মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ৪০ টি স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে প্রথম পর্বের মতোই মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হবে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুমসহ সার্বক্ষনিক কর্মকর্তা ও ফায়ারম্যানরা উপস্থিত থাকবেন। ময়দানে প্রতি খিত্তায় ফায়ারম্যান এবং বিভিন্ন স্থানে ৩ টি পানিবাহী গাড়ী, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, ১ টি লাইটিং ইউনিট এবং ৩ টি এ্যাম্বুল্ন্সে থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের ২০ জন কর্মকর্তাসহ ২৫০ কর্মী সার্বক্ষনিক উপস্থিত থাকবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জানায়, পুর্বের ন্যায় ইজতেমা ময়দানে ১১ টি গভীর নলকুপ স্থাপন করা আছে। যার থেকে দৈনিক প্রায় ৩ কোটি লিটার পানি মুসল্ল¬¬ীদের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বিপুল সংখ্যক টয়লেট, গোসল ও ওজুখানা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াসা কর্তৃপক্ষও তাদের গাড়ীর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পানি সরবরাহ করবে।
জেলা পুলিশ সুপার জানান, ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকার আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা গতকাল থেকে টঙ্গীতে আসতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই চলে এসেছেন। তারা টঙ্গী থানায় রিপোর্ট পেশ করে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিবেন। প্রথম পর্বের ইজতেমার জন্য পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রথম পর্বের মতোই সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হবে। এছাড়া বাইনোকুলার, মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্ল¬াশী করা হবে। ইজতেমা ময়দানের সব প্রবেশপথে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব ও পুলিশের ৮টি পর্যবেক্ষন টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক জানান, ইজতেমা শুরুর আগের দিন থেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়াও পচাবাসী খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিয়ন্ত্রনসহ তাদের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিতে একাধিক ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করবে।
তৃবৃন্দ ইজতেমা চলাকালে এধরনের কর্মসুচী না দিতে এবং বর্তমান চলমান পরিস্থিতি বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি জোর আহবান জানান।

