শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

বৈশাখ মানে পান্তা ইলিশ, গরীবের চোখে সর্ষে ফুল


॥ এম.এ. ফরিদ ॥

নববর্ষ বাঙালি জাতির উৎসবের একটি দিন। নববর্ষের উৎসব প্রতিটি দেশে নিজস্ব আঙ্গিকে পালন করা হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ দেশিয় সংস্কৃতিতে নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলো আমরা আমাদের দেশে উদযাপন করে থাকি। পুরোনোকে পিছনে ফেলে, সকল গ্লানিকে ঝেড়ে ফেলে এই নববর্ষকে কেন্দ্র করে আমরা নতুন করে আমাদের জীবনকে শুরু করি। আমরা বাঙালিরা যুগে যুগে বাংলা নববর্ষকে সব সময় একটু আলাদাভাবে পালন করে থাকি। নববর্ষের অনুষ্ঠানগুলো হিন্দু, মুসলিম, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীগণ মিলে আমরা এক সঙ্গে উপভোগ করে থাকি। আমরা বাঙালিরা একটি কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি সেটি হলো, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আমরা আমাদের প্রতিটি উৎসবের আনন্দকে আমাদের মাঝে ভাগাভাগি করে নেই। নববর্ষ সম্রাট আকবরের সময় ফসলের খাজনা উঠানোর সুবিধার্থে চালু করা হয়। অর্থাৎ নতুন বছরের প্রথম দিন গননা শুরু করা হয়। আজও আমরা বাঙালিরা সম্রাট আকবরের প্রবর্তিত বাংলাসনকেই নববর্ষ হিসেবে পালন করে আসছি। এই দিনটিতে আমরা রংবেরংয়ের পোশাক পরে থাকি। নিজেদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করি। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মিষ্টান্ন ভোজের আয়োজন করা হয়। প্রকৃত ব্যবসায়ীরা হালখাতা অনুষ্ঠান করে থাকে। ব্যবসায়ীরা তাদের দেনা-পাওনা পরিশোধ করে মিষ্টি মুখ করে যার যার বাড়ি ফিরে আসে। আবহমানকাল থেকেই আমরা এই বৈশাখ মাসে আমাদের কৃষ্টি-কালচার মানুষের মধ্যে তুলে ধরি। নববর্ষকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পালাগান, বাউলগানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখন গ্রামাঞ্চলের মতো শহরগুলোতেও বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। তবে গত বিশ বছর ধরে আমাদের মধ্যে কিছু অপসংস্কৃতি দেখা দিয়েছে। সেটি হলো বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে আমরা পান্তা-ইলিশের আয়োজন করে থাকি। আমাদের ভাবখানা এমন যেন পান্তা-ইলিশ না খেলে আমাদের বৈশাখ উদযাপন করা হবেই না। বৈশাখ এলেই আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে পালন করার নামে উল্টো অপসংস্কৃতির জন্ম দিয়ে থাকি। এ সময়ে ইলিশের দাম সাধারনের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। এক কেজি ইলিশের দাম হাঁকা হয় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। সম্প্রতি এক হালি ইলিশ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রয় করা হয়। বৈশাখকে কেন্দ্র করে এই হঠকারিতা আমাদের দেশের কৃষ্টি কিংবা কালচার হতে পারে না বরং এটি অপসংস্কৃতি। আমাদের দেশিয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করবার লক্ষে এটি একটি ভীনদেশি চক্রান্ত বলে আমি মনে করি। আমরা বৈশাখ এলেই আমাদের কাপড়ের মধ্যেও বৈচিত্র আনার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা কেন ভুলে যাই এটি একটি মধ্যম আয়ের দেশ। আমরা এখনও এ দেশের হত দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য অনেক কিছুই করতে পারিনি। দারিদ্রতা এখনও আমাদের অনেক পিড়া দেয়। এমন অনেক পরিবার রয়েছে যাদের দুবেলা-দু-মুঠো ভাত পেট ভরে খেতে পারে না। আমরা ওই ভুখা নাঙ্গা মানুষগুলোর কথা না ভেবে কি করে পান্তা-ইলিশ নিয়ে মাতামাতি করতে পারি। আমাদের ঐতিহ্য কি এতই নির্মম যে, কেউ খাবে আর কেউ খাবে না। মোটেও নয়। আমরা বাঙালিরা আবেগ প্রবণ জাতি। আমরা সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নিতে পারি। আমরা সেই জাতি যারা আমাদের ঐতিহ্যকে অন্তরে ধারণ করে দীর্ঘ কণ্টকময় পথ পাড়ি দিতে পারি। আমাদের রয়েছে সাহস ও শক্তি। আমরা ভাষার জন্য জীবন দিতে পারি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় দাপটের সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছে। বাঙালি জাতি এমন একটি জাতি যারা মাথা উঁচু করে বাঁচতে শিখেছে। আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের উজ্জল নক্ষত্র। তাঁর জীবনী থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি। কিভাবে মানুষকে ভালোবাসতে হয় তা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন কিভাবে আমরা আমাদের সুখ-দুঃখকে ভাগাভাগি করে একত্রে বাস করতে পারি। তাই আমি সর্বস্তরের ঐতিহ্যরক্ষার দাবিদার মানুষগুলোর প্রতি আনুরোধ জানাবো আমাদের সংস্কৃতিকে বিকৃত করবেন না। বৈশাখে ইলিশ পান্তার কথা বাদ দিয়ে বৈশাখের আনন্দকে গরীব মানুষগুলোর সঙ্গে কাটিয়ে দেয়ার রেওয়াজ তৈরী করুন। দেখেবেন সবাই আমরা ভালো থাকবো।