শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

শ্রীপুরে বিএনপি’র অভিভাবকহীন আন্দোলন

কোন কর্মসূচিতে নেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা

আলমগীর হোসাইন, (শ্রীপুর) গাজীপুর : গত ৫ জানুয়ারী বিএনপি চেয়ারপার্সন ও ২০ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এরপর থেকে সারাদেশে একযোগে শুরু হয় অবরোধ। অবরোধের পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে পালিত হয় হরতালসহ আলাদা আলাদা কর্মসূচি। কিন্তু ব্যতিক্রম গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি। অবরোধ হরতালে প্রকাশ্যে আন্দোলন করার কথা থাকলেও রাস্তায় পিকেটিং, মিছিল সমাবেশ করতে দেখা যাচ্ছেনা সাত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের। যা হচ্ছে তা হলো চোরাগোপ্তা হামলা-নাশকতা। অবরোধের শুরুর দিকে উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তা ও সিএন্ডবি এলাকায় অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল হয়েছে। অথচ এ উপজেলায় রয়েছে বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য, ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব’র) যুগ্ন মহাসচিব, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্যসহ সাতজন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
তারা হলেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য পীরজাদা মাওলানা এস এম রুহুল আমীন, ডক্টর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব’র) যুগ্ন মহাসচিব ডাঃ এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ সফিকুল ইসলাম আকন্দ, গাজীপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ন সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য ছাত্রনেতা সাখাওয়াত হোসেন সবুজ, শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ্ব শাহজাহান ফকির, সহ-সভাপতি ও রাজাবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান কুতুব উদ্দিন আহমেদ এবং শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার ফজলুল করিম মন্ডল জুয়েল। প্রকাশ্যে কর্মসূচিতে নেই গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-ভাওয়ালগড়-মির্জাপুর) সংসদীয় আসনের বিএনপির ওইসব মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। নির্বাচন ঘনিয়ে আসলে দৌড়ঝাঁপ বাড়ানো এসব নেতা এখন কোথায় তা নিয়ে নেতা-কর্মীদের রয়েছে নানান অভিযোগ।
তাছাড়া মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ উপজেলা পর্যায়ের অন্যান্য সিনিয়র নেতাদেরও মাঠে না পেয়ে আন্দোলনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন মধ্যম ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। এ অবস্থায় আগামী দিনে শ্রীপুরে আন্দোলন কর্মসূচী কিভাবে সফল করা যাবে তা নিয়ে চিন্তিত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। রাজপথের রাজনীতিতে বেশ সক্রিয় থাকলেও সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোতে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি’র তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা যদি হিংসা-বিভেদ ভুলে নিজ নিজ এলাকায় আন্দোলনের তত্ত্বাবধান করতেন তবে দলের কর্মসূচিতে জনসম্পৃক্ততা বাড়তো কয়েকগুণ এবং কর্মীরাও উৎসাহিত হতো অনেক। শ্রমিকদল ও ছাত্রদলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিজ নিজ আয়োজনে কেন্দ্র ঘোষীত কার্যক্রম থেমে থেমে দেখা গেলেও মাঠে নেই যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, কৃষকদলসহ বিএনপির অন্য সংগঠনগুলো। স্থানীয় রাজনীতিতে রয়েছে নানা সমীকরণ। নেতারা কেন মাঠে নেই এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের মধ্যে। দলের অনেক নেতাকর্মীর অভিযোগ মামলা পরিচালনায় নেতারা কোনোরকম সহযোগিতা করছেন না।
বিএনপির উপজেলা কমিটির সাথে ইউনিয়নগুলোর সমন্বয়হীনতাকেও আন্দোলনের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকেই। বিচ্ছিন্ন ঘটনায় পার্কিং করা গাড়িতে আগুন ও চলন্ত ট্রেনে পেট্রল বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে শ্রীপুরে। এসব ঘটছে চোরাগোপ্তাভাবে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা যাবার পথে গাজীপুরের প্রবেশদ্বার শ্রীপুর। তাই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুরের মাওনা অংশ অবরোধের কর্মসূচিতে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হলেও কোথাও প্রকাশ্যে কোনো পিকেটিং নেই নেতাকর্মীদের। শ্রীপুর বিএনপির অভিভাবক দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য পীরজাদা মাওলানা রুহুল আমীন অসুস্থতার কারনে প্রকাশ্যে এবার মাঠে না থাকলেও বিগত অন্দোলনগুলোতে তিনি ছিলেন সরব। অসুস্থ সত্বেও তিনি নেপথ্যে দলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ভূমিকা রাখছেন বলে মন্তব্য করছেন দলের চার ভাগের এক অংশের নেতাকর্মীরা। তাছাড়া উপজেলার বিভিন্ন বিয়ে, সুন্নতে খাৎনা ও সামাজিক অনুষ্ঠানে নিজের উপস্থিতির মাধ্যমেও নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করছেন।   
সাম্প্রতিক অবরোধ-হরতালে মামলা ও হয়রানীর শিকার দলের নেতাকর্মীদের সাথে সমন্বয় হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ সফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, সকল নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগযোগ হচ্ছে। যতটুকু সম্ভব দলের অন্যান্য নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে মামলায় অভিযুক্তদের জামিনের ব্যবস্থা করছি এবং শ্রীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মহিদুল ইসলাম নয়নকে জামিনে মুক্ত করেছি।
গাজীপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ন সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা সাখাওয়াত হোসেন সবুজ বলেন, উপজেলা থেকে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদর সাথে যতটুকু সম্ভব শান্তিপুর্ণ আন্দোলন কর্মসূচী পালনের জন্য পরামর্শ দিচ্ছি এবং নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। যারা গ্রেফতার হচ্ছে বিভিন্ন মাধ্যমে তাদেরকে সহযোগীতা করছি এবং অন্যান্য নেতাকর্মীদের জামিনের ব্যাপারে আইনী সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলছি।    
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্রীপুর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রদলের এক নেতা এ প্রতিনিধিকে জানান, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি শাহজাহান ফকিরকে ঘোষীত কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালনের বিষয়ে ফোন দিলে তিনি বলেন তোমরা কর্মসূচী পালন কর। আমি শীতের জন্য উঠতে পারতেছিনা।
শ্রীপুর উপজেলার অভিভাবকহীন আন্দোলনের পরিণতি কোনদিকে তা নিয়ে যথেষ্ট ক্ষোভ এখানকার নেতাকর্মীদের। এদিকে মামলা হামলার প্রতিবাদে শ্রীপুর উপজেলায় দলীয় কর্মসূচীগুলোতে উপজেলা বিএনপির ছিল না কোনো প্রত্যক্ষ সমর্থন। এমনকি নেতাকর্মীরাও অবরোধ-হরতালের দিনগুলোতে কোনো ব্যানারে পিকেটিং করেনি।
শ্রীপুর উপজেলার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক। গাজীপুর-৩ সংসদীয় আসনে বিএনপি’র ৭জন মনোনয়ন প্রত্যাশী থাকলেও মহাসড়কে কর্মসূচী পালনে মাঝে মাঝেই তৎপর মাওনা আঞ্চলিক এলাকার নেতাকর্মীরা। গত ৩০ দিনের অবরোধ-হরতালের আন্দোলনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের স্ব স্ব উদ্যোগে তৎপরতা থাকলেও মনোনয়ন প্রত্যাশী ওই ৭ জনের কাউকে কোনো কর্মসূচিতে বা মাঠে দেখা যায়নি। শ্রীপুর উপজেলা জুড়ে যখন নেতাদের এই নিষ্ক্রিয়তা, সেখানে মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মীরা হতাশ। তৃণমূলের কর্মীরা এতোটাই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন যে, এই মুহূর্তে নেতাদের সমালোচনা করতেও পিছপা হচ্ছেন না তারা। আন্দোলন কর্মসূচিতে বরাবার গাজীপুরের শ্রীপুর আলোচনায় থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম। অবরোধের শুরুতে শ্রীপুরে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কিছু তৎপরতা দেখা গেলেও পরবর্তীতে মামলায় আসামী হওয়ায় তাদের আর দেখা যায়নি। এমনকি গত সপ্তাহের হরতালেও চোখে পড়েনি উপজেলা বিএনপির কোনো পিকেটিং বা মিছিল।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতাকর্মীরা জানান, মনোয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে ডাঃ এস এম রফিকুল ইসলাম বাচ্চুকে বিভিন্ন সময় রাজধানীতে দলের পেশাজীবী, মানববন্ধন এবং গোলটেবিল বৈঠকের কর্মসূচীতে ইলেক্ট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়াতে দেখা বা পাওয়া গেলেও নিজ নির্বাচনী এলাকায় আন্দোলনের কোনো কর্মসূচীতে দেখা যায় না। কুতুব উদ্দিন আহমেদ রাজধানীর পান্থপথে নিজের টাইলস্ ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়া ব্যরিষ্টার ফজলুল করিম মন্ডল জুয়েল বছরের অর্ধেক সময় থাকনে দেশের বাহিরে। সাবেক ছাত্রনেতা ও গাজীপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ন সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সবুজ স্ব-পরিবারে থাকেন জেলা শহর গাজীপুরে। অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা শ্রীপুরে অবস্থান করলেও তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজপথে না থাকার অভিযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের। 
এ ব্যাপারে শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব শাহাজাহন ফকির জানান, শ্রীপুরের মানুষ সবসময় শান্তিপুর্ণ পরিবেশে আন্দোলনমুখী। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দলের ঘোষীত কর্মসূচি পালিত হয়েছে এবং হচ্ছে। অঙ্গ সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ উপজেলার অসংখ্য নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এই কারণে বড় কর্মসূচি পালন করা যাচ্ছে না। তাছাড়া আমদের গনতান্ত্রিক অধিকার পালন করতে বাধা দিচ্ছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। অন্দোলন করতে গেলেই অহেতুক নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে।