শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

বেশির ভাগ সড়কের বেহাল দশা, চরম ভোগান্তিতে নাগরিক সমাজ ঃ কাউন্সিলরা খায় আর ঘুমায়

গাজীপুর সিটি’র ২য় বর্ষ পূরণ ঃ নাগরিক সেবার খবর নেই

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় বর্ষ পূরণ হলেও এখন পর্যন্ত এ নগরীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাটের অবস্থা খুবই জরাজীর্ণ। নান্দনিক শহর গড়ে তোলা তো দূরের কথা এখানে অবকাঠামোগত উন্নয়নের কোনো ছোঁয়াই লাগেনি। বেশির ভাগ সড়কের বেহাল দশা। খানাখন্দক আর ভাঙ্গাচোরা রাস্তাঘাট ও জলাবদ্ধতার প্রধান চিত্রই রয়ে গেছে সিটি কর্পোরেশন এলাকায়। ফলে চরম ভোগান্তিতে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন এলাকার নাগরিকরা। আর নির্বাচিত কাউন্সিলরদের হাম্বরা ভাব ছাড়া নাগরিক সেবার কোন চিত্রই চেখে পড়েনা। তারা গরিবের ট্যাক্স আদায় করে খায় আর ঘুমায়। রাস্তা-ঘাটে চলতে ফিরতে নাকাল হয় সাধারণ মানুষ।
নগরীর শিল্পসমৃদ্ধ টঙ্গী, গাছা, বোর্ডবাজার, জেলা সদর, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে, এসব সড়কে কোনো যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, সাধারণ মানুষের হেঁটে যাওয়ার কোনো উপায় নেই। অপরদিকে মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ সড়কগুলোর যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্রও খুবই করুণ। যত্রতত্র খানাখন্দে ভরা। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় জনসাধারণের জনদুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
সিটি কর্পোরেশনের যাত্রা শুরু হওয়ার পর গত দু’বছরে জনগণের কাঁধে শুধু ট্যাক্সের বোঝাই চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ সুবিধা এবং গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ লাইন স্থাপনসহ কোনো প্রকার নাগরিক সেবা এখানে পাওয়া যাচ্ছে না।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দুই বছর পূর্ণ হলো গত ক’দিন হলো। নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে অধ্যাপক এমএ মান্নান প্রথম নগরপিতা হিসেবে নির্বাচিত হন। সিটির ৫৭টি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ১৯ জন মহিলা কাউন্সিলরসহ ৭৬ জন কাউন্সিলর নিয়ে গঠিত দেশের সর্ব বৃহত্তম এই সিটি কর্পোরেশন। দুই বছর পার হওয়ার আগেই নির্বাচিত মেয়র বিভিন্ন ফৌজদারী মামলায় কারাবাস করছেন। তাছাড়া বিএনপি সমর্থিত একাধিক মহিলা ও পুরুষ কাউন্সিলগন নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে দল ছেড়ে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়েছেন। অথচ এখনো জনগণের কাছে দেয়া কোনো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারছেন না এসব  জন প্রতিনিধিরা।
নগরীর আঞ্চলিক সড়কগুলো বিভিন্ন ওয়ার্ডে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। অথচ বড় বড় গর্তে ভরা বেহাল এসব সড়ক বর্ষাকালে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা চেনার উপায় থাকে না। হাঁটুপানি জমে মাঝে মাঝে খালের মতো অবস্থা হয়ে যায়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পরও এসব রাস্তার কোনো উন্নতি ঘটেনি। বিদ্ধস্ত সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করে রাখার চেষ্টাও করে না সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলের রাস্তাঘাটগুলো তুলনামূলকভাবে ভালো থাকার কথা। কেননা, প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেন এখানকার শিল্প-কলকারখানার মালিকরা। কিন্তু তারপরও গাজীপুর সিটিতে ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকরা সে সুবিধা পাচ্ছেন না। বিসিক শিল্প এলাকায় বিদেশী ক্রেতারা ভাঙাচুরা রাস্তা দিয়ে কারখানায় প্রবেশ করতে চান না। এতে করে অনেক সময় কারখানা ভিজিট করতে না পেরে অর্ডার পর্যন্ত বাতিল করে দেন তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনাবাড়ী বিসিক এলাকার ব্যবসায়ী আমাদের এ প্রতিনিধিকে বলেন, রাস্তা খারাপ থাকার কারণে প্রতি মাসে যানবাহন অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হয় এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা খরচ দিতে হয়। এছাড়া এ মাসে বৃষ্টির কারনে রাস্তা খুবই খারাপ থাকায় বিভিন্ন দেশের বায়াররা কারখানা ভিজিটে আসতে না পারায় কোটি কোটি টাকার অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। সিটি করপোরেশন এসব যোগাযোগ ব্যবস্থার দিকে নজরদারী না করায় এভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন রফতানিমুখী শিল্পকারখানার মালিকরা।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে,  টঙ্গীর প্রত্যন্ত গ্রাম গুশুলিয়ার এক বাসিন্দা জহির উদ্দিন জানান, আগে বাড়ির জন্য ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা কর দিতাম। বর্তমানে ১৬ হাজার টাকার নোটিশ দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এভাবে বর্ধিত হারে কর পরিশোধ করতে মাইকিং করা হয়েছে। তবে চাহিদা মাফিক ঘুষ দিলে করের পরিমাণ কমিয়েও দেয়া হচ্ছে। ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়ে মেয়রকে অবহিত করেও কোনো কাজ হচ্ছে না।
আন্দারোল গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন জানালেন, পূর্বে টঙ্গী পৌরসভা থাকতে প্রতিবছর মাত্র দেড়হাজার টাকা ট্যাক্স দিতেন। এ বছর সিটি করপোরেশন থেকে ১৭ হাজার টাকা ট্যাক্স নির্ধারণ করে তাঁকে নোটিশ দেয়া হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশনের সাধারণ নাগরিকদের অভিযোগ, বড় বড় গর্তে ভরা বেহাল এসব সড়ক বর্ষাকালে দুর্ভোগের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা চেনার উপায় থাকে না। হাঁটুপানি জমে মাঝে মাঝে খালের মতো অবস্থা হয়ে যায়। এলাকার নাগরিকরা এ দূর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ ব্যপারে বিএনপির কেন্দ্রিয় নেতা আলহাজ্ব মোঃ হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, আমাদের জনগনের কোন উন্নতি হয়নি শুধু ভোগান্তি বেড়েছে। নাগরিকদের প্রত্যাশার কিছুই পূরন হয়নি। আর প্রত্যাশা পুরন না হওয়ার পেছনে  কিছু কারনও রয়েছে। এর কারন কোন জবাবদিহিতা নেই। কার কাছে জবাব চাইবে ? কে জবাব দেবে ? জবাব নেয়ার বা দেয়ার কেউ নেই। জনগনের ট্যাক্স বাড়ছে, ভোগান্তি বাড়ছে, হয়রানী বাড়ছে।
অপরদিকে নির্বাচিত মেয়র জেলে থাকায় গত ৪ মাস আগে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দ্বায়িত্ব পান প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরন। তিনিও ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে এ প্রতিনিধিকে বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতি আমরা কিছুই করতে পারিনি। তবে আমার সাধ্য অনুযায়ী সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পরিবহন ও লোকবল সংকটের কারনে সিটি করপোরেশনের কাজ কর্ম ব্যহত হচ্ছে। এছাড়া ড্রেনেজ ও সুয়ারেজ ব্যবস্থা বেহাল দশার কারনে জনগনের অসচেতনতাকেও দায়ী করলেন তিনি।
শিল্পজোন হিসাবে পরিচিত এই সিটি কর্পোরেশনটি দেশ ও বিদেশে ইতিমধ্যে ব্যপক পরিচিতি লাভ করেছে। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অবস্থান দেশের মধ্যাঞ্চলে। এখানকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের ঢেউ সারা দেশে সংক্রমণের মতো ছড়িয়ে যায়। এই অপরিকল্পিত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব হবে একটি আধুনিক ও বাস্তবসম্মত নগর পরিকল্পনা প্রণয়ন করা। সিটি কর্তৃপক্ষ সামাজিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে জনসাধারণ সুস্থ জীবন যাপনের সুযোগ পাবে । সুন্দর ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনে সুস্থ জাতির এর আর কোন বিকল্প নেই। নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন হোক বর্তমান সরকার ও দেশের উন্নয়নের মডেল।