শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

২৯ একরের অধিক সরকারী বনের জমি ব্যক্তি নামে দলিল রেজিষ্ট্রির অভিযোগ

গাজীপুরে দ্বিতীয় যুগ্ম সাব-রেজিষ্ট্রার আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম পলাশের কান্ড

স্টাফ রিপোর্টার : জাল পর্চা ও জাল দলিল মূলে গাজীপুর সদর ২য় যুগ্ম সাব-রেজিষ্ট্রার কর্তৃক ২৯ একরের অধিক সরকারি বনের জমি অনৈতিক ভাবে ব্যক্তি মালিকানায় রেজিষ্ট্রি করে দেয়া হয়েছে মর্মে গুরুত্বর খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গাজীপুরে তোলপাড় চলছে। ২য় যুগ্ম সাব-রেজিষ্ট্রার আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম পলাশ, জনৈক জাফর উল্লাহর সাথে আতাত করে বড় অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ওই কাজ করেছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
প্রকাশ- গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার অন্তর্গত কাশিমপুরের সারদা গঞ্জ গ্রামের মৃত নসিমুদ্দিন মাতাব্বরের ছেলে, মোঃ জাফর উল্লাহ, আনোয়ারা বেগম গংদের নিকট থেকে স্থানীয় বড় ভবানীপুর মৌজার ২৯ একর আড়াই শতাংশ জমি ‘আমমোক্তার’ নামা দলিল (নং-১২১৩০, তাং- ২৬/০৬/২০০২্ইং) মূলে গ্রহিতা হয়ে নিজ পুত্র মোঃ আবু সাইয়িদে মিয়ার নামে হেবা নামা ঘোষণা পত্র দলিল (নং-১০৯২২, তাং- ০২/১১/২০১৪ইং) করে দেন। যা কোন ভাবেই আইনসিদ্ধ নয়।
দলিলটিতে তারা জমির মূল্য দেখিয়েছেন- সাড়ে ৫০ কোটি টাকা। যা থেকে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র সাড়ে ৪শত টাকা।
আমমোক্তার দলিল হচ্ছে, জমি দেখাশোনার করার প্রতিনিধি মাত্র। এর মাধ্যমে কেউ জমির প্রকৃত মালিক হতে পারেনা। কিংবা জমি কাউকে দান ও হেবা দিতে পারেনা। অথচ জাফর উল্লাহ নিজ ছেলেকে ওই জমি হেবানামা ঘোষণা পত্র দলিল করে দিয়েছেন। আর তাতে বিরাট অংকের উৎকোচের বিনিময়ে সর্বরকম সহযোগিতা করেছেন- সাব-রেজিষ্ট্রার আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম পলাশ।
এ দলিল সম্পাদনের ক্ষেত্রে তিনি কোন আইনের তোয়াক্কা করেননি। করেছেন পকেট ভর্তি অবৈধ টাকার খেয়াল।
২০১৪ সালের ২ নভেম্বর সাব-রেজিষ্ট্রার আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম কর্তৃক রেজিষ্ট্রিকৃত ওই দলিলের খবর প্রচার হওয়ার ফলে, সচেতন মহলের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে যে, তিনি না জানি, অনুরূপ আরো কতো অকাম করে রেখেছে। কাজেই, গাজীপুরে তার কর্মকালের সবগুলো দলিল খতিয়ে দেখা দরকার। এতে বেরিয়ে আসবে, সরকারের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে তিনি সরকারের আর কতো সর্বনাশ করেছেন।
বিভিন্ন সূত্র মতে জানাযায়- জয়দেবপুর থানা এলাকার কাশিমপুরের বড় ভবানীপুর মৌজার আর.এস ৪১ নং খতিয়ানের ২৯ একর আড়াই শতাংশ জমি ১ নং খাস খতিয়ানে সরকারের গেজেট ভূক্ত বনভূমি। যা সংরক্ষণ করা সরকারী কর্মকর্তাসহ প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য। সম্পত্তিটির সি.এস ও এস.এ দাগ গুলো হচ্ছে- ০৩, ৪৬, ২৩৫, ২৪৯ ও ২২১, আর.এস দাগ ২১, ৬৫, ৮৬, ২৫০ ও ৬৪৪। এখানে মোট জমির পরিমাণ ছিলো ৩৮ একর ৭০ শতাংশ। যার মধ্যে থেকে গাজীপুর সদর ২য় যুগ্ম সাব-রেজিষ্ট্রার ২৯ একর আড়াই শতাংশ জমি উৎকোচের বিনিময়ে হেবা ঘোষণা পত্র দলিল রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছেন।
রাজধানী ঢাকার শ্যামলীর বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ হোসেন ভূঁইয়ার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, মেয়ে আফরোজা বেগম, মাহফুজা বেগম, বাদিবা বেগম, ছেলে মোঃ বদিউল হোসেন ও সাবির হোসেন ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে মালিক সেজে ২০০২ সালের ২৬ জুন তারিখে কাশিমপুরের সারদা গঞ্জের মৃত নসিমুদ্দিন মাহব্বরের ছেলে জাফর উল্লাহ কে আমমোক্তার হিসেবে নিয়োগ করেন জমি দেখভালের জন্য। জাফর উল্লাহ চিটিংবাজি করে ১ যুগ পর নষ্ট কর্মকর্তা গাজীপুর সদরের ২য় যুগ্ম সাব-রেজিষ্ট্রার আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম পলাশ কে উৎকোচ খাইয়ে ওই দেখভালকৃত জমি নিজ পুত্র মোঃ আবু সাইয়িদ মিয়ার নামে হেবা ঘোষণা পত্র দলিল করে দেয়।
সরকারী বিধি অনুসারে বনের সরকারি গেজেট ভূক্ত জমি রেজিষ্ট্রি করা যায়না এবং আমমোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে জমি অন্যের নিকট বিক্রি করা গেলেও নিজ সন্তান ও স্ত্রীকে হেবা কিংবা দান করা যায় না। এক্ষেত্রে এই কর্মকর্তা আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম সাব-রেজিষ্ট্রার সাহেব দুটি আইনকেই বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করেছেন।
ধূর্ত জাফর উল্লাহ গাজীপুর সদর উপজেলা ২য় যুগ্ম সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সম্পাদিত বা রেজিষ্ট্রিকৃত হেবা ঘোষণা পত্র ১০৯২২/১৪ দলিলে একটি জোত নম্বর (১৭৭৫) উল্লেখ করেছেন। এ বিষয়ে সংশ্লীষ্ট কাশিমপুর ভূমি অফিসে খোঁজ করে ওই জোতের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
তবে কাশিমপুর ভূমি অফিসের ভূমি সহকারি কর্মকর্তা দ্বীপক কুমার সাহা জানান- বড় ভবানীপুর মৌজার সর্বশেষ জোত নম্বর হচ্ছে ১১৬২। এর পরে আর কোন জোত খোলা হয়নি। যদি কেই তার পরের জোত নম্বর দেখায়, তার দায়-দায়িত্ব আমরা জানিনা।
সূত্রমতে আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম পলাশের কর্মস্থল ঢাকার দোহারে। সপ্তাহে ২ দিন বুধ ও বৃহস্পতিবার তিনি ডেপুটেশনে গাজীপুর সদর ২য় যুগ্ম সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে সাব-রেজিষ্ট্রারের দায়িত্ব পালন করেন। যেহেতু পলাশ সপ্তাহে দু’দিন গাজীপুরে অফিস করেন, সেহেতু তার কাগজ পত্র দেখভাল করেন- ওই অফিসের করণিক নুরুল ইসলাম নুরু। কাজেই তার দ্বারাই সাব-রেজিষ্ট্রার পার্টি ধরেন আর উৎকোচ গ্রহণ করেন। নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে গ্রাহক হয়রানীর ব্যপক অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রমতে আরো জানাযায়- সাব-রেজিষ্ট্রার নিজেকে আইনমন্ত্রীর পি.এস এর বন্ধু পরিচয় প্রদান করে হাক-ডাক মারেন। তিনি বুঝান তার হাত অনেক লম্বা। তিনি যা খুশি করবেন, তাকে কেউ কিছু করতে পারবেন না।
আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেন না। জমির মূল্য অনুযায়ী তিনি উৎকোচের হার বেধে দিয়েছেন।
উৎকোচ পেলে তার কাছে দলিল রেজিষ্ট্রি করার জন্য আর কোন বৈধ কাগজপত্রের দরকার হয়না। এজলাশে তিনি কম বসেন। কাজ সারেন নিজ খাস কামরায়। যার দরজা থাকে সিটকিনি আটকা। সেখানে উৎকোচ গ্রহণে সুবিধা বেশী। এক পার্টির কাজ শেষ হলে আরেক পার্টি বা গ্রাহক প্রবেশের অনুমতি বা সুযোগ পান।
উল্লেখ্য- আবুল কালাম মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম পলাশ প্রতি বুধবার অফিস করার কথা থাকলেও গতকাল তিনি অফিস করেননি। ফলে বহুসংখ্যক গ্রাহক ওই কারণে হয়রানীর শিকার হয়েছেন।