স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী : টঙ্গীর কহর দরিয়া (তুরাগ) নদীর তীরে আসছে শুক্রবার অনূষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রস্তুতি প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে দাবী করেছেন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটি। দেশের বিভিন্ন জেলা ও থা
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ব ইজতেমার প্রধান মুরব্বী জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছরই মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। স্থান সংকুলানের কারনে এবারও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্টিত হবে এবং ইতিমধ্যে প্রথম পর্বে অংশ গ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশি¬ষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে গতবারের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যাতে করে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ টি ১১ কেভি ফিডার লাইন ও ১৯ টি বিতরন কেন্দ্র করা হয়েছে। হঠাৎ কোন কারনে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়লে সাথে সাথে যাতে বদল করা যায় তার জন্য স্ব স্ব স্থানে ৫ টি ট্রলি ট্রান্সফরমার রাখা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসাবে ৪ টি জেনারেটর সব সময় প্রস্তুত থাকবে। ডেসকোর প্রায় ২৫০ জন কর্মী পালাক্রমে কর্মরত থাকবে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় রুপান্তর করা হয়েছে। প্রতিটি অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পে দুইজন করে চিকিৎসক, ২ জন নার্স থাকবে। এছাড়ার এ্যাজমা, ট্রমা, হৃদরোগ, বার্ণ, চক্ষু ও ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা দেবেন। প্রতিটি বিভাগে একটি করে এ্যাম্বুলেন্স থাকবে। গাজীপুর স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ের ডিভিশন কর্মকর্তা আমাদের এ প্রতিনিধিকে জানান, এবছর ইজতেমার দুই পর্বেই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকবে। এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ইজতেমার আগের দিন থেকে ৪ টি আন্ত নগর ও ৭ টি লোকাল ট্রেন দেওয়া হবে। তারা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আনা-নেওয়া করবে। ইজতেমার দিন থেকে দুরপাল্লার আন্ত:নগর ট্রেনগুলিও টঙ্গীতে বিরতি করবে। ইজতেমার মুসল্ল¬¬ীদের জন্য ট্রেনে ওজু করা, নামাজ পড়াসহ সকল ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অপরদিকে বিআরটিসির প্রায় ৩০০ টি বাস দেওয়া হয়েছে, যেগুলিতে শুধু মুসল্ল¬¬ীরা যাতায়াত করতে পারবে। বাসগুলির সামনে বিশেষ স্টিকার লাগনো থাকবে। মোট ৭ টি স্থান থেকে এবাস গুলো চলাচল করবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান জানান, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তার ধুলোবালি রোধ করার জন্য প্রতিদিন পানি ছিটানো হবে। মশা নিধনের জন্য মশা নাশক ছিটানো হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বেশকিছু এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। সেখানে সার্বক্ষনিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা থাকবেন। ময়দানে প্রতি খিত্তায় ফায়ারম্যান থাকবে । এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ৩ টি পানিবাহী গাড়ী, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, ১ টি লাইটিং ইউনিট এবং ৩ টি এ্যাম্বুল্ন্সে থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের ২০ জন কর্মকর্তাসহ ২৫০ কর্মী সার্বক্ষনিক উপস্থিত থাকবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ইজতেমা ময়দানে ১১ টি গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। যার থেকে দৈনিক প্রায় ৩ কোটি লিটার পানি মুসল্ল¬¬ীদের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বিপুল সংখ্যক টয়লেট, গোসল ও ওজুখানা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াসা কর্তৃপক্ষও তাদের গাড়ীর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পানি সরবরাহ করবে।
জেলায় নবাগত পুলিশ সুপার জানান, ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকার আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আজ থেকে টঙ্গীতে আসতে শুরু করবেন। ইতিমধ্যে অনেকেই চলে এসেছেন। তারা টঙ্গী থানায় রিপোর্ট পেশ করে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিবেন। প্রথম পর্বের ইজতেমার জন্য পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ৪০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হবে। এছাড়া বাইনোকুলার,মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্ল¬াশী করা হবে। ইজতেমা ময়দানের সব প্রবেশপথে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব ও পুলিশের ৮টি পর্যবেক্ষন টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক জানান, ইজতেমা শুরুর আগের দিন থেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়াও পচাবাসী খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিয়ন্ত্রনসহ তাদের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিতে প্রায় ৩০ টি ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করবে।
টঙ্গী মডেল থানার অফির্সাস ইনর্চাজ মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, টঙ্গীর আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই রোধসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ এবং এলাকার বিভিন্ন অপরাধ মূলক কার্যক্রম বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে থানা থেকে অভিযান চালিয়ে একাধিক ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীদেও গ্রেফতার কওে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা চলাকালে জাল টাকার ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠে, আমরা সে বিষয়েও বিশেষ নজর রাখছি। গতকাল একজন জাল টাকার ব্যবসায়ীকে জাল টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরদিকে ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় টঙ্গী-কালীগঞ্জ রোড় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু-পাশে ফুটপাতে বসা হকার উচ্ছেদ অভিযান প্রতিদিন পরিচালনা করা হচ্ছে যাতে সড়ক-মহাসড়কে কোন প্রকার যানজটের সৃষ্টি না হয়।
অপরদিকে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট আর আগত ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকার এক শ্রেনীর পাইকারী মজুদদার ব্যবসায়ীরা দ্বি-গুন অর্থ উর্পাজনের প্রত্যাশায় কাঁচা তরী-তরকারীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যদ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করে বাজারজাত করছে। বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বীরা এসব কালো বাজারী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের নিয়ন্ত্রনে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে মন্নু টেক্সটাইলস মিলস, অলিম্পিয়া টেক্সটাইলস মিলস, কামারপাড়া মাঠসহ টঙ্গী কামারপাড়া রোডের দুপাশে গড়ে উঠা বাজার গুলোর ব্যবসায়ীরা জানান, জায়গার মালিক পক্ষ বিশেষ করে যারা লিজ নিয়েছেন তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি এক বর্গফুট জায়গার ভাড়া নিবেন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল নিচ্ছেন প্রতি বাল্পে ২ শত থেকে ৪ শত টাকা, পানির বিল নিবেন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। যা ব্যবসায়ীদের জন্য জুলুম হয়ে দাড়ায়। এছাড়াও পুলিশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চিচকে চাঁদাবাজদের টাকা দিতে হয় প্রতিনিয়ত অথচ এবার বাজার গুলোতে বেচা-কেনা কি হবে বলা যাচ্ছে না। এভাবে চললে এবার আর ইজতেমায় ব্যবসা করা যাবে না।
অন্যদিকে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা ইজতেমা ময়দানের আশ-পাশের এলাকা গুলোতে জুমার নামাজে বা আখেরী মোনাজাতকে উপলক্ষ্য করে দেদারসে প্রতি বদনা ওজু’র পানি ৫/১০ টাকা, গোসলের পানি ১৫/২৫ টাকায় বিক্রি করে থাকে। অথচ প্রতিবছরই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শত শত সদস্য প্রকাশ্যে এগুলো দেখেও কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। জুমার নামাজ এবং আখেরী মোনাজাতের পূর্ব মূহুর্ত থেকে নামাজের শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী বাজার, বাটা গেইট, আনারকলি, ষ্টেশন রোড, মন্নু গেইট, মিলবাজার, অলিম্পিয়া গেইট, নতুনবাজার, টঙ্গী রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় একাধিক টহলরত পুলিশ সদস্যকে রাস্তার পাশে ফুটপাতের ছোটখাটো দোকান মালিকসহ হকারদের কাছ থেকে চা খাওয়ার কথা বলে ২০/১০০ টাকা বখরা আদায় করতে দেখা যায় অনেকটা প্রকাশ্যেই।
আরো জানা যায়, একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন হারবাল, ইউনানী ও কবিরাজী দাওয়াখানার মালিকরা বিভিন্ন চমকদার বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ বালাই ভালো করার দোহাই দিয়ে ইজতেমায় আগত দেশী বিদেশী মুসুল্লিদের সরলতার সুযোগে প্রতারনা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে টঙ্গীর হোন্ডা রোড, মাজার বস্তি, নিউ মন্নু টেক্্রটাইল মিলস মাঠ, নিউ অলিম্পিয়া টেক্্রটাইলস মিলস মাঠ, কামার পাড়া মাঠ এবং টঙ্গী কামারপাড়া রোডে দোকান বসিয়ে প্রতিবছরের মতো প্রতারণার অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে। এগুলো বন্ধ করতেও দাবী জানান উজতেমা পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
একটি বিশেষ সুত্র জানায়, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ১০/১৫ জন নামধারী নেতা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আব্দুল্লাহপুর থেকে মিলগেইট হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু-পাশ, টঙ্গীর ষ্টেশন রোড থেকে কামারপাড়া ব্রিজের দু’পাশ এবং ইজতেমা ময়দানের ভেতরে ফুটপাতের দোকানপাটসহ বড় বড় দোকানপাট বসিয়ে নীরব চাঁদা বাজী চালিয়ে থাকে। এদের মধ্যে ১ টি গ্রুপ আব্দুল্লাহপুর থেকে বাটা গেইট এবং হোন্ডা রোডসহ মাজার বস্তি এলাকা, ১ টি গ্রুপ বাটা গেইট আনারকলি সিনেমা হলের সামনে থেকে মিলগেইট এবং অপর গ্রুপটি মন্নু গেইট থেকে কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় রাস্তার দু’পাশে দোকান দোকানপাট বসিয়ে দোকান প্রতি ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ এবং প্রতিদিন ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা করে আদায় করে থাকে বলে একাধিক দোকান মালিকরা জানিয়েছেন। এছাড়াও ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেকটা ফিল্মী ষ্টাইলে চাঁদা তোলা হয়। এসব ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের হাত থেকে পরিত্রাণ চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে দাবী জানিয়েছেন।
এছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারও টঙ্গী থানা প্রেস ক্লাব এর সভাপতি ইঞ্জি এম এম হেলাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ভ’ইয়া জানান, প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৯ জানুয়ারী থেকে দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাতের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আসা অসুস্থ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে বিনা মূল্যে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সরবরাহ করবে। এছাড়াও বিশ্ব খ্যাত হামদর্দ, ইবনে সিনা, বেক্সিমকো, স্কয়ার কোম্পানী কর্তৃপক্ষ বিনা মূল্যে ঔষধ সরবরাহসহ টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম এ লতিফ এবং প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন বুলবুল জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উক্ত সমিতির মাধ্যমে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৩৮ নং ষ্টল থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে ২৪ ঘন্টা বিভিন্ন রোগের ঔষধ বিনা মূল্যে বিতরন করা হবে।
না এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা দলে দলে গতকাল থেকেই ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদের দেশী বিদেশী চিল্লাধারী জামাত কর্মীরা বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ ও আশপাশের জেলা এলাকার মসজিদ গুলোতে অবস্থান করছে। তারা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ইজতেমাস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করবেন। এবার প্রথম পর্বে ৩০ জেলার মুসলি¬রা ইজতেমা ময়দানে জেলা ভিত্তিক খিত্তায় অবস্থান করবেন। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এবং হরতাল এবং একটি রাজনৈতিক দল কর্তৃক অনিদিষ্টকালের জন্য ডাকা ধর্মঘটের কারণে দুর-দুরান্ত থেকে মুসল্লিদের বিশ্ব ইজতেমায় আসতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে। মুসল্লিদের কথা বিবেচনা করে ইজতেমা আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ ইজতেমা চলাকালে এধরনের কর্মসুচী না দিতে এবং বর্তমান চলমান পরিস্থিতি বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি জোর আহবান জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ব ইজতেমার প্রধান মুরব্বী জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রায় ৯৫ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতি বছরই মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। স্থান সংকুলানের কারনে এবারও দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্টিত হবে এবং ইতিমধ্যে প্রথম পর্বে অংশ গ্রহণকারী ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা ময়দানে স্ব-স্ব খিত্তায় এসে অবস্থান নিচ্ছেন। ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশি¬ষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলোও তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ইজতেমা এলাকায় সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ সরবরাহের সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ। উত্তরা, টঙ্গী সুপার গ্রিড ও টঙ্গী নিউ গ্রিডকে গতবারের মতোই মোট ১৩২ কেভি সোর্স হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে। যাতে করে একটি গ্রিড অকেজো হলেও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘিœত না হয়। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সকল প্রকার ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৫ টি ১১ কেভি ফিডার লাইন ও ১৯ টি বিতরন কেন্দ্র করা হয়েছে। হঠাৎ কোন কারনে ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে পড়লে সাথে সাথে যাতে বদল করা যায় তার জন্য স্ব স্ব স্থানে ৫ টি ট্রলি ট্রান্সফরমার রাখা হবে। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থা হিসাবে ৪ টি জেনারেটর সব সময় প্রস্তুত থাকবে। ডেসকোর প্রায় ২৫০ জন কর্মী পালাক্রমে কর্মরত থাকবে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় রুপান্তর করা হয়েছে। প্রতিটি অস্থায়ী চিকিৎসা ক্যাম্পে দুইজন করে চিকিৎসক, ২ জন নার্স থাকবে। এছাড়ার এ্যাজমা, ট্রমা, হৃদরোগ, বার্ণ, চক্ষু ও ওআরটি কর্নারসহ বিভিন্ন বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা দেবেন। প্রতিটি বিভাগে একটি করে এ্যাম্বুলেন্স থাকবে। গাজীপুর স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে রেলওয়ের ডিভিশন কর্মকর্তা আমাদের এ প্রতিনিধিকে জানান, এবছর ইজতেমার দুই পর্বেই বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা থাকবে। এর জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ইজতেমার আগের দিন থেকে ৪ টি আন্ত নগর ও ৭ টি লোকাল ট্রেন দেওয়া হবে। তারা প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আনা-নেওয়া করবে। ইজতেমার দিন থেকে দুরপাল্লার আন্ত:নগর ট্রেনগুলিও টঙ্গীতে বিরতি করবে। ইজতেমার মুসল্ল¬¬ীদের জন্য ট্রেনে ওজু করা, নামাজ পড়াসহ সকল ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
অপরদিকে বিআরটিসির প্রায় ৩০০ টি বাস দেওয়া হয়েছে, যেগুলিতে শুধু মুসল্ল¬¬ীরা যাতায়াত করতে পারবে। বাসগুলির সামনে বিশেষ স্টিকার লাগনো থাকবে। মোট ৭ টি স্থান থেকে এবাস গুলো চলাচল করবে।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান জানান, সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে রাস্তার ধুলোবালি রোধ করার জন্য প্রতিদিন পানি ছিটানো হবে। মশা নিধনের জন্য মশা নাশক ছিটানো হবে। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বেশকিছু এ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ জানান, ইজতেমাস্থলে তাদের একটি কন্ট্রোল রুম থাকবে। সেখানে সার্বক্ষনিক কর্মকর্তাসহ ফায়ারম্যানরা থাকবেন। ময়দানে প্রতি খিত্তায় ফায়ারম্যান থাকবে । এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ৩ টি পানিবাহী গাড়ী, ৩ সদস্যের ডুবুরি ইউনিট, ১ টি লাইটিং ইউনিট এবং ৩ টি এ্যাম্বুল্ন্সে থাকবে। ফায়ার সার্ভিসের ২০ জন কর্মকর্তাসহ ২৫০ কর্মী সার্বক্ষনিক উপস্থিত থাকবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ইজতেমা ময়দানে ১১ টি গভীর নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। যার থেকে দৈনিক প্রায় ৩ কোটি লিটার পানি মুসল্ল¬¬ীদের মধ্যে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। বিপুল সংখ্যক টয়লেট, গোসল ও ওজুখানা তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াসা কর্তৃপক্ষও তাদের গাড়ীর মাধ্যমে বিভিন্ন স্থানে পানি সরবরাহ করবে।
জেলায় নবাগত পুলিশ সুপার জানান, ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকার আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনের জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা আজ থেকে টঙ্গীতে আসতে শুরু করবেন। ইতিমধ্যে অনেকেই চলে এসেছেন। তারা টঙ্গী থানায় রিপোর্ট পেশ করে নিজ নিজ দায়িত্ব বুঝে নিবেন। প্রথম পর্বের ইজতেমার জন্য পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। ৪০টি সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা মনিটরিং করা হবে। এছাড়া বাইনোকুলার,মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্ল¬াশী করা হবে। ইজতেমা ময়দানের সব প্রবেশপথে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাব ও পুলিশের ৮টি পর্যবেক্ষন টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক জানান, ইজতেমা শুরুর আগের দিন থেকে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়াও পচাবাসী খাবার সরবরাহসহ বিভিন্ন অপরাধীদের নিয়ন্ত্রনসহ তাদের তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিতে প্রায় ৩০ টি ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করবে।
টঙ্গী মডেল থানার অফির্সাস ইনর্চাজ মোঃ ইসমাইল হোসেন জানান, টঙ্গীর আইন শৃংখলা পরিস্থিতি বিশেষ করে চুরি, ছিনতাই রোধসহ মাদক ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ এবং এলাকার বিভিন্ন অপরাধ মূলক কার্যক্রম বন্ধে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে থানা থেকে অভিযান চালিয়ে একাধিক ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধীদেও গ্রেফতার কওে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও ইজতেমা চলাকালে জাল টাকার ব্যবসায়ীরা তৎপর হয়ে উঠে, আমরা সে বিষয়েও বিশেষ নজর রাখছি। গতকাল একজন জাল টাকার ব্যবসায়ীকে জাল টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপরদিকে ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় টঙ্গী-কালীগঞ্জ রোড় ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু-পাশে ফুটপাতে বসা হকার উচ্ছেদ অভিযান প্রতিদিন পরিচালনা করা হচ্ছে যাতে সড়ক-মহাসড়কে কোন প্রকার যানজটের সৃষ্টি না হয়।
অপরদিকে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট আর আগত ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গীসহ বিভিন্ন এলাকার এক শ্রেনীর পাইকারী মজুদদার ব্যবসায়ীরা দ্বি-গুন অর্থ উর্পাজনের প্রত্যাশায় কাঁচা তরী-তরকারীসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যদ্রব্য সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি করে বাজারজাত করছে। বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির মুরব্বীরা এসব কালো বাজারী ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে তাদের নিয়ন্ত্রনে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এদিকে মন্নু টেক্সটাইলস মিলস, অলিম্পিয়া টেক্সটাইলস মিলস, কামারপাড়া মাঠসহ টঙ্গী কামারপাড়া রোডের দুপাশে গড়ে উঠা বাজার গুলোর ব্যবসায়ীরা জানান, জায়গার মালিক পক্ষ বিশেষ করে যারা লিজ নিয়েছেন তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি এক বর্গফুট জায়গার ভাড়া নিবেন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল নিচ্ছেন প্রতি বাল্পে ২ শত থেকে ৪ শত টাকা, পানির বিল নিবেন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। যা ব্যবসায়ীদের জন্য জুলুম হয়ে দাড়ায়। এছাড়াও পুলিশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চিচকে চাঁদাবাজদের টাকা দিতে হয় প্রতিনিয়ত অথচ এবার বাজার গুলোতে বেচা-কেনা কি হবে বলা যাচ্ছে না। এভাবে চললে এবার আর ইজতেমায় ব্যবসা করা যাবে না।
অন্যদিকে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা ইজতেমা ময়দানের আশ-পাশের এলাকা গুলোতে জুমার নামাজে বা আখেরী মোনাজাতকে উপলক্ষ্য করে দেদারসে প্রতি বদনা ওজু’র পানি ৫/১০ টাকা, গোসলের পানি ১৫/২৫ টাকায় বিক্রি করে থাকে। অথচ প্রতিবছরই বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার শত শত সদস্য প্রকাশ্যে এগুলো দেখেও কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। জুমার নামাজ এবং আখেরী মোনাজাতের পূর্ব মূহুর্ত থেকে নামাজের শেষ পর্যন্ত আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী বাজার, বাটা গেইট, আনারকলি, ষ্টেশন রোড, মন্নু গেইট, মিলবাজার, অলিম্পিয়া গেইট, নতুনবাজার, টঙ্গী রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় একাধিক টহলরত পুলিশ সদস্যকে রাস্তার পাশে ফুটপাতের ছোটখাটো দোকান মালিকসহ হকারদের কাছ থেকে চা খাওয়ার কথা বলে ২০/১০০ টাকা বখরা আদায় করতে দেখা যায় অনেকটা প্রকাশ্যেই।
আরো জানা যায়, একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন হারবাল, ইউনানী ও কবিরাজী দাওয়াখানার মালিকরা বিভিন্ন চমকদার বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ বালাই ভালো করার দোহাই দিয়ে ইজতেমায় আগত দেশী বিদেশী মুসুল্লিদের সরলতার সুযোগে প্রতারনা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতে টঙ্গীর হোন্ডা রোড, মাজার বস্তি, নিউ মন্নু টেক্্রটাইল মিলস মাঠ, নিউ অলিম্পিয়া টেক্্রটাইলস মিলস মাঠ, কামার পাড়া মাঠ এবং টঙ্গী কামারপাড়া রোডে দোকান বসিয়ে প্রতিবছরের মতো প্রতারণার অপচেষ্টা চালিয়ে থাকে। এগুলো বন্ধ করতেও দাবী জানান উজতেমা পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ।
একটি বিশেষ সুত্র জানায়, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙ্গিয়ে ১০/১৫ জন নামধারী নেতা কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আব্দুল্লাহপুর থেকে মিলগেইট হয়ে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের দু-পাশ, টঙ্গীর ষ্টেশন রোড থেকে কামারপাড়া ব্রিজের দু’পাশ এবং ইজতেমা ময়দানের ভেতরে ফুটপাতের দোকানপাটসহ বড় বড় দোকানপাট বসিয়ে নীরব চাঁদা বাজী চালিয়ে থাকে। এদের মধ্যে ১ টি গ্রুপ আব্দুল্লাহপুর থেকে বাটা গেইট এবং হোন্ডা রোডসহ মাজার বস্তি এলাকা, ১ টি গ্রুপ বাটা গেইট আনারকলি সিনেমা হলের সামনে থেকে মিলগেইট এবং অপর গ্রুপটি মন্নু গেইট থেকে কামারপাড়া ব্রিজ এলাকায় রাস্তার দু’পাশে দোকান দোকানপাট বসিয়ে দোকান প্রতি ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত নগদ এবং প্রতিদিন ৫শ থেকে ২ হাজার টাকা করে আদায় করে থাকে বলে একাধিক দোকান মালিকরা জানিয়েছেন। এছাড়াও ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেকটা ফিল্মী ষ্টাইলে চাঁদা তোলা হয়। এসব ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজদের হাত থেকে পরিত্রাণ চেয়ে সরকারের সংশ্লিষ্টদের প্রতি বিশেষ নজর রাখতে দাবী জানিয়েছেন।
এছাড়াও প্রতিবারের মতো এবারও টঙ্গী থানা প্রেস ক্লাব এর সভাপতি ইঞ্জি এম এম হেলাল উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী ভ’ইয়া জানান, প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৯ জানুয়ারী থেকে দ্বিতীয় পর্বের আখেরী মোনাজাতের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আসা অসুস্থ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মাঝে বিনা মূল্যে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সরবরাহ করবে। এছাড়াও বিশ্ব খ্যাত হামদর্দ, ইবনে সিনা, বেক্সিমকো, স্কয়ার কোম্পানী কর্তৃপক্ষ বিনা মূল্যে ঔষধ সরবরাহসহ টঙ্গী ঔষধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম এ লতিফ এবং প্রকাশনা সম্পাদক মোঃ নাসির উদ্দিন বুলবুল জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উক্ত সমিতির মাধ্যমে ইজতেমায় আসা মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে ৩৮ নং ষ্টল থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে ২৪ ঘন্টা বিভিন্ন রোগের ঔষধ বিনা মূল্যে বিতরন করা হবে।
না এলাকা থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা দলে দলে গতকাল থেকেই ইজতেমাস্থলে আসতে শুরু করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন মেয়াদের দেশী বিদেশী চিল্লাধারী জামাত কর্মীরা বর্তমানে রাজধানী ঢাকাসহ ও আশপাশের জেলা এলাকার মসজিদ গুলোতে অবস্থান করছে। তারা আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ইজতেমাস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করবেন। এবার প্রথম পর্বে ৩০ জেলার মুসলি¬রা ইজতেমা ময়দানে জেলা ভিত্তিক খিত্তায় অবস্থান করবেন। তবে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এবং হরতাল এবং একটি রাজনৈতিক দল কর্তৃক অনিদিষ্টকালের জন্য ডাকা ধর্মঘটের কারণে দুর-দুরান্ত থেকে মুসল্লিদের বিশ্ব ইজতেমায় আসতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হবে। মুসল্লিদের কথা বিবেচনা করে ইজতেমা আয়োজক কমিটির নেতৃবৃন্দ ইজতেমা চলাকালে এধরনের কর্মসুচী না দিতে এবং বর্তমান চলমান পরিস্থিতি বন্ধে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও দলের নেতৃবৃন্দের প্রতি জোর আহবান জানান।