শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

কালীগঞ্জে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বাগমারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম আর দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্লীপ কমিটি ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎসহ একাধীক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত স্লীপ কমিটির নামে তিন বারে ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে ওই প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম। কিন্তু ওই টাকার বিদ্যালয়ের কোন উন্নয়ন হয়নি। নিয়মানুযায়ী স্লীপ কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও ওই বিদ্যালয়ের কোন স্লীপ কমিটি নেই। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতির যোগসাজসে ওই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করেছে বলে একটি সূত্রের দাবি। আর ওই টাকা বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্ধকৃত জমির নামজারী বাবদ ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম এ প্রতিবেদককে মৌখিক ভাবে জানান। কিন্তু খরচের পক্ষে কোন প্রমান তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি মৌখিকভাবে আরো জানান, তার বিদ্যালয়ে মোট ৯৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ১০ জন, ১ম শ্রেণিতে ২০ জন, ২য় শ্রেণিতে ১৫ জন, ৩য় শ্রেণিতে ১৫ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ২০ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ১৮ জন। কিন্তু সরেজমিনে হাজিরা খাতানুযায়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা পাওয়া যায় মোট ৫১ জন। এর মধ্যে ১ম শ্রেণিতে ১০ জন, ২য় শ্রেণিতে ৮ জন, ৩য় শ্রেণিতে ৬ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৯ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ১৮ জন। তবে ওই বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণির কোন শিক্ষার্থী নেই বলে জানা গেছে। অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ওই বিদ্যালয়ের ৪৪ জন শিক্ষার্থীর নামে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু যে শিক্ষার্থীদের নামে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে তাদের অনেকেই বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে নেই এবং তাদের কেউই উপবৃত্তির টাকা হাতে পায়নি বলে তাদের অভিভাবকরা এ প্রতিবেদককে জানান। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের নামে উত্তোলনকৃত উপবৃত্তির টাকা প্রধান শিক্ষক মরিয়ম বেগম আত্মসাৎ করেছে।    
 ওই বিদ্যালয়ে উপবৃত্তির টাকা তালিকাভূক্ত শিক্ষার্থী সূবর্ণার খালা বেদেনা বেগম জানান, ৪ বছর পূর্বে আমার ভাগনি ওই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র লেখাপড়া করছে। অথচ স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৪ বছর যাবৎ সূবর্ণার নামে উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করছে। কিন্তু আমরা উপবৃত্তির কোন টাকা পাইনি। একই বিদ্যালয়ের উপবৃত্তির টাকা তালিকাভূক্ত আরেক শিক্ষার্থী নাবিদুলের নানী মিনারা বেগম জানান, ২ বছর পূর্বে আমার নাতি ওই স্কুল ছেড়ে অন্যত্র লেখাপড়া করছে। অথচ স্কুলের প্রধান শিক্ষক তার নামে ২ বছর যাবৎ উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করছে। ওই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাকিবের মা ডলি বেগম জানান, বিগত ৫ বছর তার ছেলের নামে উপবৃত্তি উত্তোলনের পর আবার নতুন করে তার নামে উপবৃত্তির কার্ড তৈরি করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র রাখার জন্য একটি আলমারি ছিল সেটিও ওই প্রধান শিক্ষক নিজের বাড়ীতে নিয়ে গেছে। বিদ্যালয়টির বেহাল দশায় কখনো উন্নয়নের কথা না ভাবলেও বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে সব সময় নিজের উন্নয়নের কথা তিনি ঠিকই ভাবতেন। এসব বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের একমাত্র সহকারী শিক্ষক প্রতিবাদ করলে তাকে বিভিন্নভাবে হেনেস্তা করার চেষ্টা করতেন মরিয়ম বেগম।       
বাগমারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতির মো. সিরাজুল ইসলাম মোড়ল জানান, প্রধান শিক্ষক মরিময় বেগমের যোগসাজসে কোন অনিয়মের সাথে তিনি জড়িত নয়। 
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, বিষয়টি আমি শুনেছি। আর তার অনিয়ম-দূর্নীতির ব্যাপারে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার লুরা আহমেদকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন স্বাপেক্ষে প্রধান শিক্ষিক মরিয়ম বেগমের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।