শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

মোবারক হো মাহে রমযান

চন্দ্র সূর্যের আগমন নির্গমনে এবং দিবা রাত্রির আবর্তন বিবর্তনে কালের চাকা ঘুরতে ঘুরতে বছর শেষে রহমত  বরকত ও মাগফিরাতের পয়গাম নিয়ে আবারো আমাদের দোরগোরায়  এসে উপস্থিত মাহে রমযান। বিশ্বের  মুসলিম উম্মাহ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এই  মোবারক মাসকে বরণ করে নিতে,  প্র¯ুÍÍত  তারা ইবাদতের মৌসুমকে কাজে লাগাতে , বিশেষতঃ  যারা আল্লাহর পেয়ারা এবং তার প্রেমে মাতোয়ারা, তারা তো  সাধনার ময়দানে কোমর বেধেঁ অবতীর্ণ হতে  দিবা Ñ নিশি প্রহর গুনছে।  তাই আমরাও শান্তির  বার্তা বাহক  এই  মোবারক মাসকে স্বতঃস্ফুর্ত চিত্তে বরণ করে বলছি, স্বাগতম  হে মাহে রমযান। আহ্লান সাহলান  , হে মাহে রমযান।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যমানায় বেহেশতী সওগাত নিয়ে এই  মোবারক মাস যখনই হাজির হত তখনই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি  ওয়াসাল্লাম এর  তাৎপর্য ফযীলত ও গুরুত্ব বর্ণনা র্পূবক সাহাবায়ে কেরামকে উৎসাহিত করতেন, সাহাবী হযরত উবাদা উবনে সামিত ( রাযিঃ)  থেকে বর্ণিত  হাদীসে হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ঃ-  মাহে রমযান তোমদের দ্বারে সমুপস্থিত । এটি বরকতের মাস। এ মাসে আল্লাহ তা’তায়ালা  তোমাদেরকে তাঁর  রহমতের কোলে তুলে নেন।  গুনাসমূহ ক্ষমা করে দেন , দোয়া কবুল করেন। ইবাদত ও সাধনায় তোমাদের  পারস্পরিক  প্রতিয়োগিতা লক্ষ করেন এবং ফেরেশতাদের মজলিশে তিনি  তোমাদের নিয়ে গর্ব করেন। অতএব তোমরা নিজেদের পক্ষ থেকে আল্লাহর দরবারে ভাল ভাল ্আমল পেশ কর। কারণ  ঐ ব্যক্তি বড়ই দুর্ভগা , যে এই মাসে  আল্লাহর বহমত ও দয়া থেকে বঞ্চিত হয়। এই হাদীস ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বহু গ্রন্থ প্রণেতা হযরত মাওলানা মঞ্জুর নো’মানী (রহঃ)  বলেছেন যে, রমযান সম্পর্কে ভাষণ দানকালে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে যে কথাটা বেশ করেছেন , তা হল (ইয়াগশাকুমুল্লাহু ফীহি )  প্রকৃত অর্থ এই বার্কের মধ্যে দয়াময় খোদার যে পরিমাণ দয়ার ধারনা নবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  আরবীতে দিয়েছেন , সেটিকে নিজস্ব ভাষায় সম্প্রসরণকরা বা রুপায়িত করা আদৌ সম্ভব নয়। যত কিছু দিয়েই আমি এর অনুবাদ  করতে চাইবো কিন্তু এটাই সত্য যে , এর হক আদায় হবে না। অবশেষে প্রীয় নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র যবান নিঃসৃত -  বাক্যটির আমি এই ভাবার্থই আবিষ্কার করেছি যে , মাহে রমযানে আল্লাহ তায়ালা রোযাদার বান্দাকে তাঁর রহমতের কোলে তুলে নেন। রোযাদার ভাইদের  কত সৌভাগ্য যে , রহমতের পর্দা তাদেরকে মাসব্যাপী ঘিরে রাখে। চরম আশ্চর্যের বিষয়ই বটে যে , দাতা যত বড় মহান , দাতার দেওয়া এবং ক্ষমতাও তত বিশাল। হাদীসে অবশিষ্ট অংশগুলো সহজেই বোদগম্য তাই সেগুলোর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেওয়ার তেমন কোন প্রয়োজন নেই ।
হযরত আবু হুরায়রা ( রাযিঃ ) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান ঃ- রমযান মাসে আমার উম্মতকে এমন পাঁচটি বিশেষ পুরষ্কার দান করা হয়েছে যা পূর্ববর্তী কোন নবীর উম্মতকে দেওয়া হয়নি।
১। রোযাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধ আল্লাহ তায়ালার নিকট মেশকের সুগন্ধি অপেক্ষা অধিক প্রিয়।
২। রোযাদার  ব্যক্তির  জন্য  ফেরেশতাগণ ইফতার পর্যন্ত  মাগফিরাতের দোয়া করতে থাকেন।
৩। এমাসের  প্রতিদিন আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় রোযাদার বান্দাদের জন্য বেহেশতকে সুÑ সজ্জিত করেন এবং তাকে সম্বোধন করে বলেন যে আমার নেকবান্দারা অচিরেই দুনিয়ার যাবতীয় কষ্ট থেকে মুক্ত হয়ে তোমার কাছে আসছে।
৪। এ মাসে শয়তানদেরকে  বন্দীশালায় আবদ্ধ করা হয় ফলে, তাঁরা  তাদের  লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেনা। ৫। এ মাসের শেষ রাত্রিতে রোযাদার ব্যক্তিকে  ক্ষমা করে দেওয়া হয় । প্রশ্ন করা হল যে আল্লহর রাসূল ! এটা কি কদরের রাতে হবে? প্রতি উত্তরে তিনি বললেন  না। বরং শেষ রাত্রিতেই দেওয়া হবে, কেননা  শ্রমিককে তাঁর  পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয় যখন সে তাঁর  কাজ শেষ করে। এত বড় পুরস্কার ঘোষিত হয়েছে যে মাসের  শানে সেটাই হচ্ছে মাহে রমযান। যা উপস্থিত অতি নিকটে।
হযরত সাহাল ইবনে সাদ ( রাযিঃ ) থেকে বর্ণিত অন্য একখানা হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন ঃ- জান্নাতে  ইয়ান নামক একটি বিশেষ দরজা রয়েছে যা দিয়ে শুধু রোযাদাররাই জান্নাতে প্রবেশ করবে।
অন্য আরেকটি বর্ণনায় পাওয়া যায় যে , ২৯  শে শা’ বান মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  মাহে রমযানের ফযীলতের কথা তুলে ধরে এবং  রমযানকে স্বগতম জানিয়ে নি¤েœাক্ত একটি ভাষণ দিয়েছিলেন , যাতে মাহে রমযানের কয়েকটি  দিক সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছেঃ – হে লোক সকল ! একটি বরকতময় মাস তোমাদের দ্বারে সমুপস্থিত।
১। এই মাসে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাত রয়েছে , যে রাতের এবাদত হাজার মাসের  এবাদতের চেয়েও উত্তম।
২। আল্লাহ পাক এ মাসের  রোযা ফরয করেছেন। এই  মাসের রাতে বন্দেগী করা অতি সওয়াবের কাজ।
৩। এমাসে কোন লোক যদি কোনও নফল এবাদত করে , তবে তাঁর সওয়াব বা শুভ পরিণতি হবে অন্র
 মাসের  ফরয়ের সমতুল্য । আর এ মাসরে একটি ফরয়ের সওয়াব অন্যান্য মাসরে সত্তরটি
 ফরযের সমতুল্য।
৪। এই মাস ধৈর্য্যরে , আর ধৈর্য্যরে প্রতিদান হল বেহেশত।
৫। এই মাসে  পরস্পরের মধ্যে  সদ্ব্যবহার করার ও সকলের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের ।
৬। এই মাসের মুমিনের রিযিক বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়।
৭। যে ব্যক্তি কোনও রোযাদারকে ইফতার করাবে তার  গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে । এবং  তাঁকে  দোযখ থেকে নাযাত  দেওয়া হবে ।  এতে ইফতারকারী রোযাদারের সওয়াবের কোনকমতি হয় না। উপস্থিত সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন ঃ ইয়া রাসূল্লাল্লাহ!  সকলে রোযাদারকে ইফতার করাবার সামর্থ রাখে না , প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এরশাদ করলেন ঃ শুধু একটি খেজুর বা একটু দুধ বা পানি দ্বারা ইফতার করানোই যথেষ্ট হবে। ৮। এই মাহে রমযানের প্রথম দশদিন রহমতের , দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাতের , তৃতীয় দশদিন দোযখ থেকে মুক্তি লাভের। ৯। যে ব্যক্তি তাঁর  অধিনস্ত লোকদের প্রতি সদয় ব্যবহার করে তার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। এই হাদীসটি সিয়াম সাধনা ও মাহে রমযানের সকল ক্ষেত্রে একটি মৌলিক দিক নির্দেশনা সম্বলিত। কুরআন নাজিলের মাস হল রমযান ঃ বিশ্ব  মানবের মুক্তির সনদ মহাগ্রন্থ  আলÑ কোনআন নাযিল হয়েছে এই পবিত্র মাসেই । এ মাসের সঙ্গে রয়েছে কোরআনের নিবিড় সর্ম্পক। কেননা হযরত জিব্রাইল (আ ঃ )  হযরত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে  প্রতি রমযানে সম্পূর্ণ কুরআন তেলাওয়াত করে শোনাতেন। অপর এক বর্ণনায় রয়েছে ঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই মাসে জিব্রাইল (আঃ ) কে সমগ্র কুরআন তেলাওয়াত করে শুনাতেন। শুধু তাই নয় , অন্যান্য আসমানী কিতাগুলোরও রমযানের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। যেমন রয়েছে কোরআনের ঃ ১।  রমযানের প্রথম কিংবা তৃতীয় দিনে নাযিল হয় হযরত ইব্রাহীম ( আ ঃ )  এর প্রতি তাঁর  সহীফা। ২। হযরত দাউদ ( আ ঃ )  এর প্রতি যাবূর কিতাব অবর্তীণ হয় এমাসেরই রাব কিংবা আঠার তারিখে। ৩। হযরত মুসা ( আ ঃ ) প্রতি তাওরাত নাযিল হয় এ মাসের ছয় তারিখে। ৪। এ মাসেরই বার কিংবা তের তারিখে ঈসা (আ ঃ) এর  প্রতি ইঞ্জিল  কিতাব নাযিল হয়। এজন্যই বিশেষভাবে এই মাহতœপূর্ণ মাসে কুরআনকে বিশুদ্ধভাবে তেলাওয়াত করার জন্য কঠোর অনুশীলনের মনোযোগী হতে হবে। কুরআনের মর্মর্থ উপলদ্ধির জন্য প্রয়াসী হতে হবে। (আদাবে যিন্দেগী পৃষ্ঠা : ১১৭ ) মাহে রমযানের করণীয় কাজগুলো ঃ রমযানুল মুবারকে সিয়াম সাধনরত অবস্থায় কতগুলো বিষয় রয়েছে করনীয় এবং কতগুলো বিষয় বয়েছে বর্জনীয় । করণীয় কর্তব্যগুলো নি¤œরুপ ঃ- ১। সিয়াম সাধনার নিয়ত করা । ২। সেহরী খেয়ে রোযা রাখার চেষ্টা করা। ৩। বিলম্ব না করে ইফতার করা ৪। বিশরাকাত তারবীহ্র নামাজ আদায় করা। ৫ । যথাসাধ্য বেশী বেশী দান করা । ৬। প্রচুর পরিমাণে কালেমা , ইসতিগফার ও দুরুদ পাঠকরা । ৭। বেশী বেশী দো’আ  করা । ৮। বেশী বেশী উমরী কাযা নামাজ আদায় করা। ৯। সমাজ কল্যাণ ও মানবতার সেবা তথা খেদমতে খালকে আতœনিয়োগ করা । ১০। হাত , পা , মুখ , চোখ কান ও  অন্তরকে পাপকর্ম থেকে সংযত রাখা। ১১। আল্লাহর কাছে জান্নাত কামনা করা এবং দোযখের আগুন থেকে পানাহার চাওয়া। মাহে রমযানের বর্জনীয় কাজগুলো ঃ ১। মিথ্যা , গীবত ও পরচর্চা সম্পপূরুপে পরিত্যাগ করা। ২। মানুষকে কষ্ট দেয়াসহ সর্বপ্রকার অকল্যাণ চিন্তা পরিহার করা। ৩। হারাম আহর্য থেকে দূরে থাকা। ৪। গান – বাজনাসহ যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত থাকা কেননা হাদীস শরীফের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে ঃ- অনেক রোযাদার এমন আছে , যাদের অনাহারের কষ্ট ছাড়া সিয়ামে কিছুই লাভ হয়না। আর আনেক মুসুল্লী এমন আছে, যাদের নিশি জাগরণের  কষ্ট ছাড়া নামাজে আর কিছুই লাভ হয়না । কাজেই সিয়ামের মূলকথাই হলো তাকওয়া । আর তক্ওয়ার অর্থই হলো গুনাহ থেকে বেচেঁ থাকার চেষ্ট করা। আর তা পুরোপুরি অর্জন করতে পারলেই সিয়াম সাধনা স্বার্থক বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহর আমাদরে  সকলকে  মাগফেরাত ও জাহান্নামরে আযাব থেকে নিস্কৃতি লাভ করে রহমতের  বারিধারায় ¯িœগ্ধ হওয়ার তাওফীক দান করুন।
লেখক পরিচিতি : হঃ মাওঃ মুফতি মুছা কালিমুল্লাহ খতিব, বাইতুল আকসা জামে মসজিদ
প্রিন্সিপাল , আতাউল্লাহ দারুল উলূম মাদ্রাসা , টঙ্গী