শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

ধরাছোয়ার বাইরে মূল মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট

টঙ্গীতে মাদকের বেপরোয়া বানিজ্য 

স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী : গাজীপুরের টঙ্গী জুড়ে চলছে মাদকের বেপরোয়া বানিজ্য। ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে মাদক মূল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জেলা ডিবি পুলিশ, স্থানীয় থানা পুলিশ কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মাদকদ্রব্য বেচাকেনা বা সেবন রোধে মাঝে মাঝে অভিযান মাদকদ্রব্য উদ্ধার বা দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ী বা সেবনকারীদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠালেও মাদকদ্রব্যের মূল ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। 
টঙ্গী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, গাজীপুরের টঙ্গী অঞ্চলে মাদক স্পটগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে অর্ধশতাধিক মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে নারী মাদক ব্যবসায়ীর সংখ্যাই বেশী রয়েছে। বাকিরা পুরুষ। আর এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে আরো অন্তত দেড় শতাধিক সোর্স। তার মধ্যে ৩০/৩৫ জন রয়েছে স্থানীয় থানা পুলিশ, জেলা ডিবি পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বা র‌্যাবের নামধারী সোর্স।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (গাজীপুর) সূত্রে জানা যায়, অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হচ্ছে। তবে আইনের ফাঁক ফোঁকরে এসব মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ীরা জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারো এ পেশায়ই ফিরে আসছে। প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে জেলার টঙ্গী এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হলেও বর্তমানে তা আর হালনাগাদ করা হয়নি। সূত্রটি আরো জানান, বারবার অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীসহ ব্যবসার সাথে জড়িত অনেককেই গ্রেফতার করার পর তারা এখন জায়গা বদল করে ব্যবসা করছেন। ফলে নতুন করে আর কোনো তালিকা করা সম্ভব হয়নি। মাদক ব্যবসায়ীরা মূলত বাংলা মদ, বিদেশী মদ, বিয়ার, গাঁজা, হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও বিভিন্ন ধরনের নেশা জাতীয় ইঞ্জেকশন বিক্রেতা। তবে মাদকাসক্তরা বর্তমানে বেশি ঝুকছে ইয়াবা দিকে।
অধিদপ্তর সূত্রটি আরো জানান, বর্তমানে ব্যাপক ইয়াবার চাহিদা থাকলেও ব্যবসায়ীদের আটক করতে পারছেন না আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। কারণ ব্যবসায়ী বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বিশেষ করে ১০/১৫ বছর বয়সী শিশুদের দিয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে কেনাবেচা হচ্ছে মাদক ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে টঙ্গী এরশাদনগর, ভরান মাজার বস্তি, কাঠালদিয়া বস্তি, মিলগেইট নামাপাড়া বস্তি, নতুন বাজার কো-অপারেটিভ ব্যাংকের মাঠ বস্তি, টঙ্গী রেল ষ্টেশন, আমতলী (কেরানীরঠেক) বস্তি, শিলমুন মোল্লার গ্যারেজ, মরকুন ঠেকপাড়া,  আউচপাড়া, গাজীপুরা, খৈরতৈল ও দেওড়া এলাকায় মাদক যেন ওপেন সিক্রেট। 
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টঙ্গীস্থ স্থানীয় কয়েকজন সচেতন নাগরিক আমাদের এ প্রতিনিধিকে জানান, আইন শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের লোক দেখানো নামমাত্র কার্যক্রম চালু থাকলেও প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী বা ডিলারদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। অসাধু কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা তাদের সোর্সদের মাধ্যমে হপ্তা, মাইসকা নামের চাঁদার হারে তা আদায় করে থাকে বলেও অভিযোগ উঠেছে একাধিক। আবার কিছু মাদক ব্যবসায়ীদের সহযোগী নামধারী প্রশাসনিক পাবলিক সোর্স টঙ্গীর বিভিন্ন বস্তি এলাকাসহ আউচপাড়ার খাঁ পাড়া, মোল্লাবাড়ী, মোক্তার বাড়ী, শিংবাড়ি, তিলারগাতী, শিলমুন, মরকুন ও দেওড়াসহ অন্যান্য এলাকা নিয়ন্ত্রন করে তাদের নিজস্ব নিয়ন্ত্রনে প্রশাসনের অর্থলোভী দুষ্টচক্রের সদস্যদের ম্যানেজ করে থাকে।।
এ ব্যপারে টঙ্গী মডেল থানার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার গোলাম সবুর বলেন, মাদক সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন করা কোন ভাবেই সম্ভব না। অসৎ কর্মকর্তা ও সোর্সদের বিষয়ে তিনি সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এসব কিছুর জন্যই এ মাদক সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের সাধ্য অনুযায়ী মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন সভা-সমাবেশসহ অভিযান চালিয়ে এধরনের অপরাধ গুলো নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। তবে বাস্তবিক অর্থে মাদকের মূল হোতাদের ধরতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীনও হতে হচ্ছে। ফলে অনেকেই পার পেয়ে যাচ্ছে। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টঙ্গীর এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন ডিবি, এসবি ও পুলিশসহ কতিপয় সাংবাদিক এবং আরও অনেক সংস্থাকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত দৈনিক হপ্তা দিয়ে তিনি এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন। যেহেতু তার বেশীরভাগ মাল (ফেনসিড্রিল) পানি পথে আসে। তাই প্রতি সপ্তাহেই আশুলিয়া, তুরাগ ও টঙ্গী থানার টহল পুলিশদের ম্যানেজ করেই তিনি এ ব্যবসা করে থাকেন। 
এবিষয়ে টঙ্গী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী জানান, তার এলাকায় সকল অপকর্ম বন্ধ করে দেয়া হবে। ছিনতাই মাদকের সাথে তিনি কোন আপোষ করবেন না।  তিনি আসার পর অনেক মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীদের আটক করে জেল হাজতে পাঠিয়েছেন। কিছু কিছু স্পটে মাদক চললেও তার অফিসাররা তাকে অবহিত না করায় তিনিও কতিপয় পুলিশ সদস্য ও সোর্সদের দোষারোপ করে বলেন আমার একার পক্ষে সবকিছু সামলানো সম্ভব না। এই জনবহুল বস্তি অধ্যুষিত এলাকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক মহল, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সকলের সহযোগীতা প্রয়োজন। তারপরও আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।