অবরুদ্ধ গোটা দেশ। সংঘাত-সংঘর্ষ জেলায় জেলায়। নিষেধাজ্ঞার পরও রাজধানীতে
দুই জোটের শক্তি প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞা। ঢাকায় বিরোধী জোটের সমাবেশ ঘিরে
রোববার থেকে সারা দেশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন ঢাকা। এমন অবস্থায় সারা দেশে
কর্মসূচি পালন করেছে বিরোধী জোট। ঘোষণা করা হয়েছে টানা অবরোধের। প্রশাসনের
নিষেধাজ্ঞা, পুলিশি বাধা, গুলিবর্ষণ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলা ও
অবস্থানের কারণে রাজধানীতে সমাবেশ করতে পারেনি বিরোধী জোট। গুলশানের
রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা
জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে পুলিশ। কার্যালয় থেকে বের হতে চাইলে তার গাড়ি
লক্ষ্য করে পিপার স্প্রে ছুড়ে পুলিশ। অন্যদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিকালে
সংঘর্ষের পর সেখানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবও কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন।
তাকে গ্রেপ্তারের জন্য বাইরে অবস্থান করছে পুলিশ। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে
রাজধানীসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপিসহ জোটের
নেতাকর্মীরা। সেসব মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে গিয়ে টিয়ার শেলের পাশাপাশি
গুলিবর্ষণ করেছে পুলিশ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের পাশাপাশি
বিরোধী জোট নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে সরকারদলীয় কর্মীরা। এ সময় সারা
দেশে শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও শ’ শ’ ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠনের নেতা ও
সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে প্রজন্মলীগ। সারা দেশে পুলিশের গুলিতে নাটোরের
২ ছাত্রদল ও রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে দুই বিএনপিকর্মীসহ নিহত হয়েছেন
৪জন। পুলিশ ও সরকারদলীয় কর্মীদের যৌথ হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ৫ শতাধিক
বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী। রোববার রাত থেকে গতকাল দিনভর সারা দেশে চালানো
হয়েছে ব্যাপক ধরপাকড়।
গ্রেপ্তার করা হয়েছে- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি লায়ন আসলাম চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, ডিসিসির সাবেক কমিশনার আলতাফ হোসেন, লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন ভূইয়াসহ অন্তত সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, লক্ষীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, মৌলভীবাজার, যশোর, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, ফেনী, গাজীপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, খাগড়াছড়ি, নরসিংদী, পাবনা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ৪০ জেলায় সংঘর্ষ ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদে সারা দেশে টানা অবরোধের পাশাপাশি নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঢেকেছে ২০দলীয় জোট। দুই জোটের কর্মসূচি আর পাল্টা কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ জেলার বাস চলাচল।
সারা দেশ অবরুদ্ধ: সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়ে বিরোধী জোটের শীর্ষনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা বলেছেন, আজ সারা দেশে যেভাবে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত একই ধরনের কর্মসূচি চলবে। গতকাল বিকালে গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমি গত পরশুদিন এসেছিলাম অফিস করতে। অফিস থেকে আমি অসুস্থ রিজভীকে দেখতে যাবো বলে পল্টনে যাওয়ার জন্য আমার গাড়ির মধ্যে বসেছি। তারপরেই দেখি যে পুলিশ এখানে গেট বন্ধ করে রেখেছে। গাড়ি টাড়ি দিয়ে সব অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কেন- আমি জানি না। খালেদা জিয়া বলেন, আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল। সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরবর্তী কর্মসূচি না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। যখন আবার পরিবেশ পরিস্থিতি আসবে তখন আমরা সমাবেশ করবো। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটা সমাবেশ করবো। সরকার আমাদের সমাবেশ করতে দিলো না। সমাবেশ করতে না দেয়ার কারণ কি? খালেদা জিয়া বলেন, গতবার এই দিনে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। এই নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়নি। যারা ক্ষমতায় তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। মানবাধিকার, আইনের শাসন নেই। আমার এখানে কাউকে আসতে দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরীকেও আসতে দেয়া হয়নি। আরও অনেকে আসতে চাইছেন। কিন্তু পারছেন না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। তারা বলছে, আমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এটি কিসের নিরাপত্তা। এত দিন নিরাপত্তা দেয়নি। কর্মসূচি এলেই নিরাপত্তা। এভাবে চলতে পারে না। আমি জনগণের কাছে নিরাপদ। আওয়ামী লীগই আমার নিরাপত্তাহীনতার প্রধান কারণ। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এ সরকারের অধীনে দেশে সুশাসন বলে কিছু নেই। আজকে আমি শুধু অবরুদ্ধ নই, গোটা দেশটাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। আজকে এই সরকার একটা জালেমি সরকার। এই সরকার শুধু দেশকে অবরুদ্ধ করেনি, দেশকে একটা কারাগারে পরিণত করেছ। এই অবস্থা চলতে পারে না। দেশে বর্তমানে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের লোকজন পুলিশের সহায়তায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করছে। এটা কোন দেশে বাস করছি আমরা। আজকে এই দেশ বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলেছে এই অবৈধ সরকার। দেখলে মনে হয়, দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ পরিবর্তন চায়।
আজকের পরিস্থিতি থেকে মনে হচ্ছে জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। তাদের সঙ্গে নেই। এজন্য তারা ভোট দিতে ভয় পায়। খালেদা জিয়া যখন কথা বলছিলেন তখন পুলিশ বাইরে থেকে ভেতরে পিপার স্প্রে করে। এতে খালেদা জিয়াসহ অন্য নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। এসময় দলীয় কয়েকজন মহিলা নেত্রী নিউজ পেপারে আগুন ধরিয়ে গ্যাস অপসারণের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, কেন রে ভাই, গ্যাস কেন মারা হচ্ছে? আমি তো কথা বলছি। কথাও কি আপনারা বলতে দেবেন না? পুলিশ বাহিনীতে সরকারের এজেন্ট ঢুকে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটি বিশেষ জেলার লোককে পুলিশ বাহিনীতে ঢোকানো হয়েছে। পুলিশের কাজ নয় এমন কাজও পুলিশকে দিয়ে করানো হচ্ছে। তিনি ফটকের বাইরে দাঁড়ানো পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ি বেশি দিন টিকবে না। এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, এখানে এমন কি হলো যে নারীদের ওপর পিপার স্প্রে করতে হবে? তিনি পুলিশ সদস্যদের বলেন, তাদেরও মা-বোন আছে। তারা এই দৃশ্য দেখলে তাদের (পুলিশের) সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত। অবৈধ সরকারের কারণে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। আমাকে কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, শুধু আমি একা অবরুদ্ধ নই, পুরো দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা দিলে পুলিশ নয়াপল্টনে নিয়ে যেতে পারত আমাকে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার সরকারকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় আসতে বললেও ক্ষমতাসীনরা তাতে সাড়া দেয়নি। নির্বাচন দিতে এরা ভয় পায় কেন?
একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেটাও আমরা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নিতে পারি। যেটা অতীতে আমরা করেছি; ঠিক করে নেয়া যায়। কিন্তু তারা সেই পথে না গিয়ে আজকে শুধু গুলি, টিয়ার গ্যাস, হামলা মামলা এগুলো দিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এজন্য যে, আমি কর্মসূচিতে গেলে জনগণের স্রোত নামবে। এই অবৈধ সরকার জনগণকে ভয় পায়। কারণ তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। খালেদা জিয়া বলেন, শুনেছি একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা কোন সমাধান নয়। এর আগেও অনেকগুলো চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা কথা বলবে, আর অন্যরা কথা বললে টেলিকাস্ট করতে দেবে না। এটা তো গণতন্ত্রের নমুনা নয়। কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা চাই এখনই তারা সব তুলে দেবে, যাতে আমরা সমাবেশ করতে পারি।
অবরুদ্ধ খালেদার বের হওয়ার চেষ্টা
৫ই জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে যোগ দিতে অবরুদ্ধ তার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সকাল থেকেই গণমাধ্যম কর্মীসহ দলের নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন- কখন খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বের হবেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িচালক কার্যালয়ের ভেতরে রাখা গাড়িটি স্টার্ট দেন। এরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তোড়জোড় শুরু হয়। কার্যালয়ের গেটে কয়েকশ’ নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। এর ঠিক পরের সারিতেই বেশ কয়েকজন ডিবি পুলিশ সদস্য অবস্থান নেন। এরপর শতাধিক সাধারণ পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। কার্যালয়ের গেটের সামনে আনা হয় জলকামান। খালেদা জিয়ার বের হবেন- এমন খবর পেয়ে বেলা ১২টার দিকে কার্যালয়ের মূল ফটকে একটি চাইনিজ তালা ও পকেট গেটে একটি ছোট তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। লাইভ সমপ্র্রচারের প্রস্তুতি নেন টিভি চ্যানেলগুলোও। এরপর থেকেই গণমাধ্যম কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। বেলা ১টার দিকে কার্যালয়ের দক্ষিণ দিক দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন তিনজন মহিলা দলের কর্মী। এসময় পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
বেলা পৌনে ৪টায় অপেক্ষা পালা শেষ হয়। কার্যালয়ের দোতলা থেকে কালো পতাকা হাতে দলের মহিলা নেত্রীদের নিয়ে নিচে নামেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। উপস্থিত সাংবাদিকদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি। এরপর মহিলা নেত্রীরা কালো পতাকা হাতে খালেদা জিয়ার গাড়ির চারপাশে অবস্থান নেন। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানকে নিয়ে গাড়ি উঠেন খালেদা জিয়া। গাড়িটি কয়েক গজ এগিয়ে কার্যালয়ের গেটে অবস্থান নেয়। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক পুলিশ মহাপরির্দশক আবদুল কাইয়ুম গেটের ফাঁক দিয়ে পুলিশকে তালা খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। পুলিশ তাতে সাড়া না দিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও একই অনুরোধ করেন। তাতেও পুলিশ তালা না খোলায় সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন শিমুল বিশ্বাস। এরপর মহিলা নেত্রীরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন এবং কার্যালয়ের মূল ফটক খোলার চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে লোহার রড দিয়ে ভেতর থেকে তালা ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন মহিলা নেত্রীরা। এসময় জলকামান থেকে মহিলা নেত্রীদের ওপর পিপার সেপ্র ছোড়ে পুলিশ। গাড়ির দরজা খোলা থাকায় পিপার সেপ্রর গ্যাসে আক্রান্ত হন। এছাড়া পিপার সেপ্রতে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী মাহবুবুর রহমান ডিউ, চেয়ারপারসন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন, সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, নিলুফার চৌধুরী মনি, সাংবাদিকদের মধ্যে বিডিনিউজের জ্যেষ্ঠ রিপোর্টার সুমন মাহমুদ, ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার রাশেদুল হাসান, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তারাসহ বেশ কয়েক গণমাধ্যমকর্মী আহত হন। এসময় নিউজ পেপারে আগুন ধরিয়ে পিপার সেপ্রর গ্যাস অপসারণের চেষ্টা করেন মহিলা নেত্রীরা। মিনিট পনের পরে পিপার সেপ্রর ঝাঁজ কিছুটা কম হলে ফের মূল ফটক খোলার চেষ্টা করেন মহিলা নেত্রীরা। স্লোগান দিলে পুলিশ আরেক দফা পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে। খালেদা জিয়া তখনও গাড়ির ভেতরে বসে ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ৪৫ মিনিট গাড়িতে বসে থাকার পর দরজা খোলে নিচে নামেন তিনি। এসময় ছোট একটি টুলের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। এরপর প্রায় দীর্ঘ ২৫ মিনিট বক্তব্য রেখে ফের কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি।
গুলশান কার্যালয় এলাকায় যুদ্ধাবস্থা
গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কে ঢোকার সবগুলো পয়েন্টেই পুলিশের ব্যারিকেড। মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চৌকি। ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি হলো বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়। দলীয় কাজকর্ম সারতে শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বাড়ানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা। তিন স্তরের পুলিশের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দক্ষিণ পাশে একটি জলকামান, পুলিশ ভ্যান ও উত্তর পাশে আরেকটি জলকামান ও বেশ কয়েকটি পুলিশ ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়। খালেদা জিয়াকে নয়াপল্টনের সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে কার্যালয়ের গেটে ১১টি বালু ও ইটভর্তি ট্রাক এনে রাখা হয়। ওই এলাকায় সাধারণ মানুষ ও যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বিপুল সংখ্যক নারী পুলিশ, সাধারণ পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। গতকাল পুলিশি নিরাপত্তা বলয় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নজরদারি এড়িয়ে গুলশান এলাকায় প্রবেশ করতে পারেননি কোন নেতাকর্মী।
প্রতিটি মোড়ে মোড়েই চালানো হয় তল্লাশি। এছাড়া বারিধারার কানাডিয়ান অ্যাম্বাসির সামনের রাস্তা থেকে বনানীর পয়েন্টে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। এসময় গণপরিবহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে গাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে জার্মান দূতাবাসের এক কর্মকর্তা গুলশান কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দেয়। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। এর আগে শনিবার রাতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয় থেকে নয়া পল্টনে অসুস্থ দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে দেখতে যেতে চাইলে পুলিশ তার পথ আটকায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে খালেদা বাসায় যাওয়ার জন্য পুলিশকে ব্যারিকেড সরাতে বলেন। কিন্তু তা না সরানোয় কিছুক্ষণ গাড়িতে অপেক্ষা করে ফের কার্যালয়ে যান তিনি। এরপর সেখানেই তার রাত কাটে। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে রোববার বিকালে তাকে দেখতে গুলশান কার্যালয়ের সামনে যান সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তবে পুলিশ তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তিনি সেখান থেকে চলে যান। এরপর সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদসহ পেশাজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল গুলশান কার্যালয়ে যান। তবে পুলিশ তাদের ভেতরে ঢুকতে অনুমতি দেন। পরে তারা অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদিকে দুপুরে মহিলা দল ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাায় যুবলীগের কর্মীরা। এসময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে অর্ধশতাধিক মহিলা দলের নেতাকর্মী গুলশান কার্যালয়ের দক্ষিণ দিক থেকে পুলিশ বেষ্টনী ফাঁক করে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এদিকে সকাল থেকে দলের নেতাকর্মীদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বিকাল থেকে সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক জন সাংবাদিক ভেতরে আটকা পড়েন। গুশলান এলাকায় কড়াকড়ি পাহারা বসানো হয়েছে। যান চলাচল ও সাধারণ মানুষের চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ ও র্যাব টহল দিচ্ছে। এছাড়া পুলিশ ও র্যাবের বাইরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা গুলশান এলাকার রাস্তায় অবস্থান করছেন। ওদিকে অবরুদ্ধ অবস্থায় খালেদা জিয়া বিবিসি বাংলাকে একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। রোববার রাত ১২টার পর থেকে একে একে ১১টি ট্রাক এনে কার্যালয়ের গেটের সামনে রাখা হয়। এক ট্রাক ড্রাইভার জানান, ট্রাকের কাগজপত্র দেখার কথা বলে আমাদের কাকলী সিগন্যাল থেকে নিয়ে এসেছে। তারা বলেছে, আমরা যেখানে নিয়ে যাই সেখানে নিয়ে যাবে। এরপর গুলশান কার্যালয়ে আনা হয়।
আটকা পড়েন শতাধিক মহিলা নেত্রী ও গণমাধ্যমকর্মী
শনিবার রাতেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ও মহিলা নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ূম, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক এমপি রেহানা আখতার রানু, নিলুফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, সুলতানা আহমেদ, ফরিদা ইয়াসমীন, মহিলা দল নেত্রী ফারজানা রহমান হোসনা প্রমুখ। রোববার দুপুর থেকে গুলশান কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেয়া হলে ভেতরে আটকা পড়েন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। অবরুদ্ধ অবস্থায় তারা অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন তারা। ঘুম ও গোসল করতে না পেরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা।
অসুস্থ খালেদার চিকিৎসায় কার্যালয়ে মেডিকেল টিম
পুলিশের ছোড়া পিপার সেপ্রতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া ও দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এবং গণমাধ্যম কর্মী। তাদের চিকিৎসা দিতে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করেন তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. শামীমের নেতৃত্বে মেডিকেল টিমের সদস্যরা কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ খান কামাল সোহেল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিকালে পুলিশের ছোড়া পিপার সেপ্রতে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এজন্য তার বক্তিগত চিকিৎসক ডা. শামীম এসেছেন। ম্যাডামকে তিনি চিকিৎসা দিচ্ছেন। ওদিকে পিপার সেপ্রতে আহত মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী ও সাংবাদিকদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. নাসিরে নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম।
অবরুদ্ধ নয়াপল্টন
৫ই জানুয়ারি ২০ দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনসহ আশেপাশের এলাকা সকাল থেকেই সিল করে দেয় পুলিশ। ভোরেই নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ বন্ধ করে দেয় নয়াপল্টন ভিআইপি রোড। সেখানে মোতায়েন রাখা হয় জলকামান, প্রিজন ভ্যান ও সাঁজোয়া যান। নয়াপল্টন ভিআইপি রোডের প্রতিটি গলির মুখে বসানো হয় পুলিশি পাহারা। নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়কে কেন্দ্র করে বিজয়নগর থেকে পুরানা পল্টন, ফকিরাপুর থেকে শান্তিনগর বাজারের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তবে সকাল থেকে নয়াপল্টনকে কেন্দ্র করে আশেপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা ভেঙে দফায় দফায় মিছিল বের করেছে বিএনপি, অঙ্গদল ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা। পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে ও গুলি চালিয়ে প্রতিটি মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয় অন্তত ২০ জন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। সকাল ১০টার সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসভবনে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বাসায় ছিলেন। তার পারিবারিক সূত্র জানায়, তল্লাশিকালে মির্জা আব্বাসকে না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাসা থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র নিয়ে গেছে। দুপুর সোয়?া ১২টার দিকে সেগুনবাগিচার কালভার্ট এলাকায় একটি মিছিল বের করে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা।
পুলিশ টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়ে মিছিলে বাধা দিলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয় অন্তত ৫ জন। এ সময় এক সার্জেন্টের মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। ওদিকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে পল্টন কালভার্ট রোডে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিকের নেতৃত্বে যৌথভাবে একটি মিছিল করে মহানগর বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। মিছিলটি কালভার্ট রোড থেকে বিজয় নগরের সড়কে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ একজনসহ ৫ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জে ১৮-২০ জন আহত হয়। এদিকে দুপুর ১টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের বিপরীত দিকে ঢাকা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি রাজারবাগ এলাকায় আল-বারাকা হাসপাতালের সামনে পৌঁছলে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি চালায়। এ সময় সাবেক কমিশনার হারুন, বিএনপি কর্মী লিটন, রাজু, রাসেলসহ ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়। মিছিল থেকে পুলিশ মোটরচালক দলের সাধারণ সম্পাদক হাজী রাব্বীসহ কয়েকজনকে আটক করে। একই সময় বেইলী রোডের হক বেকারির সামনে পরপর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলযোগে এসে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওদিকে দুপুর আড়াইটার দিকে সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের গলি এলাকায় একটি মিছিল করে বিএনপি ও ছাত্রদল। মিছিল থেকে ৮/১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। একই সময় ফকিরাপুলে মিছিল বের করে শিবির। মিছিল থেকে দু’টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পুলিশ। বিকাল তিনটার দিকে ফকিরাপুলে ছাত্রদল মিছিল করে। এ সময় তারা পুলিশের একজন এসআই’র ওপর হামলা করে। এ সময় ফকিরাপুলের হোটেল ওয়ান্সের সামনে দু’টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় ছাত্রদলকর্মীরা। মোটরসাইকেল দু’টির একটি পুলিশের (ঢাকা মেট্রো-হ-১১-২৭৩৫) ও অন্যটি প্রেস স্টিকার লাগানো (ঢাকা মেট্রো-এ-০১-৪০৪২)।
এরপর ছাত্রদল কর্মীরা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। জবাবে টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে আবুল কাশেম, রাহাতসহ ৬ জনকে আটক করে। এরপর ফকিরাপুলের শপিংমল ও বিভিন্ন অলিতে গলিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। বিকাল তিনটার সময় পুরানা পল্টনে বায়তুল মোকাররমের বিপরীতে আজাদ প্রোডাক্টের গলিতে দু’টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর আগে সকালে নয়াপল্টন থেকে আটক করা হয় ৪ জনকে। পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় কেউ যেন নাশকতা করতে না পারে সে জন্য এ অভিযান চালানো হচ্ছে। পুরো এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েতের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল। সে জমায়েতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে গ্রেপ্তার ও কার্যালয়ের কর্মচারীদের বের করে দেয় পুলিশ। জনশূন্য বিএনপি কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনজীবীদের বিক্ষোভ, সংঘর্ষ
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় দিনভর বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আইনজীবীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিকালের দিকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের বাইরে থেকে আইনজীবীদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষোপ করে। তারা আইনজীবীদের ধাওয়া করে। বেলা ১২টার দিকে কালোপতাকা হাতে মিছিল বের করেন বিরোধী সমর্থক আইনজীবীরা। তারা হাইকোর্ট মাজার দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে মুস্তাফিজুর রহমান নামে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। মিছিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আইনজীবী নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ অংশ নেন। পরে আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের পাশে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ফটকে তালা দিয়ে বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে প্রেস ক্লাব মোড়ে বিস্ফোরণের শব্দ হয়। এই শব্দে প্রেস ক্লাবের সামনে থাকা আওয়ামী লীগ কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের দিকে ছুটে যান। তারা ফটকের ভেতরে থাকা আইনজীবীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। আইনজীবীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়েন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রধান ফটক খুলে সুপ্রিম কোর্ট এলাকার ভেতরে ঢুকে আইনজীবীদের ধাওয়া করে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, জেলার তেবারিয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় অন্তত আরও ১০জন আহত হয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে নাটোর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। এতে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে জামায়াত। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে জেলায়। ঘটনার পরপরই তেবারিয়া এলাকায় ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর। এদিকে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবদুল আজিজের নয়াবাজার এলাকায় দ্বিতল বিশিষ্ট খামার বাড়ি এবং নয়াবাজার এলাকায় দুইটি বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসাবে গণতন্ত্র মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে শহরে মিছিল সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার সকালে শহরের তেবারিয়া এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা দুই দলের আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও একপর্যায়ে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে একদল দুর্বৃত্ত এসে গুলি করে চলে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অনেকে। এদের মধ্যে আহত রাকিব আলী ও রায়হানকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দুই জনকে মৃত ঘোষণা করেন। রাকিব তেবারিয়া এলাকার চান মিয়ার ছেলে। নিহত দুই জনই বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল কর্মী। ঘটনায় পর থেকে এলাকায় র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আহত বাকিদের নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সোমবার সকালে শহরের আলাইপুর এলাকায় ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যা দিয়ে জেলা বিএনপি ও কানাইখালী এলাকায় গণতন্ত্র মুক্ত দিবস আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়। এদিকে সকালে গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল আজিজের দ্বিতলবিশিষ্ট খামারবাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এলাকাবাসী জানান, সোমবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নয়াবাজার বিএনপির অফিস ভাঙচুর করে। এ সময় তারা অফিসের চেয়ারটেবিল ও অন্যান্য মালামাল রাস্তায় বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক সংলগ্ন পুকুর পাড় এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বিতল খামারবাড়ির দরজা ভেঙে ব্যাপক লুটপাট করে। বাড়ির দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন গোটা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে বিকালে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশ থেকে নিহত রাকিবকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। তবে তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন তিনি ছাত্রদল করতেন।
স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে পুলিশের গুলিতে বিএনপির এক কর্মী নিহতসহ অন্তত ৬ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত বিএনপি কর্মীর নাম মজের আলী (৫০)। তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজশাহীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। এর আগে মহানগর বিএনপির সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে সকাল ১০টার দিকে নগরীর গ্রেটার রোড় এলাকায় মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ অন্তত ৫ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকাল ৩টার দিকে পুঠিয়া উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা বানেশ্বর বাজারে মিছিল বের করেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে পাল্টা মিছিল বের করলে সংর্ঘষ বেধে যায়। উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পেট্রোল পাম্প এলাকায় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ট্রাফিক মোড় এবং তাদের মাঝে পুলিশ অবস্থান নেয়। পরে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে এলাপাতাড়িভাবে শতাধিক রাউন্ড শটগানের গুলি, রাবার বুলেট, টেয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মজের আলী ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। হরতালে বাধা দিলে বা গুলি করলে লাগাতার কর্মসূচি দেয়ারও হুমকি দেন নেতাকর্মী। এর আগে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে রাজশাহী নগরীতে পৃথকভাবে সমাবেশ করেছে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল সকাল ১০টা থেকে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় মহানগর আওয়ামী। আগে সেখান থেকে শোভাযাত্রা বের করার ঘোষণা দিলেও সেই কর্মসূচি থেকে সরে আসে। পরে ১১টার দিকে একটি মিছিল সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এসে ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রায় একই সময়ে নগরীর ভুবনমোহন পার্ক এলাকায় গণতন্ত্র হত্যা দিবসের বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মহানগর বিএনপি। এছাড়া সকাল সকাল ১০টায় জেলা বিএনপি রাজশাহী কলেজে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে সকাল ১০টার দিকে নগরীর গ্রেটারমোড় এলাকায় বিএনপির মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশের ছোড়া শর্টগানের গুলি ও টিয়ারশেলের আঘাতে অন্তত ৫/৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। এছাড়া গতকাল সকাল ৭টার দিকে নগরীর উপশহর এলাকার অবস্থিত আওয়ামী লীগের উত্তর শাখা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ওই অফিসের ভেতরে থাকা দুইটি মোটরসাইকেল ও চেয়ারটেবিল পুড়ে গেছে। পরে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে আটক করে পুলিশ। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোমবার বিকালে চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাটে পুলিশের গুলিতে জমশেদ (৪৮) নামে এক বিএনপি কর্মী মারা গেছেন। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনারায়ণপুর ইউনিয়নের মৃত মোন্তাজ আলীর ছেলে। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া জমশেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃত জমশেদ তাদের কর্মী। এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা ২০ দলীয় জোট আজ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। সূত্র জানায়, বিকাল ৩টার দিকে ২০দলীয় জোট মিছিল বের করে। কানসাট গোপালনগর মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে। এতে এরফান ও জমশেদসহ অন্তত ৩৫জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ জমশেদকে রাজশাহী নেয়ার পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মারা যায়। শিবগঞ্জ থানার ওসি ময়নুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিবগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকা, কানসাট কলেজ ও কানসাট এলাকায় ১৪৪ধারা জারি করা হয়। কিন্তু জামায়াত-বিএনপি কর্মীরা ১৪৪ধারা উপেক্ষা করে বিকাল ৩টার দিকে মিছিল বের করে এবং কানসাট গোপালনগর মোড়ে পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালায়।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জে পৃথকভাবে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়লে কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় আরও আহত হয়েছেন ১০জন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১ পর্যন্ত শহরের মিশনপাড়া ও বন্দরে এ ঘটনা ঘটে। সিলেট জেলা বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১০ জন। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ২০টি গাড়ি। এর মধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে আটক করেছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ। জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায় জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশ, ব্যবসায়ী, পথচারীসহ অন্তত প্রায় ৩০জন আহত হয়েছেন। ফেঞ্চুগঞ্জে জামায়াত ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এক এসআই ও দুই সোর্সসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর ৩জন ও অপর দুই জন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। লক্ষ্মীপুরে সকালে বিএনপির মিছিলে পুলিশ ধাওয়া করে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন ভূইয়া, বিএনপি কর্মী আবদুল কাদেরসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া ভোর রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দুই শিবিরকর্মীসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া রায়পুর উপজেলার বাস টার্মিনাল এলাকায় বিকালে বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও পুলিশে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয়ের অন্তত ৩০জন আহত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন থানায় যুবদল ও জামায়াতে ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীনগরে যুবদলের ৪ জন, সিরজদিখানে জামায়াতের ১ জনসহ ৫ ও মুন্সীগঞ্জ সদরে ৪ জন রয়েছে। রোববার রাতে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। রোববার রাতে মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ৫৬ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিশেষ অভিযানে মাগুরার ৪টি থানায় বিএনপি এবং জামায়াতের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ রাতভর জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংঠনের নেতাদের বাসা-বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে বলে নেতাদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিনাজপুরে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ১৩ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার গভীর রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এছাড়া জেলার বোচাগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছে আরও ১৫ নেতাকর্মীকে। বিএনপি ও জামায়াতের অফিস ভাঙচুর এবং পৌর বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনী এলাকা থেকে বিএনপি মিছিল বের করলে নেতা-কর্মীদের বাগবিতণ্ডা হয়।
এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি করেছে। এতে ৪ পুলিশসহ অন্তত ৫ থেকে ৬ জন মিছিলকারী আহত হয়েছেন। মিছিল থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। দুপুরে জেলার বড়লেখা উপজেলা সদরে বিএনপি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পৌর মেয়রসহ কমপক্ষে বিএনপির ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কমলগঞ্জে পুলিশ বাবুল মিয়া ও মাসুম মিয়া নামে বিএনপি-জামায়াতের দুই কর্মী আটক করে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। যশোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টি এস আইয়ুবসহ বিএনপি জামাতের ৮১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শহরের ঘোপ এলাকা থেকে সোমবার সকালে জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ুবকে আটক করে ডিবি পুলিশ। অপরদিকে গতকাল দিনভর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিএনপি জামায়াতের ৮১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত-পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৬ জন আহত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেছে। শহরের পুরাতন বাসস্টেশন থেকে ছাত্রদল মিছিল নিয়ে ট্রাফিক পয়েন্টের দিকে আসলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষ বাধে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা।
ঝিনাইদহ শহর ও শৈলকুপায় সাকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপি-আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় বিএনপি কর্মীরা ঝিনাইদহ শহরের এইচএসএস সড়কে জনতা ব্যাংকের একটি পাজেরো জিপ গাড়ি ভাঙচুর করে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৩৮ বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক করেছে। সিরাজগঞ্জ শহরে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্র ও যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর বেলা ১২টার দিকে শহরের হোসেনপুর ও ধানবান্ধি মহল্লায় অভিযান শুরু করে। হবিগঞ্জে ছাত্রদল ও পুলিশের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ব্যবহৃত হিউম্যান হলার, ইজিবাইকসহ ১০-১৫টি যানবাহন ও জেলা শিক্ষা অফিস ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। পুলিশ ৯ রাউন্ড শটগানের বুলেট ও ৩ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া ৭ নেতার্মীকে আটক করা হয়েছে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনপির কালোপতাকা মিছিলকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ শটগান থেকে অন্তত ১৯ রাউন্ড গুলি ছোড়ে ও ১ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এতে ১ জন শিশুসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া চাঁদপুরের বিভিন্ন এরাকা থেকে ২১ বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ফেনীতে ২০ দলের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গতকাল দিনভর ছাত্রদল শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে ককটেল বিস্ফোরণ করে। এ সময় যাত্রীবাহী বাসসহ অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্রদল নেতাসহ অন্তত ৭ জনকে আটক করেছে। গাজীপুরে কালোপতাকা মিছিল বের করা হলে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়।
দুপরে ছাত্রদল নগর ভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে মুজাহিদুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করেছে। এর আগে রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে মোট ৫৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপির দাবি এদের বেশীর ভাগই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী। চট্টগ্রামে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন দু’জন। এছাড়া লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। বিক্ষুব্ধ বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে নগরীর বাইরে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৩৯ কর্মী-সমর্থককে আটক করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড উপজেলায় রোববার রাত ও গতকাল বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও জামায়াত-বিএনপির কর্মীসহ ২১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার রাতে খুলনায় অভিযান চালিয়ে নগরী থেকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ২৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। রোববার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটক করে। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামাত-শিবিরসহ ৫০ জন আটক করেছে। রোববার রাত থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। মেহেরপুরে ১০ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গাংনী থানা উপজেলা থেকে ৬ জন ও মুজিবনগর থেকে ৪ জন। রোববার রাতে বাগেরহাট জেলার ৯ উপজেলা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ২৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতদের মধ্যে কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ফকির সাখাওয়াত হোসেন, কচুয়া উপজেলা জামায়াত নেতা জিয়া ফকির, চিতলমারীর ৩ ছাত্রদল নেতা সুমন শেখ, রুপম হোসেন ও রিফাত খান প্রমুখ। খাগড়াছড়িতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে। প্রতিবাদে আজ সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে মিছিলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উঠতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে পুলিশি বাধার মুখে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সাভারে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ চলাকালীন এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পাবনায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান জানান, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ১২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
নোয়াখালীতে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ৮ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে। পুলিশের গুলিতে ২ বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ বিএনপির ১২ জনকে আটক করেছে। এছাড়া জেলার কসবা উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। কক্সবাজারের ৭ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ২০ দলীয় জোটের ১৪ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার রাত ১২টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
বরগুনায় বিএনপি সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। কাটপট্টি এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্রদলের একটি মিছিল দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে গেলে পুলিশের সাথে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ভোলায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের দরগাহ রোড এলাকায় বিএনপি মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন পুলিশের ৩ সদস্যসহ অন্তত ২২ জন। এছাড়া শহরের বাংলা স্কুল মোড়ে ৩টি অটোরিকশা এবং ৫টি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পটুয়াখালীতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি কালো পতাকা মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে ৭ নেতাকমী আহত হয়। রাঙামাটিতে সকাল সাড়ে ১০ টায় বিএনপির মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের কার্যালয় চত্বরেই আটকে রাখে। অন্যদিকে শহরের কলেজ গেট এলাকায় বিএনপি মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দেয়।
গ্রেপ্তার করা হয়েছে- বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি লায়ন আসলাম চৌধুরী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব, ডিসিসির সাবেক কমিশনার আলতাফ হোসেন, লক্ষ্মীপুর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন ভূইয়াসহ অন্তত সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নারায়ণগঞ্জ, সিলেট, লক্ষীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, দিনাজপুর, মৌলভীবাজার, যশোর, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, চাঁদপুর, ফেনী, গাজীপুর, খুলনা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, বাগেরহাট, খাগড়াছড়ি, নরসিংদী, পাবনা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ ৪০ জেলায় সংঘর্ষ ও গণগ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদে সারা দেশে টানা অবরোধের পাশাপাশি নাটোর, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ঢেকেছে ২০দলীয় জোট। দুই জোটের কর্মসূচি আর পাল্টা কর্মসূচি ঘিরে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ জেলার বাস চলাচল।
সারা দেশ অবরুদ্ধ: সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দিয়ে বিরোধী জোটের শীর্ষনেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা বলেছেন, আজ সারা দেশে যেভাবে বিক্ষোভ ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত একই ধরনের কর্মসূচি চলবে। গতকাল বিকালে গুলশানের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টার পর উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, আমি গত পরশুদিন এসেছিলাম অফিস করতে। অফিস থেকে আমি অসুস্থ রিজভীকে দেখতে যাবো বলে পল্টনে যাওয়ার জন্য আমার গাড়ির মধ্যে বসেছি। তারপরেই দেখি যে পুলিশ এখানে গেট বন্ধ করে রেখেছে। গাড়ি টাড়ি দিয়ে সব অবরুদ্ধ করে রেখেছে। কেন- আমি জানি না। খালেদা জিয়া বলেন, আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল। সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। পরবর্তী কর্মসূচি না দেয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে। যখন আবার পরিবেশ পরিস্থিতি আসবে তখন আমরা সমাবেশ করবো। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম একটা সমাবেশ করবো। সরকার আমাদের সমাবেশ করতে দিলো না। সমাবেশ করতে না দেয়ার কারণ কি? খালেদা জিয়া বলেন, গতবার এই দিনে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। এই নির্বাচনে মানুষ ভোট দেয়নি। যারা ক্ষমতায় তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। মানুষের মৌলিক অধিকার নেই। মানবাধিকার, আইনের শাসন নেই। আমার এখানে কাউকে আসতে দেয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বি. চৌধুরীকেও আসতে দেয়া হয়নি। আরও অনেকে আসতে চাইছেন। কিন্তু পারছেন না। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমাকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। তারা বলছে, আমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এটি কিসের নিরাপত্তা। এত দিন নিরাপত্তা দেয়নি। কর্মসূচি এলেই নিরাপত্তা। এভাবে চলতে পারে না। আমি জনগণের কাছে নিরাপদ। আওয়ামী লীগই আমার নিরাপত্তাহীনতার প্রধান কারণ। বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বর্তমানে যারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত, তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। এ সরকারের অধীনে দেশে সুশাসন বলে কিছু নেই। আজকে আমি শুধু অবরুদ্ধ নই, গোটা দেশটাই অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। আজকে এই সরকার একটা জালেমি সরকার। এই সরকার শুধু দেশকে অবরুদ্ধ করেনি, দেশকে একটা কারাগারে পরিণত করেছ। এই অবস্থা চলতে পারে না। দেশে বর্তমানে একটি অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আর আওয়ামী লীগের লোকজন পুলিশের সহায়তায় বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমণ করছে। এটা কোন দেশে বাস করছি আমরা। আজকে এই দেশ বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলেছে এই অবৈধ সরকার। দেখলে মনে হয়, দেশে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চাইছে। নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ পরিবর্তন চায়।
আজকের পরিস্থিতি থেকে মনে হচ্ছে জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। তাদের সঙ্গে নেই। এজন্য তারা ভোট দিতে ভয় পায়। খালেদা জিয়া যখন কথা বলছিলেন তখন পুলিশ বাইরে থেকে ভেতরে পিপার স্প্রে করে। এতে খালেদা জিয়াসহ অন্য নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। এসময় দলীয় কয়েকজন মহিলা নেত্রী নিউজ পেপারে আগুন ধরিয়ে গ্যাস অপসারণের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, কেন রে ভাই, গ্যাস কেন মারা হচ্ছে? আমি তো কথা বলছি। কথাও কি আপনারা বলতে দেবেন না? পুলিশ বাহিনীতে সরকারের এজেন্ট ঢুকে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, একটি বিশেষ জেলার লোককে পুলিশ বাহিনীতে ঢোকানো হয়েছে। পুলিশের কাজ নয় এমন কাজও পুলিশকে দিয়ে করানো হচ্ছে। তিনি ফটকের বাইরে দাঁড়ানো পুলিশের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। বাড়াবাড়ি বেশি দিন টিকবে না। এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। খালেদা জিয়া বলেন, এখানে এমন কি হলো যে নারীদের ওপর পিপার স্প্রে করতে হবে? তিনি পুলিশ সদস্যদের বলেন, তাদেরও মা-বোন আছে। তারা এই দৃশ্য দেখলে তাদের (পুলিশের) সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতন্ত্র নির্বাসিত। অবৈধ সরকারের কারণে দেশের গণতন্ত্র বিপন্ন। আমাকে কার্যালয় থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, শুধু আমি একা অবরুদ্ধ নই, পুরো দেশ আজ কারাগারে পরিণত হয়েছে। নিরাপত্তা দিলে পুলিশ নয়াপল্টনে নিয়ে যেতে পারত আমাকে। খালেদা জিয়া বলেন, দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্য বারবার সরকারকে নির্বাচন নিয়ে আলোচনায় আসতে বললেও ক্ষমতাসীনরা তাতে সাড়া দেয়নি। নির্বাচন দিতে এরা ভয় পায় কেন?
একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, সেটাও আমরা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নিতে পারি। যেটা অতীতে আমরা করেছি; ঠিক করে নেয়া যায়। কিন্তু তারা সেই পথে না গিয়ে আজকে শুধু গুলি, টিয়ার গ্যাস, হামলা মামলা এগুলো দিয়ে মানুষকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এজন্য যে, আমি কর্মসূচিতে গেলে জনগণের স্রোত নামবে। এই অবৈধ সরকার জনগণকে ভয় পায়। কারণ তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই। খালেদা জিয়া বলেন, শুনেছি একুশে টিভি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এটা কোন সমাধান নয়। এর আগেও অনেকগুলো চ্যানেল বন্ধ করে দিয়েছে। তারা কথা বলবে, আর অন্যরা কথা বললে টেলিকাস্ট করতে দেবে না। এটা তো গণতন্ত্রের নমুনা নয়। কার্যালয়ের তালা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়ে সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আমরা চাই এখনই তারা সব তুলে দেবে, যাতে আমরা সমাবেশ করতে পারি।
অবরুদ্ধ খালেদার বের হওয়ার চেষ্টা
৫ই জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে পূর্ব ঘোষিত সমাবেশে যোগ দিতে অবরুদ্ধ তার গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গতকাল সকাল থেকেই গণমাধ্যম কর্মীসহ দলের নেতাকর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন- কখন খালেদা জিয়ার কার্যালয় থেকে বের হবেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িচালক কার্যালয়ের ভেতরে রাখা গাড়িটি স্টার্ট দেন। এরপরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তোড়জোড় শুরু হয়। কার্যালয়ের গেটে কয়েকশ’ নারী পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়। এর ঠিক পরের সারিতেই বেশ কয়েকজন ডিবি পুলিশ সদস্য অবস্থান নেন। এরপর শতাধিক সাধারণ পুলিশ ও র্যাব সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। কার্যালয়ের গেটের সামনে আনা হয় জলকামান। খালেদা জিয়ার বের হবেন- এমন খবর পেয়ে বেলা ১২টার দিকে কার্যালয়ের মূল ফটকে একটি চাইনিজ তালা ও পকেট গেটে একটি ছোট তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। লাইভ সমপ্র্রচারের প্রস্তুতি নেন টিভি চ্যানেলগুলোও। এরপর থেকেই গণমাধ্যম কর্মী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের শুরু হয় রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষা। বেলা ১টার দিকে কার্যালয়ের দক্ষিণ দিক দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেন তিনজন মহিলা দলের কর্মী। এসময় পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
বেলা পৌনে ৪টায় অপেক্ষা পালা শেষ হয়। কার্যালয়ের দোতলা থেকে কালো পতাকা হাতে দলের মহিলা নেত্রীদের নিয়ে নিচে নামেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। উপস্থিত সাংবাদিকদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি। এরপর মহিলা নেত্রীরা কালো পতাকা হাতে খালেদা জিয়ার গাড়ির চারপাশে অবস্থান নেন। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানকে নিয়ে গাড়ি উঠেন খালেদা জিয়া। গাড়িটি কয়েক গজ এগিয়ে কার্যালয়ের গেটে অবস্থান নেয়। এরপর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক পুলিশ মহাপরির্দশক আবদুল কাইয়ুম গেটের ফাঁক দিয়ে পুলিশকে তালা খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। পুলিশ তাতে সাড়া না দিলে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসও একই অনুরোধ করেন। তাতেও পুলিশ তালা না খোলায় সেখানে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন শিমুল বিশ্বাস। এরপর মহিলা নেত্রীরা সরকারের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান দেন এবং কার্যালয়ের মূল ফটক খোলার চেষ্টা করেন।
একপর্যায়ে লোহার রড দিয়ে ভেতর থেকে তালা ভাঙার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন মহিলা নেত্রীরা। এসময় জলকামান থেকে মহিলা নেত্রীদের ওপর পিপার সেপ্র ছোড়ে পুলিশ। গাড়ির দরজা খোলা থাকায় পিপার সেপ্রর গ্যাসে আক্রান্ত হন। এছাড়া পিপার সেপ্রতে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী মাহবুবুর রহমান ডিউ, চেয়ারপারসন কার্যালয়ের কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন, সাবেক এমপি সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া, নিলুফার চৌধুরী মনি, সাংবাদিকদের মধ্যে বিডিনিউজের জ্যেষ্ঠ রিপোর্টার সুমন মাহমুদ, ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার রাশেদুল হাসান, চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তারাসহ বেশ কয়েক গণমাধ্যমকর্মী আহত হন। এসময় নিউজ পেপারে আগুন ধরিয়ে পিপার সেপ্রর গ্যাস অপসারণের চেষ্টা করেন মহিলা নেত্রীরা। মিনিট পনের পরে পিপার সেপ্রর ঝাঁজ কিছুটা কম হলে ফের মূল ফটক খোলার চেষ্টা করেন মহিলা নেত্রীরা। স্লোগান দিলে পুলিশ আরেক দফা পিপার স্প্রে নিক্ষেপ করে। খালেদা জিয়া তখনও গাড়ির ভেতরে বসে ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ৪৫ মিনিট গাড়িতে বসে থাকার পর দরজা খোলে নিচে নামেন তিনি। এসময় ছোট একটি টুলের ওপর দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। এরপর প্রায় দীর্ঘ ২৫ মিনিট বক্তব্য রেখে ফের কার্যালয়ের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি।
গুলশান কার্যালয় এলাকায় যুদ্ধাবস্থা
গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কে ঢোকার সবগুলো পয়েন্টেই পুলিশের ব্যারিকেড। মোড়ে মোড়ে তল্লাশি চৌকি। ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাড়িটি হলো বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়। দলীয় কাজকর্ম সারতে শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই পুলিশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। বাড়ানো হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংখ্যা। তিন স্তরের পুলিশের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়। কার্যালয়ের সামনের রাস্তার দক্ষিণ পাশে একটি জলকামান, পুলিশ ভ্যান ও উত্তর পাশে আরেকটি জলকামান ও বেশ কয়েকটি পুলিশ ভ্যান দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়। খালেদা জিয়াকে নয়াপল্টনের সমাবেশে যাওয়া ঠেকাতে কার্যালয়ের গেটে ১১টি বালু ও ইটভর্তি ট্রাক এনে রাখা হয়। ওই এলাকায় সাধারণ মানুষ ও যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বিপুল সংখ্যক নারী পুলিশ, সাধারণ পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। গতকাল পুলিশি নিরাপত্তা বলয় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নজরদারি এড়িয়ে গুলশান এলাকায় প্রবেশ করতে পারেননি কোন নেতাকর্মী।
প্রতিটি মোড়ে মোড়েই চালানো হয় তল্লাশি। এছাড়া বারিধারার কানাডিয়ান অ্যাম্বাসির সামনের রাস্তা থেকে বনানীর পয়েন্টে চৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। এসময় গণপরিবহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে গাড়ি ফিরিয়ে দেয়া হয়। তবে সকাল ৯টার দিকে জার্মান দূতাবাসের এক কর্মকর্তা গুলশান কার্যালয়ে যেতে চাইলে পুলিশ তাকে ফিরিয়ে দেয়। এসময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। এর আগে শনিবার রাতে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাত সাড়ে ১১টার দিকে খালেদা জিয়া গুলশানের কার্যালয় থেকে নয়া পল্টনে অসুস্থ দলের যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে দেখতে যেতে চাইলে পুলিশ তার পথ আটকায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে খালেদা বাসায় যাওয়ার জন্য পুলিশকে ব্যারিকেড সরাতে বলেন। কিন্তু তা না সরানোয় কিছুক্ষণ গাড়িতে অপেক্ষা করে ফের কার্যালয়ে যান তিনি। এরপর সেখানেই তার রাত কাটে। খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে রোববার বিকালে তাকে দেখতে গুলশান কার্যালয়ের সামনে যান সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। তবে পুলিশ তাকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। কিছুক্ষণ অবস্থানের পর তিনি সেখান থেকে চলে যান। এরপর সাংবাদিক নেতা শওকত মাহমুদসহ পেশাজীবীদের একটি প্রতিনিধি দল গুলশান কার্যালয়ে যান। তবে পুলিশ তাদের ভেতরে ঢুকতে অনুমতি দেন। পরে তারা অবরুদ্ধ খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এদিকে দুপুরে মহিলা দল ও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালাায় যুবলীগের কর্মীরা। এসময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর আগে অর্ধশতাধিক মহিলা দলের নেতাকর্মী গুলশান কার্যালয়ের দক্ষিণ দিক থেকে পুলিশ বেষ্টনী ফাঁক করে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা চালায়। এসময় তাদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এদিকে সকাল থেকে দলের নেতাকর্মীদের ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। বিকাল থেকে সাংবাদিকদেরও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েক জন সাংবাদিক ভেতরে আটকা পড়েন। গুশলান এলাকায় কড়াকড়ি পাহারা বসানো হয়েছে। যান চলাচল ও সাধারণ মানুষের চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পরপর পুলিশ ও র্যাব টহল দিচ্ছে। এছাড়া পুলিশ ও র্যাবের বাইরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা গুলশান এলাকার রাস্তায় অবস্থান করছেন। ওদিকে অবরুদ্ধ অবস্থায় খালেদা জিয়া বিবিসি বাংলাকে একটি টেলিফোন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। রোববার রাত ১২টার পর থেকে একে একে ১১টি ট্রাক এনে কার্যালয়ের গেটের সামনে রাখা হয়। এক ট্রাক ড্রাইভার জানান, ট্রাকের কাগজপত্র দেখার কথা বলে আমাদের কাকলী সিগন্যাল থেকে নিয়ে এসেছে। তারা বলেছে, আমরা যেখানে নিয়ে যাই সেখানে নিয়ে যাবে। এরপর গুলশান কার্যালয়ে আনা হয়।
আটকা পড়েন শতাধিক মহিলা নেত্রী ও গণমাধ্যমকর্মী
শনিবার রাতেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন দলের বেশ কয়েকজন সিনিয়র ও মহিলা নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ূম, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, মহিলা দলের সভানেত্রী নুরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সাবেক এমপি রেহানা আখতার রানু, নিলুফার চৌধুরী মনি, রাশেদা বেগম হীরা, সৈয়দা আসিফা আশরাফি পাপিয়া, সুলতানা আহমেদ, ফরিদা ইয়াসমীন, মহিলা দল নেত্রী ফারজানা রহমান হোসনা প্রমুখ। রোববার দুপুর থেকে গুলশান কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেয়া হলে ভেতরে আটকা পড়েন বেশ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী। অবরুদ্ধ অবস্থায় তারা অমানবিক জীবন কাটাচ্ছেন তারা। ঘুম ও গোসল করতে না পেরে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তারা।
অসুস্থ খালেদার চিকিৎসায় কার্যালয়ে মেডিকেল টিম
পুলিশের ছোড়া পিপার সেপ্রতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়া ও দলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী এবং গণমাধ্যম কর্মী। তাদের চিকিৎসা দিতে গুলশান কার্যালয়ে প্রবেশ করেন তিন সদস্যের একটি মেডিকেল টিম। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. শামীমের নেতৃত্বে মেডিকেল টিমের সদস্যরা কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস সচিব মারুফ খান কামাল সোহেল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বিকালে পুলিশের ছোড়া পিপার সেপ্রতে ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এজন্য তার বক্তিগত চিকিৎসক ডা. শামীম এসেছেন। ম্যাডামকে তিনি চিকিৎসা দিচ্ছেন। ওদিকে পিপার সেপ্রতে আহত মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রী ও সাংবাদিকদের চিকিৎসা দিচ্ছেন ডা. নাসিরে নেতৃত্বে একটি মেডিকেল টিম।
অবরুদ্ধ নয়াপল্টন
৫ই জানুয়ারি ২০ দলের সমাবেশকে কেন্দ্র করে নয়াপল্টনসহ আশেপাশের এলাকা সকাল থেকেই সিল করে দেয় পুলিশ। ভোরেই নাইটিঙ্গেল মোড় ও ফকিরাপুল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ বন্ধ করে দেয় নয়াপল্টন ভিআইপি রোড। সেখানে মোতায়েন রাখা হয় জলকামান, প্রিজন ভ্যান ও সাঁজোয়া যান। নয়াপল্টন ভিআইপি রোডের প্রতিটি গলির মুখে বসানো হয় পুলিশি পাহারা। নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়কে কেন্দ্র করে বিজয়নগর থেকে পুরানা পল্টন, ফকিরাপুর থেকে শান্তিনগর বাজারের হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ করে দেয় পুলিশ। তবে সকাল থেকে নয়াপল্টনকে কেন্দ্র করে আশেপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা ভেঙে দফায় দফায় মিছিল বের করেছে বিএনপি, অঙ্গদল ও ২০ দলের নেতাকর্মীরা। পুলিশ টিয়ার শেল ছুড়ে ও গুলি চালিয়ে প্রতিটি মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয় অন্তত ২০ জন। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা কয়েকটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগসহ বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। সকাল ১০টার সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসভবনে তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ সময় মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস বাসায় ছিলেন। তার পারিবারিক সূত্র জানায়, তল্লাশিকালে মির্জা আব্বাসকে না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাসা থেকে বেশ কিছু কাগজপত্র নিয়ে গেছে। দুপুর সোয়?া ১২টার দিকে সেগুনবাগিচার কালভার্ট এলাকায় একটি মিছিল বের করে বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মীরা।
পুলিশ টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়ে মিছিলে বাধা দিলে দুইপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের গুলিতে আহত হয় অন্তত ৫ জন। এ সময় এক সার্জেন্টের মোটরসাইকেলে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা। ওদিকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে পল্টন কালভার্ট রোডে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুস সালাম আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু, ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মফিজুর রহমান আশিকের নেতৃত্বে যৌথভাবে একটি মিছিল করে মহানগর বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল। মিছিলটি কালভার্ট রোড থেকে বিজয় নগরের সড়কে আসার সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ একজনসহ ৫ জনকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে পুলিশের লাঠিচার্জে ১৮-২০ জন আহত হয়। এদিকে দুপুর ১টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ লাইনের বিপরীত দিকে ঢাকা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে বিএনপি নেতাকর্মীরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি রাজারবাগ এলাকায় আল-বারাকা হাসপাতালের সামনে পৌঁছলে পুলিশ টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও গুলি চালায়। এ সময় সাবেক কমিশনার হারুন, বিএনপি কর্মী লিটন, রাজু, রাসেলসহ ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়। মিছিল থেকে পুলিশ মোটরচালক দলের সাধারণ সম্পাদক হাজী রাব্বীসহ কয়েকজনকে আটক করে। একই সময় বেইলী রোডের হক বেকারির সামনে পরপর তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মোটরসাইকেলযোগে এসে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ওদিকে দুপুর আড়াইটার দিকে সেগুনবাগিচা হাইস্কুলের গলি এলাকায় একটি মিছিল করে বিএনপি ও ছাত্রদল। মিছিল থেকে ৮/১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। একই সময় ফকিরাপুলে মিছিল বের করে শিবির। মিছিল থেকে দু’টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি ছুড়ে পুলিশ। বিকাল তিনটার দিকে ফকিরাপুলে ছাত্রদল মিছিল করে। এ সময় তারা পুলিশের একজন এসআই’র ওপর হামলা করে। এ সময় ফকিরাপুলের হোটেল ওয়ান্সের সামনে দু’টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয় ছাত্রদলকর্মীরা। মোটরসাইকেল দু’টির একটি পুলিশের (ঢাকা মেট্রো-হ-১১-২৭৩৫) ও অন্যটি প্রেস স্টিকার লাগানো (ঢাকা মেট্রো-এ-০১-৪০৪২)।
এরপর ছাত্রদল কর্মীরা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। জবাবে টিয়ার শেল ও গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশ সেখান থেকে আবুল কাশেম, রাহাতসহ ৬ জনকে আটক করে। এরপর ফকিরাপুলের শপিংমল ও বিভিন্ন অলিতে গলিতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। বিকাল তিনটার সময় পুরানা পল্টনে বায়তুল মোকাররমের বিপরীতে আজাদ প্রোডাক্টের গলিতে দু’টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া করে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এর আগে সকালে নয়াপল্টন থেকে আটক করা হয় ৪ জনকে। পুলিশ জানায়, ওই এলাকায় কেউ যেন নাশকতা করতে না পারে সে জন্য এ অভিযান চালানো হচ্ছে। পুরো এলাকা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উল্লেখ্য, ৫ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবসে সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জমায়েতের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল। সে জমায়েতে বিএনপি চেয়ারপারসন ও জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু শনিবার রাতে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদকে গ্রেপ্তার ও কার্যালয়ের কর্মচারীদের বের করে দেয় পুলিশ। জনশূন্য বিএনপি কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনজীবীদের বিক্ষোভ, সংঘর্ষ
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় দিনভর বিক্ষোভ করেছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে আইনজীবীদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বিকালের দিকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের বাইরে থেকে আইনজীবীদের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষোপ করে। তারা আইনজীবীদের ধাওয়া করে। বেলা ১২টার দিকে কালোপতাকা হাতে মিছিল বের করেন বিরোধী সমর্থক আইনজীবীরা। তারা হাইকোর্ট মাজার দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। এতে মুস্তাফিজুর রহমান নামে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়। মিছিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আইনজীবী নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, সানাউল্লাহ মিয়া প্রমুখ অংশ নেন। পরে আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটকের পাশে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ফটকে তালা দিয়ে বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ অবস্থান নেয়। বিকাল সাড়ে চারটার দিকে প্রেস ক্লাব মোড়ে বিস্ফোরণের শব্দ হয়। এই শব্দে প্রেস ক্লাবের সামনে থাকা আওয়ামী লীগ কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের দিকে ছুটে যান। তারা ফটকের ভেতরে থাকা আইনজীবীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। আইনজীবীরাও পাল্টা ইটপাটকেল ছুড়েন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীরা প্রধান ফটক খুলে সুপ্রিম কোর্ট এলাকার ভেতরে ঢুকে আইনজীবীদের ধাওয়া করে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
নাটোর প্রতিনিধি জানান, জেলার তেবারিয়ায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই ছাত্রদল কর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া এ ঘটনায় অন্তত আরও ১০জন আহত হয়েছেন। ঘটনার প্রতিবাদে নাটোর জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। এতে নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে জামায়াত। আহতদের নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে জেলায়। ঘটনার পরপরই তেবারিয়া এলাকায় ভাঙচুর করা হয়েছে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর। এদিকে জেলার গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবদুল আজিজের নয়াবাজার এলাকায় দ্বিতল বিশিষ্ট খামার বাড়ি এবং নয়াবাজার এলাকায় দুইটি বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসাবে গণতন্ত্র মুক্ত দিবস পালন উপলক্ষে শহরে মিছিল সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সোমবার সকালে শহরের তেবারিয়া এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা দুই দলের আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও একপর্যায়ে সংঘর্ষ হয়।
এ সময় কয়েকটি মোটরসাইকেল যোগে একদল দুর্বৃত্ত এসে গুলি করে চলে যায়। এ সময় গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অনেকে। এদের মধ্যে আহত রাকিব আলী ও রায়হানকে নাটোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দুই জনকে মৃত ঘোষণা করেন। রাকিব তেবারিয়া এলাকার চান মিয়ার ছেলে। নিহত দুই জনই বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল কর্মী। ঘটনায় পর থেকে এলাকায় র্যাব, পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। আহত বাকিদের নাটোর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সোমবার সকালে শহরের আলাইপুর এলাকায় ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যা দিয়ে জেলা বিএনপি ও কানাইখালী এলাকায় গণতন্ত্র মুক্ত দিবস আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দেয়। এদিকে সকালে গুরুদাসপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল আজিজের দ্বিতলবিশিষ্ট খামারবাড়ি ও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করেছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এলাকাবাসী জানান, সোমবার সকালে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নয়াবাজার বিএনপির অফিস ভাঙচুর করে। এ সময় তারা অফিসের চেয়ারটেবিল ও অন্যান্য মালামাল রাস্তায় বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে তারা বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়ক সংলগ্ন পুকুর পাড় এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের দ্বিতল খামারবাড়ির দরজা ভেঙে ব্যাপক লুটপাট করে। বাড়ির দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে ও পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। মুহূর্তেই আগুন গোটা বাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে বিকালে আওয়ামী লীগের এক সমাবেশ থেকে নিহত রাকিবকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করা হয়েছে। তবে তার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন তিনি ছাত্রদল করতেন।
স্টাফ রিপোর্টার রাজশাহী থেকে জানান, জেলার পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে পুলিশের গুলিতে বিএনপির এক কর্মী নিহতসহ অন্তত ৬ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিহত বিএনপি কর্মীর নাম মজের আলী (৫০)। তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে। এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রাজশাহীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে জেলা বিএনপি। এর আগে মহানগর বিএনপির সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে সকাল ১০টার দিকে নগরীর গ্রেটার রোড় এলাকায় মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ অন্তত ৫ বিএনপি নেতাকর্মী আহত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বিকাল ৩টার দিকে পুঠিয়া উপজেলা বিএনপি নেতাকর্মীরা বানেশ্বর বাজারে মিছিল বের করেন। এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি হাতে পাল্টা মিছিল বের করলে সংর্ঘষ বেধে যায়। উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা পেট্রোল পাম্প এলাকায় ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ট্রাফিক মোড় এবং তাদের মাঝে পুলিশ অবস্থান নেয়। পরে বিকাল ৪টার দিকে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে এলাপাতাড়িভাবে শতাধিক রাউন্ড শটগানের গুলি, রাবার বুলেট, টেয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মজের আলী ঘটনাস্থলেই মারা যায়।
আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন নেতাকর্মী। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে বিএনপি। হরতালে বাধা দিলে বা গুলি করলে লাগাতার কর্মসূচি দেয়ারও হুমকি দেন নেতাকর্মী। এর আগে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে রাজশাহী নগরীতে পৃথকভাবে সমাবেশ করেছে বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল সকাল ১০টা থেকে নগরীর আলুপট্টি মোড়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় মহানগর আওয়ামী। আগে সেখান থেকে শোভাযাত্রা বের করার ঘোষণা দিলেও সেই কর্মসূচি থেকে সরে আসে। পরে ১১টার দিকে একটি মিছিল সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে এসে ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র রক্ষা দিবস আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মহানগর সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রায় একই সময়ে নগরীর ভুবনমোহন পার্ক এলাকায় গণতন্ত্র হত্যা দিবসের বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মহানগর বিএনপি। এছাড়া সকাল সকাল ১০টায় জেলা বিএনপি রাজশাহী কলেজে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। অন্যদিকে সমাবেশস্থলে যাওয়ার পথে সকাল ১০টার দিকে নগরীর গ্রেটারমোড় এলাকায় বিএনপির মিছিলে বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশের ছোড়া শর্টগানের গুলি ও টিয়ারশেলের আঘাতে অন্তত ৫/৭ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন। এছাড়া গতকাল সকাল ৭টার দিকে নগরীর উপশহর এলাকার অবস্থিত আওয়ামী লীগের উত্তর শাখা কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে ওই অফিসের ভেতরে থাকা দুইটি মোটরসাইকেল ও চেয়ারটেবিল পুড়ে গেছে। পরে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে আটক করে পুলিশ। সকাল থেকে নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে।
চাঁপাই নবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সোমবার বিকালে চাঁপাই নবাবগঞ্জের কানসাটে পুলিশের গুলিতে জমশেদ (৪৮) নামে এক বিএনপি কর্মী মারা গেছেন। তিনি শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের শিবনারায়ণপুর ইউনিয়নের মৃত মোন্তাজ আলীর ছেলে। জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি অধ্যাপক শাহজাহান মিয়া জমশেদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মৃত জমশেদ তাদের কর্মী। এ ঘটনার প্রতিবাদে জেলা ২০ দলীয় জোট আজ জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে। সূত্র জানায়, বিকাল ৩টার দিকে ২০দলীয় জোট মিছিল বের করে। কানসাট গোপালনগর মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। পুলিশ শটগানের গুলি ছুড়ে। এতে এরফান ও জমশেদসহ অন্তত ৩৫জন আহত হন। আহতদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ জমশেদকে রাজশাহী নেয়ার পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে মারা যায়। শিবগঞ্জ থানার ওসি ময়নুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিবগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকা, কানসাট কলেজ ও কানসাট এলাকায় ১৪৪ধারা জারি করা হয়। কিন্তু জামায়াত-বিএনপি কর্মীরা ১৪৪ধারা উপেক্ষা করে বিকাল ৩টার দিকে মিছিল বের করে এবং কানসাট গোপালনগর মোড়ে পুলিশের ওপর বোমা হামলা চালায়।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জে পৃথকভাবে বিএনপি ও ছাত্রদলের মিছিলে গুলি চালিয়েছে পুলিশ। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড গুলি ছুড়লে কমপক্ষে ১০ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় আরও আহত হয়েছেন ১০জন। সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সোয়া ১১ পর্যন্ত শহরের মিশনপাড়া ও বন্দরে এ ঘটনা ঘটে। সিলেট জেলা বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে আহত হয়েছেন ১০ জন। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ২০টি গাড়ি। এর মধ্যে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অন্তত ৫০ জনকে আটক করেছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সিলেটের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ। জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায় জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, পুলিশ, ব্যবসায়ী, পথচারীসহ অন্তত প্রায় ৩০জন আহত হয়েছেন। ফেঞ্চুগঞ্জে জামায়াত ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের এক এসআই ও দুই সোর্সসহ ৫ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ জামায়াতে ইসলামীর ৩জন ও অপর দুই জন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করেছে। লক্ষ্মীপুরে সকালে বিএনপির মিছিলে পুলিশ ধাওয়া করে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন ভূইয়া, বিএনপি কর্মী আবদুল কাদেরসহ তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এছাড়া ভোর রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দুই শিবিরকর্মীসহ ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া রায়পুর উপজেলার বাস টার্মিনাল এলাকায় বিকালে বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও পুলিশে ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় উভয়ের অন্তত ৩০জন আহত হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের বিভিন্ন থানায় যুবদল ও জামায়াতে ১৩ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রীনগরে যুবদলের ৪ জন, সিরজদিখানে জামায়াতের ১ জনসহ ৫ ও মুন্সীগঞ্জ সদরে ৪ জন রয়েছে। রোববার রাতে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। রোববার রাতে মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ৫৬ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বিশেষ অভিযানে মাগুরার ৪টি থানায় বিএনপি এবং জামায়াতের ১১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ রাতভর জেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ সংঠনের নেতাদের বাসা-বাড়িতে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েছে বলে নেতাদের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিনাজপুরে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ১৩ নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার গভীর রাত থেকে গতকাল ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এছাড়া জেলার বোচাগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছে আরও ১৫ নেতাকর্মীকে। বিএনপি ও জামায়াতের অফিস ভাঙচুর এবং পৌর বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে প্রতিপক্ষরা। মৌলভীবাজার শহরের চৌমুহনী এলাকা থেকে বিএনপি মিছিল বের করলে নেতা-কর্মীদের বাগবিতণ্ডা হয়।
এ সময় পুলিশ লাঠিচার্জ ও ফাঁকা গুলি করেছে। এতে ৪ পুলিশসহ অন্তত ৫ থেকে ৬ জন মিছিলকারী আহত হয়েছেন। মিছিল থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়েছে। দুপুরে জেলার বড়লেখা উপজেলা সদরে বিএনপি অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পৌর মেয়রসহ কমপক্ষে বিএনপির ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। কমলগঞ্জে পুলিশ বাবুল মিয়া ও মাসুম মিয়া নামে বিএনপি-জামায়াতের দুই কর্মী আটক করে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। যশোরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টি এস আইয়ুবসহ বিএনপি জামাতের ৮১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। শহরের ঘোপ এলাকা থেকে সোমবার সকালে জেলার বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী টি এস আইয়ুবকে আটক করে ডিবি পুলিশ। অপরদিকে গতকাল দিনভর জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ বিএনপি জামায়াতের ৮১ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। সুনামগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জামায়াত-পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৬ জন আহত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর করেছে। শহরের পুরাতন বাসস্টেশন থেকে ছাত্রদল মিছিল নিয়ে ট্রাফিক পয়েন্টের দিকে আসলে যুবলীগ-ছাত্রলীগের সাথে সংঘর্ষ বাধে। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে উভয়পক্ষের নেতাকর্মীরা।
ঝিনাইদহ শহর ও শৈলকুপায় সাকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপি-আওয়ামী লীগ এবং পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় বিএনপি কর্মীরা ঝিনাইদহ শহরের এইচএসএস সড়কে জনতা ব্যাংকের একটি পাজেরো জিপ গাড়ি ভাঙচুর করে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ৩৮ বিএনপি জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক করেছে। সিরাজগঞ্জ শহরে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্র ও যুবদলের ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। এ ঘটনার পর বেলা ১২টার দিকে শহরের হোসেনপুর ও ধানবান্ধি মহল্লায় অভিযান শুরু করে। হবিগঞ্জে ছাত্রদল ও পুলিশের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ মুশফিক আহমেদসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষের সময় পুলিশের ব্যবহৃত হিউম্যান হলার, ইজিবাইকসহ ১০-১৫টি যানবাহন ও জেলা শিক্ষা অফিস ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। পুলিশ ৯ রাউন্ড শটগানের বুলেট ও ৩ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া ৭ নেতার্মীকে আটক করা হয়েছে। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে বিএনপির কালোপতাকা মিছিলকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। পুলিশ শটগান থেকে অন্তত ১৯ রাউন্ড গুলি ছোড়ে ও ১ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে। এতে ১ জন শিশুসহ ৪ জন গুলিবিদ্ধ ও অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া চাঁদপুরের বিভিন্ন এরাকা থেকে ২১ বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ফেনীতে ২০ দলের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গতকাল দিনভর ছাত্রদল শহরের বিভিন্ন স্থানে ঝটিকা মিছিল করে ককটেল বিস্ফোরণ করে। এ সময় যাত্রীবাহী বাসসহ অন্তত ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে ছাত্রদল নেতাসহ অন্তত ৭ জনকে আটক করেছে। গাজীপুরে কালোপতাকা মিছিল বের করা হলে গুলি ছোড়ে পুলিশ। এ সময় মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়া হয়।
দুপরে ছাত্রদল নগর ভবনের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করলে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে মুজাহিদুল ইসলাম নামে একজনকে আটক করেছে। এর আগে রাতে গাজীপুরের বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে মোট ৫৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিএনপির দাবি এদের বেশীর ভাগই বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী। চট্টগ্রামে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বিদ্ধ হয়েছেন দু’জন। এছাড়া লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন আরও ২০ জন। বিক্ষুব্ধ বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে নগরীর বাইরে অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৩৯ কর্মী-সমর্থককে আটক করা হয়েছে। সীতাকুণ্ড উপজেলায় রোববার রাত ও গতকাল বিভিন্ন মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ও জামায়াত-বিএনপির কর্মীসহ ২১ জনকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার রাতে খুলনায় অভিযান চালিয়ে নগরী থেকে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ৩৫ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কুষ্টিয়ার বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ২৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। রোববার রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাদের আটক করে। সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে বিএনপি ও জামাত-শিবিরসহ ৫০ জন আটক করেছে। রোববার রাত থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। মেহেরপুরে ১০ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে গাংনী থানা উপজেলা থেকে ৬ জন ও মুজিবনগর থেকে ৪ জন। রোববার রাতে বাগেরহাট জেলার ৯ উপজেলা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ২৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
আটককৃতদের মধ্যে কচুয়া উপজেলার মঘিয়া ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি ফকির সাখাওয়াত হোসেন, কচুয়া উপজেলা জামায়াত নেতা জিয়া ফকির, চিতলমারীর ৩ ছাত্রদল নেতা সুমন শেখ, রুপম হোসেন ও রিফাত খান প্রমুখ। খাগড়াছড়িতে বিএনপি, আওয়ামী লীগ ও পুলিশের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছে। প্রতিবাদে আজ সকাল-সন্ধ্যা সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি। নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে মিছিলটি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে উঠতে চাইলে বাধা দেয় পুলিশ। পরে পুলিশি বাধার মুখে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে নেতাকর্মীরা। এদিকে সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিএনপির ১২ নেতা-কর্মীকে আটক করে পুলিশ। সাভারে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে সমাবেশ চলাকালীন এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পাবনায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে বিএনপির অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিদ্দিকুর রহমান জানান, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ১২ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।
নোয়াখালীতে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিয়েছে। কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ৮ বিএনপি কর্মীকে আটক করেছে। পুলিশের গুলিতে ২ বিএনপি কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে ছাত্রদলের সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। পুলিশ বিএনপির ১২ জনকে আটক করেছে। এছাড়া জেলার কসবা উপজেলায় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। কক্সবাজারের ৭ উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ২০ দলীয় জোটের ১৪ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার রাত ১২টা থেকে গতকাল সকাল ৯টা পর্যন্ত কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।
বরগুনায় বিএনপি সকালে দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ তাতে বাধা দেয়। কাটপট্টি এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টায় ছাত্রদলের একটি মিছিল দলীয় কার্যালয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করতে গেলে পুলিশের সাথে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। ভোলায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শহরের দরগাহ রোড এলাকায় বিএনপি মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘন্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আহত হয়েছেন পুলিশের ৩ সদস্যসহ অন্তত ২২ জন। এছাড়া শহরের বাংলা স্কুল মোড়ে ৩টি অটোরিকশা এবং ৫টি দোকান ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পটুয়াখালীতে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপি কালো পতাকা মিছিল বের করলে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। পুলিশ মিছিলে লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে ৭ নেতাকমী আহত হয়। রাঙামাটিতে সকাল সাড়ে ১০ টায় বিএনপির মিছিল বের করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের কার্যালয় চত্বরেই আটকে রাখে। অন্যদিকে শহরের কলেজ গেট এলাকায় বিএনপি মিছিলের চেষ্টা করলে পুলিশ ধাওয়া দেয়।