শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

কলাম

এই পথ যদি শেষ না নয়, তবে কেমন হবে বলতো ? 

 ॥ এম.এ. ফরিদ ॥

বর্তমানে দেশে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। যারা ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকাতলে সবাই এক হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রিয় মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সেদিন দিশেহারা এ জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। ৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আমরা চুড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাঙালী জাতির কাছে বীরের বেশে ফিরে আসেন। তিনি প্লেন থেকে নেমে চুমু খান এ দেশের পবিত্র মাটিকে। সেই দিনই আমরা প্রকৃতভাবে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ করি। স্বাধীন বাংলায় বঙ্গবন্ধুকে বাঙালী জাতি ফিরে পেয়ে উদ্বেলিত ও অভিভূত হয়ে পড়েছিল। বিমান বন্দর থেকে রেসক্রস ময়দান পর্যন্ত মানুষের সমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। সব হারানো মানুষগুলো সকল দুঃখ ভুলে গিয়েছিল শুধু বঙ্গবন্ধুকে কাছে পেয়ে। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রথম বক্তব্যে বলেছিলেন তিনি বাংলাদেশকে ক্ষুদা ও দারিদ্র মুক্ত দেশ গড়বেন এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসবেন। এ জন্য তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেন। সত্যি বঙ্গবন্ধু মাত্র তিন বছরে যুদ্ধ বিধস্ত এ দেশকে আমুল পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। কৃষি ও শিল্পায়নে তিনি বিরাট বিপ্লব ঘটান। ফলে আমরা দ্রুতই উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে থাকি। আমরা সে সময়ে মনে করেছিলাম আমাদের হয়তো আর কোন খারাপ সময়ে ফিরে যেতে হবে না। সামনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে সুখের দিন। কিন্তু বিধিবাম। আমাদের সে আশা এক মূহুর্তেই ধুলোয় মিশে গেল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করা হলো। বাঙালী জাতির জীবনে নেমে এল গভীর অমানিষা ও ঘোর অন্ধকার। আমরা আবার স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শত্রুদের হাতে জিম্মি হয়ে গেলাম। রাষ্ট্র ক্ষমতায় রাজাকার শিরোমণি শাহ্ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী করে কলংঙ্কিত করা হলো পবিত্র পতাকাকে। শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারী করে সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান পূনর্বাসিত করলেন যুদ্ধাপরাধীদের। তিনি যা যা করেছেন তা আর ঘেটে মূল্যবান সময়কে অবমূল্যায়ন করতে চাই না। পরবর্তী ঘটনা সচেতন দেশবাসীর সকলেরই জানা রয়েছে। জেনারেল জিয়ার পদাংঙ্ক অনুসরণ করলেন আর এক জেনারেল এরশাদ। তিনিও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে জারী করলেন সামরিক আইন। হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের হত্যা করে অবশেষে স্বৈরশাসক নাম ললাটে ধারণ করে ৯০ এর গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে বিদায় নেন। তিনি তো ছিলেন মহাপন্ডিত। সামরিক শাসক হয়েও কবিতা, গান, লিখে দেশের মানুষের মন জয় করার চেষ্টা করেছিলেন ধূর্ত প্রকৃতির এই ব্যক্তিটি। শেষ রক্ষা হলো না গান কিংবা কবিতা লিখেও। ৯০ এর পর ক্ষমতায় আসে আমাদের প্রিয় নেত্রী, আপোষহীন নেত্রী, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি। বিএনপি ক্ষমতা গ্রহণ করার পর দেশে শুরু হয়ে যায় জঙ্গিবাদের উত্থান। বাংলা ভাই, উদু ভাইরা সারা দেশে জেএমবি সংগঠন নামের একটি ভয়ংকর সংগঠনের জন্ম দেয়। তাঁরা ৬৩টি জেলায় বোমা বিস্ফোরনের মাধ্যমে তাদের আর্বিভাবের কথা জানান দেন। মাজার, সিনেমা হল, রমনা বটমূল, সভা-সমাবেশ ও বিরোধী দলের ওপর জেএমবির সদস্যরা বোমা হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে প্রায় ১০ হাজার নীরিহ সাধারণ মানুষকে। এ যেন এক আতংঙ্কের দেশ। মানুষ সব সময় ভয়ে থাকতো। এই বুঝি বোমা কেড়ে নিতে যাচ্ছে কারও না কারও মূল্যবান জীবন। যেমনটি ঘটেছিল গাজীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির হল রুমে। সোনার বাংলার মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা থমকে গিয়েছিল। মানুষ কিংকর্তব্য বিমুঢ় হয়ে পড়েছিল। ঘুমোট পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। চাঁপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা মানুষকে শক্তি যুগিয়েছিল। অবশেষে বিদায় হল ধর্ম নিয়ে পুঁজি করে ক্ষমতায় টিকে থাকা দলটির। পুনরায় ক্ষমতায় আসে স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটি। আবার মানুষের মনে সুখ-শান্তি ফিরে আসে। দেশ আবার ঘুুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। এগিয়ে যেতে থাকে বাংলাদেশ। দ্রুত পরিবর্তন আসে দেশের অর্থনীতিতে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সোনার বাংলা গড়তে নানা কর্মসূচী হাতে নেয়। কয়েক লাখ বেকার যুবককে চাকুরীর ব্যবস্থা করা হয়। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রদান করাসহ অসহায় ও দুঃস্থ নারীদের বাস্তবমুখী প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুসহ অসংখ্য ব্রিজ ও কালভাট নির্মাণ করাসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটানো হয়। কৃষিতে ভর্তুকীসহ নানা কৃষি উপকরণ বিনামূল্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ এবং কৃষকদের মাঝে আধুনিক যন্ত্রপাতি বিতরণ করা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরাট সাফল্য। এসব সাফল্য বলে কয়ে শেষ করা যাবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত করেছিল। মাঝখানে আবার উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। কারণ চার দলীয় জোট আবার ক্ষমতায় এসে লুটপাটের রাজনীতি শুরু করেছিল। রাজাকারদের নিয়ে সরকার গঠন করে দেশে পুনরায় জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। মহান সৃষ্টিকর্তা অবশেষে আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন। আওয়ামী লীগ এ দেশের মানুষের ম্যান্ডেট গ্রহণ করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এসেই আবার উন্নয়ন আর উন্নয়ন। বর্তমান সরকারের সফলতায় ঈর্ষান্নিত হয়ে বিএনপি জামায়াত জোট বেপরোয়া হয়ে উঠে। তাঁরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে বাধা গ্রস্থ করতে সারা দেশে তান্ডব শুরু করে। যানবাহনে অগ্নি সংযোগ ও পেট্রোল বোমা মেরে মানুষকে হত্যা করার মহোউৎসবে মেতে উঠেছে স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত শক্তিরা। এদের সহিংসতা থেকে রেহাই পাচ্ছে না অবুঝ শিশুও। এ সব করে তাঁরা দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। বিএনপি জামায়াত একই সূত্রে গাঁথা। নাশকতা সৃষ্টি করে ওরা তৃতীয় শক্তিকে ক্ষমতায় বসাতে চায়। দেশের মানুষের মঙ্গল তাঁরা চায় না। তাঁরা চায় লাশের ওপর দাঁড়িয়ে ক্ষমতায় যেতে। বেগম খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থেকে মুক্ত হলেও তিনি নাকি এখনও অফিসেই থাকবেন। তিনি গত ১৯ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে অবরোধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিলেন। নিজের দলের ও জামায়াত শিবিরের রগকাটা বাহিনী দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা করছেন অপর দিকে এর জন্য সরকারকে দায়ী করলেন তিনি। এখন আবার শোনা যাচ্ছে অবরোধের মধ্যেও মাঝে মাঝে হরতাল ডাকা হতে পারে। এতদিন বিএনপির নেতারা দাবি করে আসছিলেন তাদের নেত্রীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তার মুক্তির জন্যই এই অবরোধ কর্মসূচী ডাকা হয়েছে। এখন তো তিনি আর অবরুদ্ধ নন। তবে কার স্বার্থে অবরোধ চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিলেন বেগম খালেদা জিয়া। তবে তিনি কি শান্তি চান না? দেশ শান্তিতে চলুক, দেশের মানুষ ভালো থাকুক, দেশ এগিয়ে যাক এটা কি তিনি চান না? না কি তিনি তার পেয়ারে পাকিস্তানকে খুশি করতে নিজেকে উৎস্বর্গ করতে চান। হয়তোবা তাই। এ জন্যই হয়তো তিনি চান সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে। তাইতো তাঁর মতে এই পথ যদি শেষ না হতো, তবে কেমন হতো বলোতো। কেমন হতো তা বিচার করার দায়িত্ব এ দেশের নীরিহ জনসাধারণের ওপর ছেড়ে দিলাম। তারাই বিচার করবে এই পথ শেষ হবে নাকি চলমান থাকবে।