শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

মহান মে দিবসের পরিচিতি

“মে   দিবসের পটভূমিতে পোশাক শিল্পের অগ্রগতিতে বাংলাদেশ” ১লা মে, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। তাছাড়া এই দিনটি মহান মে দিবস নামেও পরিচিত। এই দিনটি সমগ্র বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন।   আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে পৃথিবীর বিভিন্নদেশে শ্রমজীবী মানুষ এবং শ্রমিক   সংগঠনসমূহ রাজপথে সংগঠিতভাবে মিছিল ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে দিবসটি পালন করে   থাকে। বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহনের মাধ্যমে বিশ্বের নিপীড়িত শোষিত শ্রমিকরা   তাদের দাবি-অধিকার মালিক শ্রেনীর নিকট তুলে ধরে। শ্রমিক দিবস আমাদের স্মরন  করিয়ে দেয় শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার এবং মালিক  শ্রমিক সম্পর্ক, দায়িত্ব ও  কর্তব্যের কথা। পুরাতন সভ্যতা থেকে শুরু করে যুগ থেকে যুগান্তরে আধুনিক  সভ্যতার নির্মাণে  শ্রমিকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের ঘামের প্রতিটি  ফোঁটায় নির্মাণ  হয়েছে সভ্যতার এক একটি দেয়াল। ১লা মে সারাবিশ্বে যে  আন্তর্জাতিক শ্রমিক  দিবস পালিত হয় তাও অর্জিত হয়েছে শ্রমিকদের বুকের তাজা  রক্ত বিসর্জনের মধ্য  দিয়ে। এই দিনটি ১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে  মার্কেটের শহীদ  শ্রমিকদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে পালিত হয়। সেদিন দৈনিক আট  ঘন্টা কাজের  দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটের সামনে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে  ঘিরে থাকা  পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ  শ্রমিকদের ওপর  গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক নিহত হয়।  দাবি আদায়ে  শ্রমিকদের সেই আত্মত্যাগকে স্মরণ করতেই ১লা মে বিশ্ব শ্রমিক  দিবস পালন করা  হয়। সারাবিশ্বের মত বাংলাদেশেও এই দিনটি যথাযথ গুরুত্ব ও  মর্যাদার সাথে পালন  করা হয়। এই দিনে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন  বিভিন্ন কর্মসূচি  গ্রহনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকে। স্বাধীন বাংলার  স্থপতি, স্বাধীনতার ঘোষক, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর  রহমান তার  জীবদ্দশায় খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ তথা শ্রমিকদের দাবি আদায়ের  জন্য কাজ  করে গেছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের শোষকদের কাছ থেকে শ্রমিকদের  ন্যায্য অধিকার  আদায়ের ব্যাপারে তিনি ছিলেন সর্বদা সোচ্চার। ১৯৭১ সালের ২৬  শে মার্চ  জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে ছাত্র,  শিক্ষক,  পেশাজীবী, সাধারণ জনতার সাথে লক্ষ লক্ষ শ্রমিক ভাইয়েরা সেই দিন  ঝাঁপিয়ে  পড়েছিল দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে। তাই স্বাধীন বাংলাদেশ অর্জনে   শ্রমিকদের আত্মত্যাগ ভুলবার নয়। বর্তমান সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা, দেশরতœ   জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বদা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শ্রমিকদের অধিকার   প্রতিষ্ঠায়, শ্রমিকদের ভাগ্যোন্নয়নে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালের   জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পর জননেত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের   ভাগ্যোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।  উদাহরনস্বরূপঃ ১। শ্রমজীবী  মানুষের অভিজ্ঞতা ও কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগানোর জন্য শ্রম আইন  সংশোধন করে  শ্রমিকদের অবসর গ্রহনের বয়স ৫৭ থেকে ৬০ বছরে উন্নীত। ২। শ্রম আইন ও  শ্রমনীতি প্রণয়ন, শিশুশ্রম নিরসনে জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি  প্রণয়ন। ৩।  বিজেএমসির ২৭ টি পাটকলের মধ্যে ২৩ টি পাটকল চালুর মাধ্যমে বেকার  শ্রমিকদের  কর্মসংস্থান সৃষ্টি। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে পোশাক  শিল্প। রপ্তানির  মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা ৮৫ ভাগই আসে পোশাক  শিল্প থেকে। এই  পোশাক শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ৫০ লক্ষ শ্রমিক  জড়িত যার ৩০ লক্ষ  শ্রমিকই নারী। ২০০৯ সালের জানুয়ারীতে দ্বিতীয় মেয়াদে  ক্ষমতা গ্রহনের পর  জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার রুগ্ন- মৃত প্রায় পোশাক  শিল্পকে করেছেন  উজ্জীবিত। পাশাপাশি দেশি বিদেশি অপশক্তির হাত থেকে পোশাক  শিল্পকে রক্ষায়  অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছেন। আর পোশাক শিল্পের ৫০ লক্ষ  শ্রমিকের ভবিষ্যত  নির্মানে জননেত্রী শেখ হাসিনা করে যাচ্ছেন নিরলস পরিশ্রম  আর নিরন্তর  চেষ্টা। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর জননেত্রী শেখ হাসিনা  পোশাকশিল্পের  শ্রমিকদের নূণ্যতম মজুরী ৫৩০০ টাকা নির্ধারন করেন। জননেত্রীর  এই  যুগান্তকারী পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছে পোশাক শিল্পের মালিক, পোশাক   শ্রমিক, অর্থনীতিবিদ তথা বাংলাদেশের সাধারণ জনগন। তাছাড়া পোশাক শিল্পে ৩০   লক্ষ নারীর নিরাপদ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে নারীর ক্ষমতায়ন,   নারীর কর্মক্ষেত্র ইত্যাদি। সরকারের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা ও হস্তক্ষেপের ফলে   বিগত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশ পোশাক শিল্প রপ্তানিতে এক নম্বর স্থান দখল করে   আছে। পোশাক শিল্পে এরূপ অর্জনের কারনে বিদেশি বড়, নামি-দামি পোশাক ক্রেতা   প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে আরও পোশাক কেনার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে,  যা  আমাদের অর্থনীতির জন্য বড় একটি আশীবার্দ। এর ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি  যেমন  হবে তেমনি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর হবে। জাতীয়  রপ্তানি উন্নয়নব্যুরোর তথ্যানুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে  অর্থাৎ  ২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পোশাক  শিল্পের  পণ্যের রপ্তানির মাধ্যমে আয় হয়েছে ১৬১৪ কোটি মার্কিন ডলার। এর  মধ্যে উভেন  পোশাক রপ্তানি থেকে এসেছে ৮২২ কোটি ৮৩ লক্ষ ডলার এবং নিট পোশাক  রপ্তানি  থেকে  এসেছে ৭৯১ কোটি ডলার যা আমাদের জন্য খুশির খবর হলেও  সাম্প্রতিক  সময়ের কিছু ঘটনা অর্থাৎ রানা প্লাজা ধস, তাজরীন ফ্যাশনে  অগ্নিকান্ড,  স্মার্ট গামের্ন্টেসে অগ্নিকান্ড আমাদের পোশাক শিল্পের  উন্নয়নের জন্য  হুমকিস্বরূপ। এসব ঘটনা বিশ্বের নামি-দামি ক্রেতা  প্রতিষ্ঠানের কাছে আবারও  শ্রমিকদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।  এতদসত্ত্বেও আমার প্রাণের  নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রানা প্লাজা ধসে আহত ও  নিহত শ্রমিকদের জন্য  নিজস্ব তহবিল থেকে ২৩ কোটি ৫৫ লক্ষ ৭২০ টাকা সাহায্য  প্রদান করেন। তাই  আমাদের পোশাক শিল্পের উন্নয়নকে সচল রাখতে কিছু বিষয়াবলির  উপর গুরুত্বারোপ  করা প্রয়োজন। যেমনঃ  ১। দেশি-বিদেশি অপশক্তির ক্ষেত্রে সজাগ দৃষ্টি রাখা।  ২। যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে শ্রমিক সংগঠন গঠনের লাইসেন্স প্রদান করা যাতে   করে কেউ বা কোন সংগঠন শ্রমিকের দাবি আদায়ের নামে আমাদের অগ্রসরমান পোশাক   শিল্পকে ধ্বংস করতে না পারে। ৩। শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি ও নিরাপত্তার  ক্ষেত্রে আরো বেশি গুরুত্বারোপ  করা। ৪। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের ক্ষেত্রে  আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
লেখকঃ ইঞ্জিনিয়ার ইমরান হোসেন পলিন বি.এস.সি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, এমবিএ (জাবি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, গাজীপুর মহানগর ছাত্রলীগ।