শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

শিক্ষার্থীদের জন্য ছোট গল্প

ব্যাতিক্রমী
সৈয়দ মোকছেদুল আলম
গাজীপুরের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রানী বিলাসমনি বালক উচ্চ বিদ্যালয় তখনও সরকারিকরণ হয়নি। আমি ৮ম শ্রেণির ছাত্র। প্রধান শিক্ষকÑ নূরুল ইসলাম (ভাওয়াল-রতœ) সযতেœ ছাত্রদের রতেœ পরিণত করতে সদা সচেষ্ট।
স্কুল জীবনে’ জীবনের লক্ষ্যÑ নিয়ে গদবাঁধা রচনা মুখস্ত করতে হতো। কেবল পরীক্ষার খাতায় নম্বর পাওয়ার জন্য। তাতে সবাই ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াÑ জীবনের লক্ষ্য বলে রচনা বই এর মুখস্ত করা বুলির মধ্যে সীমাবদ্ধ  শিক্ষা লাভ করেছিলাম। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এরকম করা যুক্তিযুক্ত মনে হলেও নবম শ্রেণিতে ভর্তির সময় সব গুলিয়ে যেতো। নবম শ্রেণিতে যখন সাইন্স, আর্টস বা কমার্স বিভাগে ভর্তির প্রশ্ন দেখা দিতো; তখন বিপত্তি হতো। বরাবরের মতো সবাইকেই তখন সাইন্সকে-ই প্রাধান্য দিতে দেখা যেতো। ভাল-মন্দ-মাঝারি মানের সব শিক্ষার্থী-ই সাইন্সে ভর্তির স্বপ্ন দেখতো।
অংকে আমার সব সময়ই দুর্বলতা (খারাপ অবস্থা) ছিল। বিশেষ করে অংক চর্চায় পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখালেখির ঝক্কি বড় বিরক্তিকর ও পীড়াদায়ক মনে হতো। কথাবার্তা-চলাফেরায় প্রায় শিক্ষকেরই চোখে অন্যদের থেকে আলাদা করে নিজের অবস্থান তৈরি করতে পেরছিলাম নানা কারণে। হাস্য-কৌতুক সৃষ্টি করতে পারার কারণেই হয়তো তা সম্ভব হয়েছিল। পড়ালেখা ও স্কুল ফাঁকির কুখ্যাতিও ছিল। আবার বার্ষিক পরীক্ষায় ভালভাবে পাশ মার্ক উঠিয়ে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের কাছে ‘বিস্ময়কর-পদার্থ’Ñ হিসেবে সুখ্যাতিও ছিল।
স্কুল জীবনের রচনায় যাই লিখে থাকি, কলেজে এসে নিজেকে সবসময় ‘বিস্ময়কর-পদার্থ’Ñ করে রাখার স্বপ্নই মনে পোষতাম। গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাসে অতি আসক্তি ছিল। বাংলায় কোন বিষয়েই ‘পড়া-শুনায়’ সমস্যা হতো না। ইংরেজি গল্প-কবিতার জন্য মেট্রিকুলেট-বাবার সাহায্য নিতাম। পরীক্ষায় এর ভাল ফলাফল পেতাম। বাংলা ও ইংরেজীতে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে নম্বর অনেক বেশি পেতাম। অংকে ফল মোটেও ভাল হতো না। জ্যামিতিতে ৩০ -এর মধ্যে ২৫-২৬ পেয়ে শিক্ষকের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। এর সাথে সরল, চলিত ও ঐকিক নিয়মের দুই একটি অংক সঠিকভাবে করতে পারতাম।
টেনে টেনে ৪০/৪৫ হয়ে যেতো। এ্যালজাবরা নিয়ে খু-উ-ব-ই এলোমেলো অবস্থা ছিল।
অন্যদিকে, ফার্স্ট-সেকেন্ড বয়দের বিষয়টি ভিন্ন রকম! অংকে কীভাবে লেটার মার্ক আসবে তা নিয়ে ২৪ ঘন্টা টেনসন ছিল তাদের। অষ্টম শ্রেণিতে অংক স্যার ষান্মাসিক পরীক্ষার খাতা বিলি করার সময় আমার নাম ধরে ডাকলেন। বললেন, “তুই মাত্র ২৬ পেয়েছিস। তবে সবার জন্য একটা উদাহরণ সৃষ্টি করেছিস। তুই শুধু জ্যামিতিতেই ৩০ -এর মধ্যে ২৬ পেয়েছিস। পাটিগনিত, এ্যালজাবরার কোন প্রশ্নের উত্তর দিস নাই। অন্যরা পাটিগনিত-এ্যালজাবরায় ভাল করেছে। কিন্তু জ্যামিতিতে খারাপ করায় লেটার মার্ক উঠেনি অল্পের জন্য। কাজেই, অংকে লেটার পেতে হলে জ্যামিতিতেও মনযোগ দিতে হবে। জ্যামিতিতে ২৬ পাওয়া সম্ভব হলে লেটার-মার্ক পাওয়া সহজ হয়ে যাবে।”
অংকে মাত্র ২৬ পাওয়া ‘ফেলটু-ছাত্র’ হিসেবে সেদিন সাহাবুদ্দীন স্যার আমাকে কোন তিরস্কার করেন নি। বরং কেমন একটা স্নেহমাখা-সমীহকরা ভাব নিয়ে খাতাটা হাতে দিলেন।
এই এক ঘটনায় সহপাঠীদের কাছে ব্যতিক্রমী হিসেবে বিশেষ পরিচিতি অর্জন করেছিলাম।
লেখক ঃ সাংবাদিক, গল্পকার
মোবা: ০১৭২৬-২০ ৫৩ ০২