শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

বাবা-মায়ের আদর বঞ্চিত ওদের ঈদ উৎসব

গাজীপুরের শিশু পরিবার

স্টাফ রিপোর্টার : কারো মা নেই, কারো বাবা নেই। আবার কারো মা বাবা দুজনই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মা বাবা ও পরিবার পরিজন নেই, তবুও ঈদের আনন্দে মেতে ঊঠেছিল তারা অন্যসব শিশুদের মতই। হাতে মেহেদীর রং আর আল্পনা, পায়ে নতুন জুতো, গায়ে নতুন জামা পরে মেতে উঠেছিল আনন্দ উৎসবে। এ উৎসব আয়োজনে ঈদের আগের দিনই সবাই মিলে
ঘর সাজিয়েছে, ঈদের বিশেষ খাবার তৈরী ও ডেকোরেশন করেছে। হাতে রংতুলি নিয়ে ঘরের মেঝে আর বারান্দায় আল্পনার আঁচর কেটে মনের মাধুরী মিশিয়ে নানা চিত্র এঁকেছিল সহপাঠিদের সাথে হৈহুল্লুরে মেতেছিল তারা। মা বাবার শূণ্যতা যেন তাদের এই আনন্দে কোন রেখাপাত করেনি। সব দু:খবোধ ভুলে উদযাপন করেছে ঈদ আনন্দ উৎসব।
গাজীপুর মহানগরীর ভানুয়া এলাকার সরকারী শিশু পরিবারের ১০০ এতীম মেয়েদের ঈদ কেটেছে আপনজনের বাইরে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালনায় এখানে এসব এতীম শিশুরা লেখাপড়া করছে । মা বাবা ছাড়া এতীম এসব শিশুরা কেমন ঈদ কেটেছে তা জানতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে এ চিত্র ।
২০০৬ সালে গাজীপুর মহানগরীর ভানুয়া এলাকায় পৌনে ২ একর জায়গায় গড়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজ সেবা অধিদপ্তরের তত্বাবধানে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয় । একশ এতীম মেয়েদের লেখাপড়া ও সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব পালন করছে প্রতিষ্ঠানটি। একটি ভর্তি কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে এখানে ভর্তি করানো হয় প্রকৃত এতীম মেয়েদের।  জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে রয়েছে একটি ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিং কমিটি। স্থানীয় সংসদ সদস্যের একজন প্রতিনিধি,মেয়রের প্রতিনিধি, ডিসির প্রতিনিধি, সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি রয়েছে এ কমিটিতে। ৬ থেকে ৯ বছরের প্রকৃত এতীম মেয়েরা এখানে ভর্তি হতে পারে। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত আবাসিক এ প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে রেখে  লেখাপড়া করানো ও পরবর্তীতে  চাকুরীর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। গাজীপুরের বিওএফ স্কুল,ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড স্কুল, টাকশাল হাই স্কুল ,ভিডিপি হাই স্কুল এবং সরকারী শিশু পরিবার স্কুলে লেখাপড়া করে এসব মেয়েরা । এদের মধ্যে এবার ৬ জন মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী । জেএসসি পরীক্ষায়  ৫জন ছাত্রী পেয়েছিল এ প্লাস।
লেখাপড়ার পাশাপাশি  তাদেরকে নানা ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় । এ সব প্রশিক্ষনের মধ্যে রয়েছে এ্যামব্রয়ডারী ও সেলাই প্রশিক্ষণ, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও ভেজিটেবল এন্ড গার্ডেনিং প্রশিক্ষণ।
 সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডেও রয়েছে এদের সাফল্য। জাতীয় পর্যায়ের সকল অনুষ্ঠানে  অংশগ্রহণ করে এরা নিয়ে আসে পুরস্কার ।
এখানে মোট ১৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছে এসব মেয়েদের তত্বাবধানের জন্য । তারা সার্বক্ষনিকভাবে এদেরকে গড়ে তোলার চেষ্টা করছে সুনাগরিক হিসেবে।
প্রতিষ্ঠানটির উপ-তত্বাবধায়ক ইফফাতারা মনিরা নাছরিন চৌধুরী জানান, মা বাবার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত এসব এতীম মেয়েরা  যাতে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এজন্য আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি । লেখাপড়ার পাশাপাশি তারা যেন চাকুরী করতে পারে, সেজন্যও  আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে । তিনি বলেন, আমাদের মেয়েদেরকে গাজীপুরের ভাল স্কুলগুলিতে ভর্তি করিয়ে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করছি। তাদের যাবতীয় খরচ বহন করছে সমাজ সেবা অধিদপ্তর । তিনি আরো জানান, অত্যন্ত সুশৃংখল ও নিয়মানুবর্বিতার মধ্য দিয়ে লেখাপড়া করার কারনে তারা মেধার স্বাক্ষর রাখছে । তবে আমরা যদি খন্ডকালিন শিক্ষক রাখার ব্যবস্থা করতে পারতাম এবং তাদেরকে আরো স্পেশাল কেয়ার করতে পারতাম, তাহলে তারা আরো বেশী ভাল রেজাল্ট করতে পারতো ।
তিনি জানান, মা বাবা না থাকলেও মা বাবার আদর স্নেহেই বেড়ে উঠছে তারা। নানা সামাজিক উৎসবে মেতে উঠে আনন্দে। এবারের ঈদে তারা মেতেছিল আনন্দে। আতজবাজী ফোটানো,সুন্দর করে ঘর সাজানো, নতুন পোষাকে নিজেদেরকে সাজানো আর খাবার ডেকোরেশনের প্রতিযোগিতায় নেমেছিল তারা । আর এ প্রতিযোগিতায় যারা জিতেছে, তাদেরকে দেওয়া হয়েছে পুরস্কার । ঈদের আগের দিন তাদেরকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় নতুন জামা, জুতো ও নানান ধরনের কসমেটিকস। ঈদের দিন পরিবেশন করা হয় বিশেষ খাবার ।
গাজীপুর জেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলম জানান, সরকারী এই শিশু পরিবারের এতীম শিশুদের দায়িত্ব নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে । মা বাবাহীন এসব মেয়ে শিশুরা পিতৃমাতৃ¯েœহে এখানে সুশিক্ষা নিয়ে বড় হচ্ছে। পরিবারের যবতীয় সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে তাদেরকে । তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়নে সরকারকে আরো জোড়ালো ভ’মিকা রাখতে হবে।
১ম শ্রেণীর ছাত্রী সাবিনা, বাসা গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় । বাবা নেই , মা আছে। এখানে আছে এক বছর ধরে। ঈদের সময় তার খারাপ লেগেছে কিনা জানতে চাইলে সে জানায়, কোন খারাপ লাগেনি। সবার সাথে আনন্দ করেছি। ৩য় শ্রেণীর ছাত্রী রাবেয়া আক্তারসহ অন্যান্য মেয়েরাও জানায় একই অভিমত । সবার কথা , আমাদের মা বাবা না থাকলেও মা বাবার স্নেহেই আমরা বড় হচ্ছি। আমরা চাই , ভবিষ্যতে মানুষের মত মানুষ হতে , সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে এবং সমাজকে কিছু দিতে ।
মা বাবার আদর স্নেহ থেকে বঞ্চিত এসব শিশুরা  আপনজন ছাড়াই  অপত্য স্নেহ আর ভালবাসায় বেড়ে উঠছে  মনোরম পরিবেশ আর নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থায় । ফুলের মত নিষ্পাপ যে শিশুর কোন অবলম্বন ছিল না, তারাই এখন নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার আশায় তারা পথ চলছে।