শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

কলাম

খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার না করে সরকার ভুল করেছে

॥ এম.এ. ফরিদ ॥

কথিত অবরোধের ২৯ দিন অতিবাহিত করছি আমরা। বিএনপি-জামায়াত জোট পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবার লক্ষে সারা দেশে নাশকতা সৃষ্টির মাধ্যমে এদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাচ্ছে। চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে মানুষের মনে ভীতি সৃষ্টি করা হচ্ছে। পেট্রোল বোমা মেরে নীরিহ সাধারণ মানুষকে পুঁড়িয়ে হত্যা করাসহ প্রায় হাজার খানেক যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট গণতন্ত্রের নামে যে সন্ত্রাসতন্ত্র চালাচ্ছে তা থেকে এদেশের সাধারণ মানুষ পরিত্রাণ পেতে চায়। আগুনে পুড়ে মরে যাওয়া পরিবারগুলো এ পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তরনের জন্য সরকারকে আরো কঠোর হতে অনুরোধ জানিয়েছে। প্রিয় দেশবাসী আপনারা নিশ্চয় অবগত আছেন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে। যিনি কি না ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এর বাড়ি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিলেন। ক্যান্টনমেন্টের মতো একটি স্পর্শকাতর স্থানে থেকেও তিনি ওই বাসা থেকে দেশ বিরোধী নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিলেন। সরকার তাঁর এহেন অপকর্ম সম্পর্কে গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে জানতে পারে। তাছাড়া অবৈধভাবে দখল করে রাখা বাড়িটি ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অধীনে ছিল। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বাড়িটি ছেড়ে দিতে বললে তিনি তা মানতে রাজী ছিলেন না। একরকম গোঁ ধরে বসে রইলেন বেগম জিয়া। পরবর্তীতে চাপ থেকেই তিনি বাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ওই বাড়ি থেকে কি পরিমাণ আসবাবপত্রসহ জিনিসপত্র পাওয়া গেছে তা দেশবাসী ইতোমধ্যে মিডিয়ার বদৌলতে জেনে গেছেন। তা লিখে পুরাবৃত্তি করতে চাই না। দেশবাসী আপনাদের হয়তো মনে আছে একটি বাড়িকে কেন্দ্র করে তিনি কদিন হরতাল ডেকেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া তাঁর দু সন্তানকে দুর্নীতির মামলা থেকে বাঁচাতে বহু হরতাল পালন করেছেন। যা জনগণের অধিকার আদায়ের সাথে কোনোভাবেই সংশ্লিষ্টতা ছিল না। বেগম জিয়া কখনই এ দেশের সাধারণ মানুষের কথা ভাবেন না। যে কোনো মূল্যে তিনি ক্ষমতায় যেতে চান। এ জন্য হাজার হাজার মানুষের জীবনাবসান ঘটাতে হলেও তিনি তা ঘটাতে প্রস্তুত। যা বর্তমানে তিনি ঘটাচ্ছেন। প্রিয় পাঠক আপনাদের হয়তো জানা আছে, তাঁর নিজ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো যখন মালয়েশিয়ায় মারা যান তখন এ দেশে অবরোধ হরতাল এর মতো কর্মসূচী চলছিল। আমরা সাধারণ মানুষ মনে করেছিলাম ম্যাডাম হয়তো শোকে ম্যুজ্যমান। তিনি হয়তো তাঁর ছেলে মারা যাওয়ার ঘটনায় হরতাল অবরোধ প্রত্যাহার করবেন অথবা স্থগিত করবেন। কিন্তু আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। আমরা যা দেখলাম তা আমার মতো আপনারাও দেখেছেন। কোকোর মৃত্যু সংবাদ শুনে তাঁর দলের সিনিয়র নেতাসহ আতি, পাতি সব নেতা-কর্মীরা তাঁকে সান্তনা দিতে গুলশান অফিসে আসতে দেখা গেল। সবাই সান্তনা দিয়ে যাচ্ছে। ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহম্মদসহ সিনিয়র নেতারা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে বের হয়ে হাস্যজ্জল মুখে মিডিয়ার সামনে সাক্ষাতকার দিচ্ছে। তাঁরা মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসীকে জানালেন, ম্যাডাম অসুস্থ্য শোকে ম্যুজ্যমান। তিনি অবরোধ চালিয়ে যেতে বলেছেন। অবাক কান্ড। আমরা হতবাক হয়ে গেলাম। চেপে গেলাম। কষ্ট পাওয়া থেকে নিজেকে সামলে নিলাম। তাঁরপরও আশায় বুক বাধলাম। ভাবলাম যেদিন কোকোর লাশ দেশে আনা হবে সেদিন হয়তো অবরোধ প্রত্যাহার করা হতে পারে। হায়রে বাংলার হতভাগা মানুষ। হায়রে আমার হতভাগা মা-মাটি দেশ। কঠিন হৃদয়ের ভয়ঙ্কর নারী বেগম খালেদা জিয়া। অবরোধের মধ্যেই ছেলের লাশ গ্রহণ করলেন। আমরা দেখলাম সন্তান হারা এক মায়ের কান্না। ওই কান্নার চিত্র টিভিতে দেখে আমার চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়ল। কেনইবা পড়বে না। আমরা যে বাঙালি। আমরা আবেগ প্রবণ জাতি। প্রিয় দেশবাসী আমি একথাগুলো এ জন্যই বললাম যে, আমাদের বিএনপি নেত্রী কত কঠিন, কত নির্মম তাই বোঝাতে চেয়েছি। ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়েও তিনি হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করলেন না। উল্টো তিনি কতটা শিষ্টাচারহীন একজন নারী তা আপনারা যারা টিভি দেখেন তাঁরা বলতে পারবেন। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেত্রীর ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তাঁকে সমবেদনা জানাতে তাঁর অফিসে ছুটে যান। প্রায় ৯ মিনিট একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর অফিসের গেইটে অবস্থান করলেন অথচ তিনি দেখা করা তো দূরের কথা তাঁকে ভেতরে বসতে দেয়ার মতো শিষ্টাচার টুকুও দেখানো হলো না। সারা দেশের মানুষ ওই ঘটনাকে ছি-ছি করেছে। ধিক্কার জানিয়েছে। কতটা নোংরা রাজনীতির জননী বেগম খালেদা জিয়া তা দেশবাসীর নিকট পরিষ্কার হয়ে গেছে। সুন্দরের অন্তরালে লুকিয়ে রয়েছে হিংস্রতা। হরতাল-অবরোধের এই জঘন্য কর্মসূচীতে বলী হয়েছে আমাদের দেশের নিরীহ পরিবারের ৪৫ জন ব্যক্তি। প্রায় হাজার খানেক গাড়িতে আগুন ও ভাংচুর চালানো হয়েছে। ৭ দফায় রেলে নাশকতা করা হয়েছে। এত সহিংসতা করে তিনি কি সুখ পাচ্ছেন। এত মানুষকে হত্যা করেও কি তাঁর অন্তর আতœায় মায়া জাগে না। কি অপরাধ ছিল এই নিরীহ ৪৫ জন ব্যক্তির। যাদের পেট্রোল বোমা মেরে হত্যা করা হলো। বেগম জিয়া ওই পরিবারগুলোকে কি সান্তনা দেবেন। দেশ যখন এগিয়ে যেতে থাকে  তখন তিনি দেশকে পিছিয়ে নিতে নাশকতার পথ বেছে নেন। আমরা তো ভালোই ছিলাম। তবে কেন আমাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। বেগম জিয়ার জেনে রাখা উচিত এ দেশকে পাকিস্তান বানানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। জামায়াত-শিবিরকে দিয়ে নাশকতা করিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন কোনো দিন পূরণ হবে বলে মনে হয় না। সরকারের বর্তমান কৌশল নিয়ে জনমনে যতেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। তাঁরাইবা কেন ২৯ দিনে বিএনপির এই দুর্বল কর্মসূচী মোকাবেলা করতে ব্যার্থ হলো। মানুষ শান্তি চায়। মানুষ দুবেলা দু মুঠো ভাত খেয়ে বাঁচতে  চায়। তাঁরা কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখে না। তাঁদের নুন্যতম চাওয়াকে সম্মান দেখিয়ে সরকারের উচিত হবে তাঁদের একশ পার্সেন্ট নিরাপত্তা প্রদান করা। এত দেরি করা সরকারের ঠিক হয়নি। কারন বেগম জিয়া এসি রুমে বসে কাচ্চি বিরিয়ানী খাবেন আর কর্মসূচী ঘোষণা করবেন তা হতে পারে না। সরকারের উচিত ছিল আন্দোলনের সুযোগ না দিয়ে প্রথমেই বিএনপি নেত্রীসহ নাশকতা সৃষ্টিকারীদের গ্রেফতার করা। এতে করে হয়তো ‘দু’ চার দিন অস্থিরতা থাকতো তবে তাঁরপর সব ঠিক হয়ে যেত। তাই আমি সরকারকে অনুরোধ জানাবো, বেগম জিয়াকে যত দ্রুত গ্রেফতার করা হবে তত দ্রুত অবরোধ সমস্যার সমাধান হবে। তাই তাঁকে গ্রেফতার করে সাধারণ মানুষকে বর্তমান পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিন।