শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

কাপাসিয়ায় দু’টি প্রতিষ্ঠানের বর্জ্যে ৫শ বিঘা কৃষি জমিতে চাষাবাদ বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুর থেকে ঃ কাপাসিয়া উপজেলা কপালেশ^র গ্রামে প্রোটিন হাউজ ও কেন্দুয়াব গ্রামে ডায়মন্ড নামে ১৫০ বিঘা জমিতে ২২ লক্ষ মুরগী পালনের জন্য নির্মিত দ’ুটি প্রতিষ্ঠানের অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ট আশপাশের ১০-১২টি গ্রামের হাজার হাজার নিরিহ মানুষ। প্রতিষ্ঠান দুটির বর্জ্যে ও নিষ্কাশিত পানিতে অন্তত পাঁচ শতাধিক বিঘা কৃষি জমি এখন চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে বিনষ্ট হচ্ছে খাল-বিল, নদী-নালার মাছ। দূর্গন্ধে অতিষ্ট এলাকাবাসী ও হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। প্রতিষ্ঠানের জেনারেটরের বিকট শব্দে লেখা পড়া বন্ধের উপক্রম হচ্ছে আশ পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের। 
সরে জমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাপাসিয়া উপজেলা থেকে ১৬ কিঃ মিঃ দূরে সিংহশ্রী ইউনিয়নের কপালেশ^র গ্রামে ৫০ বিঘা জমিতে নির্মিত প্রোটিন হাউজ নামে প্রতিষ্ঠানের আশপাশের জমিতে রাতের আধারে বর্জ্য এবং নিষ্কাশিত পানি ফেলায় জমিগুলোতে এখন আর কোনো ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছেনা। অপরদিকে পাশের আমুরী নদী ও আঙ্গুয়ারী বিলে এসব বর্জ্য ও নিষ্কাশিত পানি ফেলে নদী ও বিলের এবং আশপাশের পুকুরের মাছ মড়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এসব বিষয়ে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো ধরনের প্রতিকার পাচ্ছেন না গ্রামবাসি। আর এসব দূষিত বর্জ্য ও নিষ্কাশিত পানির দূর্গন্ধে অনেকেই এখন গ্রাম ছাড়া। শুধু তাই নয়, আশপাশের ভূমিতে কারখানার বর্জ্য ও নিষ্কাশিত পানি ফেলে জমি চাষাবাদের অনুপোযোগী বানিয়ে এবং জমিতে মাটি ফেলে নিজেদের দখলে নেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে প্রতিষ্ঠান দুটি। দুই প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও নিস্কাশিত পানি আশপাশের গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ায় গ্রামে বসবাস করার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ অপরিকল্পিত ভাবে জনবসতি প্রত্যন্ত গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে এই দুটি বৃহৎ পোল্ট্রি খামার। দিন যতই যাচ্ছে ততই প্রতিষ্ঠান দুটির অন্যায় অত্যাচার যেন বেড়েই চলছে। এ থেকে পরিত্রান পেতে গ্রামবাসির মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। বর্জ্য ও নিষ্কাশিত পানিতে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় কোমলমতি শিশুরা পড়েছে বিপাকে। আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান করতে অসুবিধা পোহাতে হয়। প্রোটিন হাউজের ২০ গজ দক্ষিণে কপালেশ^ আইডিয়াল কিন্ডারগার্টেন স্কুল, তার পাশে রয়েছে কপালেশ^র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কপালেশ^র উচ্চ বিদ্যালয়, নামিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নামিলা ফাজিল মাদরাসা, বীর উজুলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বীর উজুলী উচ্চ বিদ্যালয়, লোহাদী উচ্চ বিদ্যালয়, কেন্দুয়াব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অসুবিধা হচ্ছে। কৃষি জমি ভরাট করায় বৃষ্টি পানি ও প্রতিষ্ঠানের নিষ্কাশিত পানিতে এখন স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এই খামারে ৭ লক্ষ মুরগী পালন করা যায়। 
কপালেশ^র গ্রামের আ. কাদিরের ছেলে লিটন প্রধান জানায়, ২০০৯ সালে প্রোটিন হাউজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের এমডি তাজুল ইসলামের নিকট তার বাবা ও কয়েক জন ১৩ বিঘা জমি বিক্রয় করে। এই জমির পর আরো একজনের কাছ থেকে আর একটু জমি কেনেন ওই প্রতিষ্ঠানটি। পরে গড়ে তোলেন প্রোটিন হাউজ নামের মুরগীর খামার। গত ৩ বছর আগে প্রতিষ্ঠানের সামনে থাকা তাদের দুই বিঘা জমিতে প্রথমে অল্প কিছু বর্জ্য রাতের আধারে ফেলা হয়। পরে আরেক রাতে ওই জমিতে নিষ্কাশিত পানি ফেলা হয়। এক পর্যায়ে আ. কাদিরকে প্রস্তাব দেয়া হয় জমিটুকু প্রোটিন হাউজের কাছে বিক্রি করতে। বিক্রিতে রাজী না হওয়ায় কয়েকদিন পরই রাতের আধারে ওই জমির চারপাশে মাটি কেটে পুকুর বানিয়ে দেয়। একইভাবে দখলে নেয় পাশের নজরুল ইসলামের ২ বিঘা জমি, আ. রশিদের ১ বিঘা জমি, মফিজ উদ্দিনের ২ বিঘা , সফিউদ্দিনের ২ বিঘা, তমিজ উদ্দিনের ৩ বিঘা জমি বেদখল করে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি। এসব ঘটনায় প্রতিবাদ করলেই শুরু হয় অন্যায় অত্যাচার, নির্যাতন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় এসব করছে বলে জানায় গ্রামবাসী। বর্তমানে প্রোটিন হাউজে জমির পরিমান প্রায় ৫০ বিঘা। এলাকার কৃষক ইলিয়াছ, জহিরুল ইসলাম, নুজরুল ইসলাম, ডা. সমশের আলী, সাখাওয়াত হোসেন, তমিজ উদ্দিন মাস্টার, নবি হোসেন, মোখলেছুর রহমান, হেলাল মাষ্টার, আ. কাদির, আ. রশিদ, লিটন প্রধান, নজরুল ইসলাম, সফিউদ্দিন, আঃ করিম,আবু বক্কর সিদ্দিক, কফিল উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, মোতালিব মাষ্টার, তাজুল ইসলাম, বীরমুক্তিযোদ্ধা তাজ উদ্দিন মাষ্টার,মকবুল হোসেন, ইসমাইল মাষ্টার, আমিনুল ইসলামসহ শতাধিক কৃষকের জমিতে চাষাবাদ করা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রতিষ্ঠানের এহেন কার্যক্রমে অতিষ্ট গ্রামবাসি কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অপর দিকে একই মালিক গত ৩ বৎসর পূর্বে পাশর্^বর্তী কেন্দুয়াব গ্রামে  প্রায় ১০০ বিঘা জমিতে ১৫ লক্ষ মুরগী পালনের জন্য বৃহৎ ডায়মন্ড নামে আরও একটি প্রোল্ট্রি খামার একইভাবে গড়ে তোলে। গ্রামের সাধারণ মানুষ জমিতে দিতে অনাগ্রাহ প্রকাশ করলে রাতের আধারে কারখানার শ্রমিক দিয়ে ওই বাড়িগুলোতে ডাকাতির ঘটনা ঘটায় বলে অভিযোগ করেন গ্রামবাসি। শুধু তাই নয় এসব প্রত্যন্ত গ্রামে ডাকাতি নামক ঘটনাগুলোর সাথে ডায়মন্ড কারখানার শ্রমিকগণ জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যাঞ্চেলর ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, প্রোটিন হাউজের দূষিত বর্জ্যগুলো শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে মানবদেহের স্কীনের নানা সমস্যা হতে পারে। চর্মরোগ, এ্যাগজিমা, চুলকানি, দানা দানা গোটাসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কারখানার দূষিত বর্জ্য ও নিষ্কাশিত পানি মানবদেহে দীর্ঘ সময় লাগলে শরীরের বিভিন্ন স্থানে গা হতে পারে। আলসার এমনকি ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে।
প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক মীর আলীমুজ্জামান (জামান) সকল অভিযোগে অস্বীকার করে বলেন, এই গুলোর কোন সত্যতা নেই ।
কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুল হক জানান, আমি অভিযোগ পেয়েছি, সরে জমিনে গিয়ে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার আশিষ কুমার কর জানান, পোল্ট্রি খামারের নিষ্কাশিত পানি ও বর্জ্য প্রতিনিয়ত মাটিতে ফেললে মাটির মধ্যে নিথেন গ্যাসের সৃষ্টি হয়। মিথেন গ্যাস মাটির শিকর নষ্ট করে ফেলে। আর এ কারণেই ওইসব ফসলী জমিতে কোনো ধরনের ফসল ফলানো সম্ভব হয়না।