শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

শ্রীপুরে ভূমিদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি চায় ২০ নিরীহ কৃষক ও সংখ্যালঘু পরিবার

ভূয়া নামজারী ও জাল দলিল দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বদনীভাঙ্গা গ্রামে স্থানীয় একটি ভূমিদস্যু চক্র হিন্দু-মুসলিমসহ ২০নিরীহ কৃষক পরিবারের বসতভিটা জবর দখলের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুল ও বানোয়াট তথ্য নির্ভর ভুয়া নামজারী ও জমাভাগ, একাধিক জাল দলিল দ্বারা চক্রটি নিরীহ কৃষকদের হয়রানী করছে দিনের পর দিন। চাষাবাদ ও বসত ভিটার জমিটুকু ভূমিখেকোদের দখলে চলে গেলে নিরীহ কৃষক পরিবারগুলো তাদের সন্তানাদি ও পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসা ছাড়া যাওয়ার আর কোন জায়গা থাকেনা। এ ব্যাপারে হয়রানীর শিকার বদনীভাঙ্গা গ্রামের শামস উদ্দিন বেপারীর পুত্র হারুন-অর-রশিদ বাদী হয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট একটি অভিযোগ দায়ের করেন। জেলা প্রশাসকের নিকট দায়েরকৃত অভিযোগ ও অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য মতে জানা গেছে শ্রীপুর উপজেলার সিংদিঘী গ্রামের আঃ বারী সরকারের পুত্র বাবুল সরকার ও তার সহযোগী বদনীভাঙ্গা গ্রামের সাহেব আলীর পুত্র মাইজুল ইসলাম এবং কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের আহাদ আলীর পুত্র আঃ ছামাদ স্থানীয় ভুমিদস্যু, দাঙ্গাবাজ, হারমাইদ এবং কলহপ্রিয় লোক। ভুয়া নামজারী ও জাল দলিল বানিয়ে অন্যের জমি জবর দখলে পারদর্শী ওরা। ফলে এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্খা সর্বক্ষণ। শুধু মুসলিম সম্পত্তি নয় অসংখ্য সংখ্যালঘু পরিবারও মুক্তি চায় ওই কুখ্যাত ভুমিদস্যু চক্রের কবল থেকে। এরা নিঃশ্ব ও সর্বশান্ত করে পথে বসিয়ে দেয় সহজ, সরল ও সাধারণ মানুষকে। সমাজের দুর্বল মানুষেরা বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বিচার না পেয়ে কষ্টের বুকে পাথর চাপা দিয়ে তখন মৃত্যুর প্রহর গুণে। তাদের মতো নিরীহ মুসলিম ও সংখ্যালঘু ২০টি কৃষক পরিবার ওই ভুমিদস্যুদের নির্মম শিকার। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের  ৫নং মাওনা মৌজাস্থিত এস.এ ১৭১৩ ও আর.এস ৯৭৬ নং খতিয়ানের এস.এ ৪০৫৭/৫৮, ৩৯৭৯নং দাগে এবং আর.এস ১৩৩১৮/১৯, ২০, ২১, ২২, ২৩ ও ১৩৩৮১নং দাগে মোট ২.৬০ একর জমির রেকর্ডীয় মালিক কালিচরণ বর্মণের পরবর্তী ওয়ালি ওয়ারিশগণ বৈধ মালিকানার দাবীদার পশুরাম ও মেঘলালের নিকট থেকে জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে ১৯৮৭ সালে ৫৯২৩নং ও ৫৯২৫নং রেজিষ্ট্রি দলিল মূলে ক্রয় সূত্রে মালিক হয় ২০টি পরিবারের কয়েকজন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ওই ভাতৃদ্বয় সম্পত্তির বাকী অংশ অন্যান্যদের কাছেও বিক্রয় করে। সেখানে অধিকাংশ সংঘ্যালঘু পরিবারগুলো বাবা, দাদা (পূর্বস্বরী) পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত হইয়া শতাধিক বছর ধরে এ জমিতে শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে রয়েছে। হিন্দু-মুসলিম ২০/৩০টি পরিবার বসত বাড়ি নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে থাকাবস্থায় ওই ভুমিদস্যু চক্রের নজরে পড়ে। ক্ষুদ্র জমির মালিকদের ভূ-খন্ডটি গ্রাস করতে চক্রের সদস্যরা বুনতে থাকে ষড়যন্ত্রের জাল। একই নামের হিন্দু ব্যক্তিদের ভুয়া মালিক সাজিয়ে একের পর এক ৩টি জাল দলিল বানিয়ে এসব দলিল মূলে ভুল ও বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয় ভূমি অফিসে নিজস্ব কেরামতিতে ৪৫৬২/১১-১২ নং নথির নামজারী ও জমাভাগ করে যা তদন্ত করলে সম্পূর্ণ ভুয়া প্রমাণিত হবে। ভুয়া খারিজ মূলে হাতকরা কারখানার দালালরা  প্রায় ২০টি অসহায় কৃষক ও সংখ্যালঘু পরিবারের জমি হাজ্বী মুজিবুর রহমান এসএস ষ্টীল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিঃ মালিকের নিকট বিক্রি করে দেয়। কারখানার মালিককে দখল বুঝিয়ে দিতে জমিতে গেলে টের পেয়ে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বাধা প্রদান করলে ভূমিদস্যুরা বার বার জবর দখলের চেষ্টা চালায়। চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নানা প্রকার ভয়-ভীতি, হুমকি ও মামলা দিয়ে হয়রানীর প্রক্রিয়া শুরু করলে নিরীহ হিন্দু-মুসলিম কৃষকদের মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার নির্মম শিকার হতে হয়েছে যা পরবর্তীতে আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হয়। আদালতে মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে নানা অপকৌশল অবলম্বনে জমি জবর দখলে মরিয়া হয়ে উঠে ভূমিখেকোরা। অপরদিকে ভুয়া খারিজ বলবৎ রাখতে তৎপর হয়ে উঠে ওরা। এ ব্যাপারে ভোগ দখলে থাকা বৈধ মালিকানা দাবী করে শ্যামল চন্দ্র বর্মণ ও হযরত আলী বাদী হয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) শ্রীপুর বরাবর ০৫/১১/২০১৪ ইং তারিখে ১৯৫০ সনের প্রজাস্বত্ব আইনের ১৫০ ধারা মোতাবেক ভূমিদস্যু চক্রের আবেদনের প্রেক্ষিতে করা ৪৫৬২/১১-১২নং নথির ভুয়া নামজারী ও জমাভাগ বাতিলের আবেদন করেন। কিন্তু ভূমিদস্যু চক্রের সদস্যরা ভুল ও বানোয়াট তথ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে ভুয়া খারিজ টেকানোর চেষ্টা করছে বিধায় তারিখ বদলের হয়রানীর শিকার  হচ্ছে দিনের পর দিন।
এ ব্যাপারে সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে বদনীভাঙ্গা গ্রামের ভূমি হয়রানীর শিকার পিতা মৃত বসুদেব বর্মণের পুত্র ওমা কান্ত চন্দ্র বর্মণ (৯০) জানান, যে আধা বিঘা জমিতে চাষবাস করে সংসার চালাতাম, সে জমিটুকু ভূমিদস্যু চক্রের দখলে চলে যাওয়ায় খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।
ভূমিদস্যুর চক্রের ভয়ে মুখ খুলতে অনিচ্ছা থাকা সত্বেও নিজেকে নিরাপদ ও আড়াল রাখার শর্তে সুনীল চন্দ্র বর্মণের পুত্র মনিন্দ্র চন্দ্র বর্মণ (৪৫) জানান, চাষাবাদের ১ বিঘা জমি ভূমিদস্যু চক্রের দখলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। কোন প্রকার প্রতিবাদ করতে গেলেই মামলা মোকদ্দমার হয়রানীতে পড়তে হবে বলে কিছুই করতে পারছি না।
বদনীভাঙ্গা গ্রামের নিল কান্তি বর্মণের পুত্র নিতাই কান্তি বর্মণ (৫৫) জানান, বৃটিশ আমল থেকে যে জমি চাষবাস করে খাচ্ছি সে জমিতে কোত্থেকে যে কি এসে সব তছনছ করে দিল কিছুই বুঝতে পারলাম না। মনে হয় দেশে কোন বিচার নাই, যদি বিচার থাকতো তাহলে যত শক্তিশালী ব্যক্তিই থাকুক এমন শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে থাকা জমি জবর দখলে নিতে পারতো না। তবে এরা এতই বিপদজনক যে, এদের বিরুদ্ধে কিছু লিখতে গেলে সাংবাদিকসহ মামলায় ঢুকিয়ে দেয়।
একই গ্রামের হযরত আলী (৪৫) জানান, এই জমির রেকর্ডীয় মালিক কালিচরণ বর্মণের বৈধ ওয়ালি ওয়ারিশানদের নিকট থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক হয়ে প্রায় ৩০ বছর যাবৎ শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলে আছি। কিন্তু ওই ভূমিদস্যুরা আমার ভোগ দখলীয় সম্পত্তির ভুয়া মালিক সাজিয়ে ৩টি জাল দলিল করে এবং ভুয়া খারিজের মাধ্যমে কারখানা মালিকের কাছে জমি বিক্রয় করে জবর দখলের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। শুধু তাই নয় কারখানা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মামলা দিয়ে হয়রানী করছে এবং প্রতিনিয়ত নানা প্রকার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
ভুয়া নামজারী, দলিল ও জবর দখল সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বাবুল সরকার মোবাইল ফোনে জানান, হযরত আলীদের দাবী সঠিক না, তারা খাস জমির ভোগ দখলে ছিল। ৪৫৬২/১১-১২নং নথিটি বাতিলের আবেদনের প্রেক্ষিতে এ্যাসিল্যান্ড অফিসে শুনানি চলছে। কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক তা কাগজপত্র না দেখে বলতে পারবেনা। তবে সঠিক প্রতিবেদন বানাতে চাইলে তিনি সাক্ষাতের প্রস্তাব দেন।
বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ভুল ও বানোয়াট তথ্য নির্ভর ভুয়া নামজারী ও জমাভাগ ৪৫৬২/১১-১২ নং নথিটি বাতিল ও ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ভুক্তভোগী ২০টি নিরীহ কৃষক ও সংখ্যালঘু পরিবার হয়রানী থেকে মুক্তি ও শেষ সম্বল ভূ-খন্ডটুকু রক্ষা করতে সরকারের উর্ধ্বতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।