শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

ডিসিসি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়ায় বিএনপিকে অভিনন্দন


॥ এম.এ. ফরিদ ॥

সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ পরিবেশে নির্বাচন হলে বিএনপি ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেবে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমদ গত শুক্রবার রাতে বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে সাংবাদিকদের তিনি বিষয়টি অবগত করেন। ডিসিসি নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেয়ার খবরে পুরো দেশবাসীর মতো আমার মনের মধ্যেও কিছুটা পুলক সৃষ্টি হয়েছে। কিছুটা স্বস্তির আমেজ লক্ষ করা যাচ্ছে সাধারন মানুষের মধ্যে। দেশবাসী কিছুদিনের জন্য হয়তো অবরোধ-হরতাল থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পেতে যাচ্ছে। অবশ্য এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা। ডিসিসি নির্বাচনে বিএনপি যদি অংশ গ্রহণ করে তবে চলমান আন্দোলনের বিষয়ে হয়তো দলটি কিছু একটা ভাবতে পারে বলে আমি মনে করি। বিএনপি একটি বড় দল। এবার ডিসিসি নির্বাচনে তাঁরা অংশ গ্রহণ করে হয়তো এর প্রমাণ রাখার চেষ্টা করবেন। তাছাড়া এটা একটা বড় সুযোগ সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা। বিএনপি ডিসিসি নির্বাচনকে উপলক্ষ করে নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করারও একটা সুযোগ পাবে বলেও আমি মনে করি। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলতে গেলে এখন অনেকটা নিস্ক্রিয় সময় অতিবাহিত করছে। বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজেও আন্দোলন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। জনগণ তাঁর জ্বালাও-পোঁড়াও কর্মসূচীকে প্রত্যাখান করেছে। বেগম জিয়ার রাজনীতি এখন অনেকাংশে জামায়াত-শিবির কেন্দ্রিক নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে তাঁর সহিংসতা ও নাশকতার কর্মসূচী আন্দোলন কোমায় চলে গেছে। ডিসিসি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার মাধ্যমে তিনি আবার কোমা থেকে ফিরে আসতে পারবেন বলে আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি। বিভিন্ন সূত্র থেকে যা জানতে পারলাম, সেটি হলো বিএনপির সঙ্গে জোট বাধা ছোট খাট দলগুলো ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে আগ্রহী। এ ব্যাপারে হয়তো তাদের ২০ দলীয় জোটের সভায় সিদ্ধান্ত গৃহিত হতে পারে। বিশ দলীয় জোট যদি নির্বাচনে অংশ নেয় তবে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটও পরিবর্তন হতে পারে। বিজ্ঞজনদের সঙ্গে কথা বলে যতটা বুঝা গেল তাঁরাও মনে করেন বিএনপি ডিসিসি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভঙ্গুর দলকে কিছুটা হলেও মেরামত করার ভালো সুযোগ পাবেন। আন্দোলন সবার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু অগণতান্ত্রিক আন্দোলন কারো কাম্য নয়। বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট গণতন্ত্র রক্ষার নামে বর্তমানে যে টানা কর্মসূচী পালন করে আসছে তা সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক বলে এদেশের কোটি মানুষের সঙ্গে আমিও একমত পোষণ করছি। শত শত সাধারন মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে পুঁড়িয়ে হত্যা করে, হাজার হাজার যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে এবং এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলে বেগম জিয়া কোন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন তা এদেশের মানুষ জানতে চায়। দেশের অর্থনীতির বারোটা বাজিয়ে আমাদের কোন সুখের গান তিনি শুনাতে চান তা জাতি তাঁর নিকট জানতে চায়। বেগম জিয়া যদি মনে করে থাকেন এ দেশের ভূখা-নাঙ্গা মানুষগুলো তাঁর বক্তব্য শুনে ঘুমিয়ে পড়বে আর তিনি ঘুমন্ত মানুষগুলোকে পাকিস্তানী কায়দায় মেরে ফেলবেন তবে তিনি ভুল করবেন। এ দেশের মানুষকে ঘুম পাড়ানি গান শুনিয়ে আর ঘুম পাড়ানো সম্ভব হবে না। আমরা আমাদের পবিত্র মাটির এক ইঞ্চিও ষড়যন্ত্রের জন্য বেগম জিয়া ও তাঁর দোসর জামায়াত-শিবিরকে বরাদ্দ দিব না। গত ৭৭/৭৮ দিনে বেগম জিয়া দেশের যে ক্ষতি করেছেন তাঁর হিসেব একদিন এদেশের জনগণ পাইপাই করে নিয়ে ছাড়বে। ১২৩ জন সাধারন মানুষকে পেট্রোল বোমা মেরে পুঁড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কি তাদের অপরাধ ছিল? তা আমার জানা নেই। তবে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে পেট্রোল বোমায় মারা যাওয়া লোকগুলোর অপরাধ ছিল কেন তাঁরা বেগম জিয়ার তথা কথিত হরতাল-অবরোধে ঘর থেকে বের হলো। ম্যাডাম খালেদা জিয়া আপনি হয়তো আপনার ওই পার্টি অফিসে বসে বসে খাবার খেতে পান কিন্তু যারা মারা গেছেন তাঁরা একদিন ঘরে বসে থাকলে তাদের স্ত্রী, সন্তান, বাবা, মাকে নিয়ে সেদিনটিতে উপোস থাকতে হতো। দীর্ঘ ৭৭ দিনেও আপনি আপনার কার্যালয় থেকে বের হওয়া তো দূরের কথা আপনি অফিসের বাইরে একটু উকি মেরেও দেখেননি যে দেশে কি ঘটছে। আপনার জন্য আপনার দলের নেতা কর্মীরা রাজকীয় খাবার রান্না করে নিয়ে আসে কিন্তু হতভাগ্য ওই পরিবারগুলোর জন্য কেউ তো আর রান্না করা খাবার নিয়ে আসে না। তাহলে তাঁরা কাজের জন্যে ঘর থেকে বের হবে এটাই তো স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে কেন তাদের দিনের পর দিন আপনি কষ্টে রাখবেন। আগে জানতাম নারী জাতি মায়ের জাতি। তাদের মন অত্যন্ত কোমল। কিন্তু আপনার মন এত পাথরের মতো কঠিন কেন? আমাদের কান্না কি আপনার হৃদয়কে এতটুকুও স্পর্শ করে না। আপনি তো আমাদের মতো ভূখা-নাঙ্গাদের কথা চিন্তা করেই রাজনীতি করেন। তবে কেন হিংসাতœক রাজনীতি করছেন? এদেশের জনগণ অনেক আগেই আপনার বর্তমান আন্দোলকে প্রত্যাখান করেছে। এদেশের বেশির ভাগ মানুষকে খেটে খেতে হয়। আমরা কাজ না করলে আমাদের পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা না খেয়ে থাকি। দয়া করে আমাদের আর দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দিবেন না। অনেক আগেই আপনি বর্তমান সহিংস রাজনীতি থেকে সরে আসতে পারতেন। আপনি আপনার জেদের কারণে তা করেননি। তাই এবার আর একটি সুযোগ এসেছে। জনগণের কাছাকাছি আসার জন্য ডিসিসি নির্বাচন একটি বিরাট মওকা বিএনপির জন্য। এ নির্বাচন হয়তো সরকার পরিবর্তনের নির্বাচন নয়। তবে এ নির্বাচনের মাধ্যমে আপনার পার্টির গ্রহণ যোগ্যতা প্রমাণ করার সুযোগ পাবেন। অনেক সূত্র অনেক তথ্য দিয়ে আপনার দলের বিভিন্ন পর্যায়ের চামুচরা আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। সকল বিভ্রান্তিকে পেছনে ফেলে আপনার নিজস্ব মতামতকে প্রাধান্য দিন। শুনেছি আপনার দলীয় ফোরাম আসন্ন ডিসিসি নির্বাচনের প্রার্থীও নাকি চুড়ান্ত করে ফেলেছে। আলহামদুলিল্লাহ। তাহলে আর চিন্তা কি? আমি তো মনে করি এ মুহুর্ত থেকে হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার বাস্তব সময় এটি আপনার জন্য। যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিন, দেখবেন তাঁরা আপনার সম্মান রাখবে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম দুটি গুরুত্বপূর্ণ মহানগর। এ দুটি মহানগরের ভোটারদের আকৃষ্ট করার জন্য দলের নেতা কর্মীদের মাঠে নামিয়ে দিন। আজ আমরা অত্যান্ত আনন্দিত। র্দীর্ঘ দিন পর বিএনপি একটি রাজনৈতিক দলের মতো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। এটি দেশের জন্য শুভ সংবাদ। আমরা হয়তো খুব সহসাই অস্বস্তি পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে যাচ্ছি। র্দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির পর এক পশলা বৃষ্টি যেমন মানুষকে স্বস্তি দেয় ঠিক বিএনপির বর্তমান চিন্তা চেতনাও মানুষের মধ্যে এক পশলা বৃষ্টির মতো স্বস্তি এনে দিয়েছে। ভিন্ন জনের ভিন্ন মত থাকতে পারে। তাঁর পরও বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাঁরা কোন পথে হাটবেন। সহিংসতার পথে নাকি নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতির পথে। তবে সহিংসতার পথ পরিহার করে নির্বচনমূখী হলে এ দেশের কোটি ভোটারের সঙ্গে আমিও বিএনপিকে অভিনন্দন জানাবো। বিএনপির শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং আগামী দিনে সুন্দর একটি বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে আসবে সে প্রত্যাশায় আজকের মতো আমার এ লেখার যবনিকা টানছি।