শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

রাজনৈতিক সহিংসতায় পিকনিকপার্টি শূণ্য গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান

কাজী মোসাদ্দেক হোসেন : দেশের বনভোজন রসিকদের সেরা আকর্ষণ গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। শাল গজারীর সবুজেঘেরা কোলাহলমুক্ত ছায়াঘেরা পরিবেশের জন্য এ উদ্যান সবারই পছন্দ। ডিসেম্বর জানুয়ারী দুইমাস বন-ভোজন দলের  আনন্দ উল্লাসে গহীন গজারি বন মেতে উঠত এই সময়ে। পোষাক কারখানার কর্মী, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা বনভোজনে মেতে উঠেন এখানে এসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার পর ছুটির অবসরে প্রায় সারা দেশের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা মাইক ও ব্যানার লাগিয়ে ছুটে আসতেন জাতীয় উদ্যানে। সরকারি বেসরকারি কটেজ মালিক, উদ্যানের ইজারাদার, স্থানীয় ডেকোরেটর, আইসক্রীম বিক্রেতা ও হকারসহ সংশ্লিট সবাই এবার ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সবকিছুই যেন অচল। বেশিরভাগ কটেজেই তালা। এবছর দর্শনার্থীর অভাবে সরকার হারিয়েছে বিরাট অংকের রাজস্ব । 
বিএনপির নেতৃতাধীন ২০ দলীয় বিরোধী জোটের অরোধ, হরতাল ও নৃসংশ কর্মকান্ডের কারনে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় বনভোজন কেন্দ্র ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান এবার নীরব নিস্তব্ধ। মৌসুম শেষ হতে চললেও বন-ভোজন রসিকদের দেখা নেই এবার। নেই উদ্যানের প্রবেশ মুখে কোন ভিড়। কটেজ ও মোটেলগুলি  প্রায় ফাঁকা। আনন্দ, কাঞ্চন, সোনালু, অবকাশ, অবসর, বিনোদন। বকুল, মালঞ্চ, মাধবী, চামেলী, বেলী, জুঁই ইত্যাদি। এখানে ১৩টি কটেজ ও ৬টি রেস্টহাউস রয়েছে। এছাড়াও আছে আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর প্রজাপতি পার্ক। এই জাতীয় উদ্যানের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে জলাশয়। এসব জলাশয়ে শৌখিন পর্যটকরা নৌকায় ঘুরে আনন্দ উপভোগ করে থাকেন।
জাতীয় উদ্যানের প্রজাপতি পার্কে ৩৫টি গোত্রের ১৪৬ প্রজাতির প্রায় ৩৭ হাজার গাছ আছে। এখানেই থাকে বাহারি সব প্রজাপতি। এবার রাজনৈতিক সহিংসতার কারনে সেখানেও কোন দর্শনার্থী নাই।
এব্যাপারে ন্যাশনাল পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রেঞ্জার আবুল হাসেম জানান, পিকনিক মৌসুমে জাতীয় উদ্যান বনভোজন রসিকদের আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতো। সারাটাদিন দশনার্থীদের প্রতীক্ষায় থাকি। কিন্তু কোন লোকজনের দেখা মেলে না। নভেম্বর থেকে ফেব্র“য়ারি পিকনিক মৌসুমে কটেজ ভাড়া থেকে সরকারের ৮-১০ লাখ টাকা আয় হয়ে থাকে। এবার রাজনৈতিক সহিংসতার কারনে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি  তিনমাস কটেজগুলি একেবারেই খালি ছিল। মৌসুম শেষ হতে চলল অথচ  এক লাখ টাকার রাজস্বও আসেনি এবার।
জাতীয় উদ্যানের ইজারাদার মেসার্স বন্ধু ট্রেডার্সের স্বত্তাধিকারি মাজহারুল ইসলাম জানান, এবছর ভ্যাটসহ ৪৩ লাখ টাকায় লীজ নেয়া হয়েছে। পিকনিক পার্টির দর্শনার্থী না থাকায় পুরা বিনিয়োগের টাকাই হারাতে বসেছি। 
সবচেয়ে বেশি লোকসানের মধ্যে পড়েছে ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা পিকনিক ¯পটগুলো। এদরে মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জীবন্ত স্বর্গ,পুষ্পদাম, সোহাগপল্লী।
উদ্যানের পাশের বাহাদুরপুর গ্রামের কুলসুম বলেন, স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ছেলেকে কোমল পানীয় ও চা -পানের দোকান করে দিয়েছিলাম। গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ মারার ভয়ে এবার কেউ পিকনিকে আসে নাই। কিস্তির টাকা কিভাবে যে শোধ করবো- সে চিন্তায় ঘুম আসে না। মাস্টারবাড়ি এলাকার খোকন জানান, পিকনিক পার্টি ও শিক্ষাসফর ছাড়াও পার্কে ঘুরতে আসা লোকদের কাছে আইসক্রীম বিক্রি করে এ মৌসুমে কিছু আয় রোজগার করতাম। এবছর পার্ক শূণ্য থাকায় বেকার বসে আছি।
নভেম্বর থেকে ফেব্র“য়ারি এই চার মাস বনভোজন মৌসুম। এসময় গাড়িতে ব্যানার, মাইকে গান আর আনন্দ নৃত্যসহ  সারা দেশের বন-ভোজন রসিকদের গন্তব্য থাকে গাজীপুরের জাতীয় উদ্যান। সারাদেশের স্কুল কলেজের ছাত্র ছাত্রী বিশেষ করে রাজধানীর সব বয়সের ভ্রমণ পিপাসুরা অধীর আগ্রহে এই সময়টার জন্য সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। হরতাল, অবরোধও জ্বালাও পোড়ার রাজনীতির কারনে দুই বছর যাবৎ বনভোজনের আনন্দ থেকে বঞ্ছিত শহরবাসী।