শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

কাপাসিয়ায় বাল্য বিয়ের হিড়িক ঃ নারী শিক্ষা ব্যাহত গার্ল পাওয়ার প্রকল্প, এনজিও এবং মহিলা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

শাকিল হাসান, কাপাসিয়া : গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ১১ ইউনিয়নের সর্বত্র বাল্য বিয়ের রিতিমত  হিড়িক চলছে। প্রতি দিন কোথাও না কোথাও বাল্য বিয়ের খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে শুক্রবার একাধিক বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটে থাকে। কিছুতেই থামছে না বাল্য বিবাহ। সম্প্রতি কাপাসিয়ায় বেশ কয়েকটি বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিন্ত মহিলা কর্মকর্তা ও এনজিওদের এ ব্যাপারে যেন কোন মাথা ব্যাথা নেই। উপজেলার সদর ইউনিয়নে পাবুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী রুমা, কুহিনূর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী তানজিলা, সিংহশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী খাদিজা বাল্য বিবাহের শিকার হন। স্থানীয় লোকজন এসব বাল্য বিবাহ বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, এনজিও গুলোর নিকট বার বার অভিযোগ করলেও তাদের পক্ষ থেকে রহস্যজনক কারনে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার, নিকাহ্ রেজিষ্টারগন কার্যকর কোন ভূমিকা নিচ্ছে না।  অভিযোগ রয়েছে, বয়স বাড়িয়ে বাল্য বিবাহ দেয়ার ব্যাপারে তাদের যোগ-সাজস রয়েছে।
বাল্য বিয়ে রোধে যে সব এনজিও সংগঠন কাজ করছে তাদের চরম উদাসীনতার ফলে দিন দিন বাল্য বিয়ের ঘটনা বেড়েই চলেছে। বাল্য বিয়ে বন্ধের ব্যাপারে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন আক্তার কোন প্রকার তৎপরতা ও ভূমিকা পালন না করায় সচেতন মহলে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার ছুটির দিন গুলিতে বাল্য বিবাহ্ বেশী হয়। কিন্তু এই সব ছুটির দিন গুলিতে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নাসরিন আক্তারকে কাপাসিয়া ষ্টেশনে পাওয়া যায় না। তিনি ঢাকা থেকে এসে অফিস করেন। প্রায় সময়ই আসেন না, যে দিন আসেন দেরীতে এসে আগেই চলে যান। নানা অজুহাতে ঢাকা-গাজীপুরে কাজের কথা বলে নিয়মিত তিনি অফিস ফাঁিক দিচ্ছেন বলে তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন যাবত অভিযোগ রয়েছে। মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা হওয়া সত্বেও নারী ও শিশু নির্যাতন, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ্ রোধ, যৌতুক বন্ধে পদক্ষেপ, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে তার কোন কার্যক্রম দেখা যায় না। ভুক্তভোগিরা মহিলা কর্মকর্তার অফিসে এসে তাকে পায়নি বলে অভিযোগ করেন। আদালত কর্তৃক প্রেরিত নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন মহিলা কর্মকর্তা সময় মত না দিয়ে গড়িমসি করায় এলাকার লোকজন প্রতিনিয়তই হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। উপজেলার সরসপুর গ্রামের ভূক্তভোগি মনির হোসেন অভিযোগে জানান, মহিলা কর্মকর্তাকে অফিসে এসে পাওয়া যায় না। তদন্ত প্রতিবেদন দিতে তিনি কালক্ষেপন করেন। প্রতিদিন অফিসে এসে তাকে না পেয়ে তারা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এব্যাপারে উপজেলা মহিলা কর্মকর্তাও কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাল্য বিবাহ হলে আমার কি করার আছে ? এলাকা থেকে যদি কেউ স্বেচ্ছায় আমাকে জানায়, তাহলে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো। ষ্টেশনে থাকার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।    
এদিকে বাল্য বিবাহ্ প্রতিরোধে জাতীয় মহিলা সংস্থা, ব্র্যাক সামাজিক ক্ষমতায়ণ কর্মসূচি, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, গার্ল পাওয়ার প্রজেক্ট সহ অনেক এনজিও কাপাসিয়ায় কাজ করছে। একাধিক এনজিও’র স্থানীয় শাখা অফিস থাকলেও এ ব্যাপারে তাদের তেমন কোন ভূমিকা নাই। বিশেষ করে গার্ল পাওয়ার প্রজেক্ট বাল্য বিবাহ্ প্রতিরোধ ও নারীর প্রকি সহিংসতা রোধের নামে দেশ-বিদেশ থেকে মোটা অংকের অর্থ এনে এ বিষয়ে কোন কাজ করছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বছরে দু’এক বার নামে মাত্র গুটি কয়েক লোক নিয়ে দায়সারা ভাবে সভা, সমাবেশ, সেমিনার, ওয়ার্কশপের আয়োজন করে ভূয়া ও ভুতুড়ে ভাউচার তৈরী করে টাকা আতœসাৎ করলেও এসব দেখার যেন কেউ নেই। গার্ল পাওয়ার প্রজেক্টের কাপাসিয়া উপজেলা টেকনিক্যাল অফিসার সফিকুল ইসলাম মনগড়া মত যাচ্ছে তাই করে বেড়াচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি বাজেটের অর্থ আত্মসাতের লক্ষে সংশ্লিষ্টদের কাউকে না জানিয়ে গোপনে প্রোগ্রাম দেখিয়ে মোটা অংকের টাকার ভাউচার দিচ্ছে। এ ব্যাপারে গার্ল পাওয়ারের সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশনের কাপাসিয়া উপজেলা সেক্রেটারী নুরুল আমীন সিকদার জানান, গার্ল পাওয়ারের কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে জনসচেতনতা মূলক কর্মসূচি প্রশিক্ষন, গণ নাটক, কনভেনশন, সেলাই প্রশিক্ষণ, টাস্কফোর্স কমিটি গঠন, শিশু সু-রক্ষা কমিটি গঠন, মেয়েদের কারাতে প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও এ ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন ভূমিকা নেই। ফলে দীর্ঘ দিন যাবত গার্ল পাওয়ার প্রকল্প কাপাসিয়ায় কাজ করলেও বাল্য বিবাহ বন্ধে কার্যকর কোন উন্নয়ন ও অগ্রগতি নেই। তারা কাপাসিয়া উপজেলার তরগাঁও, কাপাসিয়া সদর ও দূর্গাপুর এই ৩ টি ইউনিয়নকে বাল্য বিবাহ মুক্ত করার ঘোষনা দিলেও তা বাস্তবায়নে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না। গার্ল পাওয়ার প্রকল্পের সকল কর্মকান্ড সম্পর্কে স্থানীয় সাংবাদিকদের সকল প্রকার তথ্য প্রদান করার কথা থাকলেও তা করছেন না বলে সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন। তারাগঞ্জ স্কুল এন্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শামসুল হুদা লিটন জানান, কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রীরা বাল্য বিয়ের শিকার হয়ে শিক্ষা জীবনের ইতি টানছে। বাল্য বিয়ের কারনে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে শত শত ছাত্রী অকালেই শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে পড়ছে। এ বাল্য বিয়ের প্রবনতার কারনে নারী শিক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। স্থানীয় মহিলা বিষয়ক অফিস ও এনজিও গুলো  বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন কাজই করছেন না। উপরন্ত এসব অফিস দেশ ও বিদেশ থেকে নারী ও শিশু রক্ষার নামে কোটি কোটি টাকা এনে লুটপাট করছে। কাপাসিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক এফ এম কামাল হোসেন ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, কাপাসিয়ায় এনজিও গুলো ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সহ সংশ্লিষ্টরা বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে দায়সারা ভাবে লোক দেখানো কাজ করছে। জনগনের সম্পৃক্ত ছাড়া বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ সম্ভব নয়। অথচ এনজিও গুলো জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কোন ভূমিকা রাখছেনা। স্থানীয় এনজিওদের উদাসীনতার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের।