শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

রক্ষক যদি ভক্ষক হয়

গাজীপুর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বাণিজ্য


॥ এম.এ. ফরিদ ॥
রক্ষক যদি ভক্ষক হয়ে যায় তবে আমাদের মতো সাধারন মানুষ যাবে কোথায়। আমরা কার কাছে বিচার দিলে ওই ভক্ষকদের বিচার পাবো। ক্ষেতের ফসল রক্ষা করার জন্য আমরা বেড়া দিয়ে থাকি, এখন বেড়ায় যদি ক্ষেতের ফসল নষ্ট করে ফেলে তবে সে বেড়া রেখে আমাদের লাভ কি? অনেকে হয়তো ভাবছেন কেন আমি এতো ভনিতা করছি। কি বলতে চাইছি তা কেন বলছি না। আমি কথাগুলো প্রথমেই লিখতে পারতাম। লেখার প্রারম্ভে একটু খোঁচা না দিলে পাঠক মহল নড়েচড়ে বসে না। আমাদের দেশের প্রধান যে সমস্যাটি এখন আমাদের চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে সেটি হলো মাদক। মাদকের ভয়াবহতা আমাদের প্রতিটি সচেতন নাগরিককে ভাবিয়ে তুলেছে। দিন দিন এর প্রসার ও ব্যবহার বেড়েই চলেছে। আগে মাদক রাখঢাক ভাবে বেচাকেনা করা হলেও এখন প্রকাশ্যেই পাওয়া যাচ্ছে। হাত বাড়ালেই এটি সংগ্রহ করা যায়। আমাদের গাজীপুরে এর বেচাকেনার ব্যাপকতা এত বেড়ে গেছে যে, এমন কোনো মহল্লা কিংবা পাড়া নেই যেখানে এটি পাওয়া যাবে না। সব মহল্লা ও পাড়াতে মাদক পাওয়া যায়। চাল, ডাল, তেলের মতো অনেক মুদি দোকানের ভেতরে এখন মাদক বিক্রয় করা হচ্ছে। আমরা যারা সন্তানের পিতা-মাতা হয়েছি, তাঁরা রয়েছি মহাসংকটে। কখন যে আমার ছেলেটি নেশায় আক্রান্ত হয়েছে তা বোঝার কোন উপায় নেই। আমরা যারা আশায় বুক বেধে থাকি তাঁরা অনেক আশা নিয়েই বর্তমান পুলিশ সুপারকে স্বাগত জানিয়ে ছিলাম। তাঁর অনেক সুনাম ও কীর্তি আমাদের জানা রয়েছে। তিনি আমাদের গাজীপুরকে মাদক মুক্ত করবেন এমন প্রত্যাশা ছিল আমার মতো অনেক চর্মযুক্ত মানবের। বিশাল শো-ডাউন করেছিল আমাদের মাননীয় পুলিশ সুপার মহোদয়। আমার মতো নগন্য একজন ব্যক্তিরও ভাগ্য হয়েছিল সেই মাদক বিরোধী র‌্যালীতে অংশ নেয়ার। সফেদ সাদা গেঞ্জি পরে র‌্যালীতে অংশ নেয়ার সময় পুলিশ সুপার মহোদয়ের জন্য মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম, আল্লাহ তুমি আমাদের পুলিশ সুপারকে দীর্ঘজীবি করে দাও। এই গেঞ্জির মতো সাদা মন করে দাও। তিনি যেন গাজীপুরবাসীকে মাদকমুক্ত গাজীপুর উপহার দেন সে তৌফিক দান করো। তিনি অবশ্য এখনও অবিচল রয়েছেন তাঁর প্রতিজ্ঞা পালনে। কিন্তু তাঁর যে কর্মী বাহিনী রয়েছে হয়তো এদের মধ্যে দু-একজন রয়েছেন যারা অসৎ। এরা হয়তো মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে ফায়দা লুটছে, টাকা আয়ের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন। পুলিশ সুপার মহোদয়কে অনুরোধ জানাবো এদের ব্যপারে চোখ, কান খোলা রেখে কাজ করার জন্য। আপনার মতো চৌকস অফিসারের সঙ্গে গাজীপুরবাসী রয়েছে। কোনো বাঁধা আপনার কর্মপন্থাকে বাঁধাগ্রস্থ করতে পারবে না। তবে দুঃখ হয় সরকারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে। যাদের নাম সরকার দিয়েছে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। পুলিশের অনেক কাজ করতে হয়। বেশির ভাগ সময় দেশের শান্তি শৃংঙ্খলা বজায় রাখার কাজেই ব্যস্ত থাকে আমাদের পুলিশ বাহিনী। কিন্তু মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধীদপ্তরের যারা সদস্য রয়েছেন সরকার শুধু তাদের দায়িত্ব দিয়েছেন মাদকের প্রসার রোধে কাজ করার জন্য। শুধু প্রসার রোধেই নয় এ সংস্থাটির দায়িত্ব মাদক বিক্রেতাদের ধরে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করা। বলতে পারেন মাদক নির্মুলেই যাদের প্রধান কাজ। কিন্তু সংস্থাটি মাদক নির্মুলের পরিবর্তে যা করছে তা শুনলে রীতিমতো আপনাকে শিউরে তুলবে। আমি যে তথ্যগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরবো তা বেশির ভাগ বিক্রেতাদের মুখের কথা। আমার নিজস্ব সোর্স এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে সম্পৃত্তদের নিকট থেকে তথ্য পেয়ে এ লেখাটি সম্পন্ন করতে আমার সহজ হয়েছে। মাদক নির্মুলে আমরা যাদের ওপর নির্ভর করি তাঁরাই যদি মাসোহার গ্রহণ করার মাধ্যমে মাদক বিক্রেতাদের উৎসাহিত করে তবে পুলিশ, র‌্যাব কি করে শতভাগ সফল হবে। বিশ্বস্ত ও শতভাগ সাফল্য অর্জনে সক্ষম সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে প্রতিমাসে গাজীপুর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মাসোহারা বাবদ আয় ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা। যারা মোটা দাগে মাসোহারা দিয়ে মাদকের ব্যবসা করে আসছে তাঁর কিছু অংশ আজ তুলে ধরছি। জয়দেবপুর নিয়ামত সড়কের বাবুর মা ও তাঁর মেয়ে সাজু প্রতিমাসে ৮০ হাজার  টাকা, ইয়াবা ব্যবসায়ী স্বপন ৪০ হাজার টাকা, ফেন্সী ব্যবসায়ী জনি প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা, নায়ের আলীর স্ত্রী ১০ হাজার টাকা, পূবাইল এলাকার জোসনা ৪০ হাজার টাকা, হোসনারা কলেজ গেইট এলাকার ৪০ হাজার টাকা, বাসেদ ২৮ হাজার টাকা, নিপা ৪০ হাজার টাকা, হারু সেনপাড়া ২০ হাজার টাকা, উলুখোলা করান বাজার এলাকার লিটন ১০ হাজার টাকা, মাঝুখান এলাকার জাহাঙ্গীর ৪০ হাজার টাকা, টঙ্গী হাজীর মাজার এলাকার কালী ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, দেওড়া এলাকার কুখ্যাত রাজিয়া ৪০ হাজার টাকা, মিলগেইট এলাকার আসিয়া পাগলী ২০ হাজার টাকা, ব্যাংক মাঠ এলাকার নার্গিস, দেলু, খালেক, বকুল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা, কাশিমপুর সাড়াপাড়া এলাকার দেবু ও জাহানারা ৭০ হাজার টাকা, কুমার খাদা এলাকার ওবায়দুল ২০ হাজার টাকা, হাতিয়াব এলাকার  অনিল ১০ হাজার টাকা, ঠাকুর চালা মৌচাক ও কালামহর থেকে ৩০ হাজার টাকা, ফুলবাড়িয়া এলাকার খেতাচুরা এলাকার মোতালেব ৩০ হাজার টাকা, শ্রীপুর কাওরাইদ তপন ও রশিদের বউ ২০ হাজার টাকা, মাইঝপাড়া ও কুশাইদ থেকে ৩০ হাজার টাকা, বরমী বাজারের আসকরের ছেলে কবির ২০ হাজার টাকা, লালদী ও জৈনাতলা ৪০ হাজার টাকা প্রতি মাসে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর গাজীপুর সার্কেলকে দিতে হয়। আমাদের এখন গভীরভাবে ভাবতে হবে। এই যদি হয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের আসল চরিত্র তবে আমরা কি করে এদের ওপর নির্ভর করবো। কি বিভৎস, কি ভয়ানক অবস্থায় আমরা রয়েছি একবার ভেবে দেখেছেন কি? আমরা যদি সংবাদপত্রে নিউজ করি তবে তাদের ভাগ্য আরো সুপ্রসন্ন হয়। তাঁরা বলেন, সাংবাদিকরা নিউজ করছে ধামাচাপা দিতে হবে। তাই এবার টাকা বাড়াতে হবে। আজ আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে কতটা অসহায় একটু ভেবে দেখুন। মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষা করতে এখন আমাদের সন্তানদের ঘরে শৃংঙ্খল বন্দি করে রাখা ছাড়া আর কি কোনো উপায় আছে? অনেকে বলতে পারেন এসব দেখেও নাকি সাংবাদিকরা পত্রিকায় তা প্রকাশ করে না। আমি বলতে চাই অনেকে না জেনে এমন মন্তব্য করে থাকেন। আমাদের এক সাংবাদিক ভাই তাঁর পত্রিকায় মাদক নিয়ে বিস্তারিত কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। আমি যাকে ভাই বলেই জানি। কারণ সাংবাদিকতার শুরু থেকেই সে আমাকে ভাই বলেই ডাকতো। আপনারা অনেকেই তাকে চিনেন। বায়েজিদ ভাই। তিনি দীর্ঘদিন যাবত সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। তাঁর ছেলে জসিম। যাকে আমি ৭/৮ বছর বয়স থেকেই দেখছি। বাবার পত্রিকার কাজে সেই ছোটবেলা থেকেই সহযোগীতা করে আসছে। এখন সে অনেক বড় হয়েছে। আমরাই তাকে বিয়ে করিয়েছি। সব কিছু ঠিকঠাক চলছিল। পত্রিকার কম্পোজ, ম্যাকাপ ও মেইল পাঠানোর কাজগুলো আমিসহ আমার অনেক সহকর্মী তাকে দিয়েই করে থাকি। বাহিরের জগৎ সম্পর্কে অনেক কিছুই তাঁর অজানা ছিল। সব কিছুই ভালোভাবেই চলতে থাকে। গত বছরের ১০ আগষ্ট সন্ধ্যায় আমার সেই ভাতিজাটি আমার প্রাণ প্রিয় সংগঠন গাজীপুর জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের নির্বাচনের ফরম তৈরী করে সামন্তপুরস্থ বাসায় চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আমার নিকট থেকে বিদায় নেয়। আমি ও আমার সাংবাদিক বন্ধুরা মিলে ওই সময় মুন্সিপাড়াস্থ সাংবাদিক বায়েজিদ ভাইয়ের অফিসে বসে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করছিলাম। ভাতিজা জসিম চলে যাবার ১০ মিনিটের মধ্যে খবর পেলাম কাজীবাড়ি রোডে কেন্দ্রীয় কবরস্থানের কাছে জসিমকে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীরা কুঁপিয়েছে। ঘটনার সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। ঘটনা শুনে হতভম্ব হয়ে যাই। আমার সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যাই। গিয়ে দেখি জসিমকে যেভাবে কোঁপানো হয়েছে তা কোনো মানুষ মানুষকে করতে পারে না। বাবা সাংবাদিক। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সংবাদ লেখায় ছেলেকে এভাবে কোঁপানো হয়েছে। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে ঢাকার একটি প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে অবশেষে কিছুটা সুস্থ্য হয়ে সে আমাদের মাঝে ফিরে আসে। এখনও সে অসুস্থ্য। বর্তমানে সে ছাপাখানার কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছে। কিন্তু সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ীরা পুনরায় তাকে জীবন নাশের হুমকী দিয়েছে। এখন আমরা যারা অসহায়, আমরা যাবো কোথায়? কে আমাদের শান্তনার বাণী শুনাবে? তাহলে কি সাংবাদিকরা মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে না? আমার তো মনে হয় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহযোগীতার কারণেই মাদক ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সম্পর্কে আজকে যা তুলে ধরা হলো তা খুবই সংক্ষিপ্ত। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে সম্মানিত গাজীপুরবাসীকে ৪/৫ দিন অপেক্ষায় থাকতে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।