শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

গাজীপুরে বাল্যবিবাহ ও নারি নির্যাতন প্রতিরোধে কর্মশালা

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভাওয়াল সম্মেলন কক্ষে বুধবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব (মেজনিন) কর্মসূচীর আওতায় বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতন বিষয়ক কর্মশালা  অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মো: নূরুল ইসলাম। এসময় তিনি  বলেন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আইন, নৈতিকতা ও দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে বা অপরিণত বয়সে বিয়ে অত্যন্ত ভয়াবহ একটি সমস্যা যা জেন্ডারসমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টির মধ্যে ৬টি অর্জনের ক্ষেত্রেই বাল্যবিয়ে একটি অন্যতম বাধা। বাল্যবিয়ের কারনে ছেলে- মেয়ে উভয় শিশুরই মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় এবং এর পরিণতিতে শুধু শিশু বা অল্পবয়সী নারী নয় বরং ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো পরিবার। বাল্যবিবাহের প্রথম শিকার হয় শিশু, দ্বিতীয় শিকার নারী এবং তৃতীয় শিকার সমাজ। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আইন, নৈতিকতা ও দৃঢ় মানসিকতা নিয়ে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে নিকাহ্ রেজিস্ট্রার ও কাজীদের নিয়ে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিষ্ট মীর সামসুল আলমের সঞ্চালনায় কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন সিনিয়র সেক্টর স্পেশালিষ্ট সাঈদা নেওয়াজ পর্ণা। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হোসেন, জেলা রেজিস্ট্রার জিয়াউল হক, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সালমা জাহান, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক মো. শফিকুর রহমান তালুকদার, গাজীপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, জেলা নিকাহ রেজিস্টার সমিতির সভাপতি কাজী মো. শরীফ হোসেন, আল-হেরা জামে মসজিদের ইমাম মুফতি নিজামউদ্দীন, জেলা ব্র্যাক প্রতিনিধি প্রণব কুমার রায়, মেজনিন কর্মসূচির ঝর্ণা দাস, সাঈদা সোগরা ও মো: খালেকুজ্জামান প্রমূখ।
বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের হার ভয়াবহ, যা সমগ্র পৃথিবীতে চতুর্থ ও এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের ‘ইমপ্রুভিং চিলড্রেনস লাইভস, ট্রান্সফরমিং দ্য ফিউচার’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ি বাংলাদেশে প্রতি তিনটি বিয়ের দু’টিতেই কনের বিয়ের বয়স থাকে ১৮ বছর বা প্রাপ্তবয়সের নিচে। প্রতি পাঁচজন মেয়ের একজনের বিয়ে হয় ১৫ বছরের আগে যা প্রায় ১৮%। দেশের ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ২৯% বর্তমানে বিবাহিত। বাংলাদেশে ৮০ শতাংশ গরিব পরিবারের মধ্যে বাল্যবিবাহ হয়, ধনীদের মধ্যে যা ৫৩ শতাংশ।
বাল্যবিয়ে নারীর স্বাস্থ্য, ক্ষমতায়ন, সিদ্ধান্ত  গ্রহণ, অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত অপরিণত গর্ভধারণ, প্রজনন স্বাস্থ্য, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকি, ক্যান্সার ঝুঁকি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়ার হার বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ এই ক্ষতিকর সামাজিক প্রথা। যে কিশোরীকে পরিপূর্ণতা আসার আগেই বাল্যবিবাহের শিকার হতে হয়, তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিরাট হুমকির সম্মুখীন হয়। বাল্যবিয়ের শিকার কিশোরীদের শতকরা ২০ ভাগ ১৫ বছর বয়সের আগেই মা হয়। বাল্যবিয়ের কারণে শতকরা ৪৫ টি কম ওজন ও খর্বাকৃতির শিশুর জন্ম হচ্ছে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে অপরিণত মায়েদের শতকরা ৫ জন মৃত্যুঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, বাল্য বিবাহ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে গাজীপুর জেলার ১৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ সারাদেশে ১৩টি জেলার ৪০৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক, স্কুল ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য ও কমিউনিটির সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ করে ব্র্যাকের উদ্যোগে মেয়েদের জন্য নিরাপদ নাগরিকত্ব (মেজনিন) কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।  কর্মশালায় সরকারী কর্মকর্তা, কাজী, ইমাম, শিক্ষক, সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিসহ প্রায় ৭০ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন