শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আজ আখেরী মোনাজাত

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, কনকনে ঠান্ডার মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত

স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী : গতকাল শনিবার ভোর রাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর বৈরি আবহাওয়ার মধ্যদিয়ে অতিবাহিত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের দ্বিতীয় দিন। আজ রোববার আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে শান্তিপূর্ণ ভাবে দুপুর সাড়ে ১২ টার মধ্যে  অনুষ্টিত হবে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাত। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করবেন তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বী মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ বলে ধারনা করা হচ্ছে। আখেরী মোনাজাত পরিচালনা শেষে দুই পর্বে অনুষ্টিত বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তির পর ময়দান থেকে এক ও তিন চিল্লার বিভিন্ন মেয়াদে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বিনের দাওয়াত পৌছে দিতে প্রায় ৫ হাজার জামাত পাঠানো হবে। এবছর নতুন জামাত গুলো ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে। সে প্রস্তুতি চলছে ময়দানে উপস্থিত শীর্ষ মুরব্বীদের মাঝে।
এদিকে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত বন্দেগী আর কোরআন হাদিসের আলোচনায় বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বিশাল প্যান্ডেলে পবিত্র ধর্মীয় আবহাওয়া বিরাজ করছে। দেশব্যপী বিরাজমান রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিরতা, যানবাহন সংকট তার উপর গতকাল ভোর রাত থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, কনকনে ঠান্ডা বাতাস আর শীতকে উপেক্ষা করে রাজধানী ঢাকাসহ দুর-দুরান্ত থেকে ইজতেমা ময়দানে আসা মুসল্লিদের স্রোত যেন কহর দরিয়া তুরাগ নদীর তীরস্থ বিশাল ময়দানে। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের ৩৬০ একর জমিসহ আশপাশের এলাকায় বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯৯১ সালে ইজতেমার বর্তমান স্থানটি ১৬৫ একর যা ডিআইটি বা বর্তমান রাজউক কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত তাবলীগ জামাতকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেয়। সেখানেও গত ৪ বছর যাবৎ মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় এবং তাদের সুবিধার্থে ও যানজট এড়াতে ইজতেমাকে দুই ভাগে ভাগ করে অনুষ্টিত হয়ে আসছে।
উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বয়ান : গতকাল বাদ জোহর পাকিস্থানের শীর্ষ মুরুব্বি মাওলানা জামশেদ আহমেদের ছেলে মাওলানা মো. খোরশেদ আলম ইমান, আমল, জাহান্নাম, জান্নাত ও দাওয়াতে মেহনতের উপর গুরুত্বপূর্ণ বয়ান রাখেন। বয়ানে বলা হয়, মানুষ যখন স্বেচ্ছাচারি জীবন যাপন করে তখন তারা পেরেশানিতে পড়ে। রাসূলে পাক (সা.) এর জীবনব্যবস্থাকে অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে মানুষ সহজেই পেরেশানিতে পড়ে যাবে। বয়ানে আরও বলা হয়েছে, রাসূল পাক (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে যে জীবন ব্যবস্থা নিয়ে এসেছেন তা আপনাতে (নিজের মধ্যে আনতে হবে) হবে। ফিরে আসতে হবে আল্লাহর দ্বীন অনুযায়ী জীবন ব্যবস্থার মধ্যে। তবেই কামিয়াব হওয়া যাবে। আল্লাহর রহমতের নেকবান্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। তবেই দো-জাহানের শান্তি মিলবে।
বয়ান করলেন যারা ঃ- তাবলীগের ৬ উসূলের (মৌলিক বিষয়ে) উপর গতকাল বাদ ফজর ভারতের মাওলানা মো. শওকত আলীর বয়ানের মধ্যদিয়ে দ্বিতীয় দিনের বয়ান শুরু হয়। এ বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা নুরুর রহমান। বাদ জোহর বয়ান করেন মাওলানা খোরশেদ, বাদ আছর বয়ান করেন মাওলানা মো. জাহুর এবং বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা আহাম্মদ লাট। বাদ আছর বয়ান শেষে অনুষ্ঠিত হবে যৌতুক বিহীন বিয়ে। বিয়ের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন মাওলানা মো. জুহায়ের। বয়ান চলে জোহরের নামাজের আগ পর্যন্ত। জোহরের নামাজের পর আবার শুরু হয়। এ বয়ান চলে রাত ৮ পর্যন্থ।
বিশ্ব ইজতেমা আসা মুসল্লিদের মতামত ঃ ময়মনসিংহ জেলার নান্দালইল থানার সিংদই গ্রাম থেকে বিশ্ব ইজতেমায় গত শুক্রবার রাতে আসা মোঃ নাজিম উদ্দিন (৭০)। দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত টঙ্গীর তুরাগ তীরের তাবলিগ জামাতের ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন তিনি। এবারের অভিজ্ঞতা একটু ভিন্ন। ইজতেমার আগ মুহূর্তে হরতাল-অবরোধ হয়েছে কিনা মনে পড়ে না। এক ধরনের  ভোগান্তিকে সঙ্গী করে এবারের বিশ্ব ইজতেমায় এসেছেন তিনি। তিনি এ প্রতিনিধিকে বলেন, আমরা ট্রেনে অনেক কষ্ট করে এবং জীবনের ঝুকি নিয়ে এসেছি। গতকাল ভোর রাত থেকে বৈরি আবহাওয়ায় গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর কনকনে ঠান্ডা বাতাস ফলে ইজতেমা ময়দানে কাঁদা মাঠি আর প্রচন্ড শীতে আমার মতো লাখ লাখ মুসল্লি চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এছাড়াও অনেকে দূর দূরান্ত থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে এসেছেন তুরাগ তীরে। বিশ্ব ইজতেমায় শামিল হতে পারলেও এখনও শঙ্কা কাজ করছে মুসল্লিদের মধ্যে। কারণ ফিরতি পথে যদি আগুন-ভাঙচুরের মধ্যে পড়তে হয় ?
মোঃ রফিকুল ইসলাম (৫০)। তিনি এসেছেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ি থেকে, পেশায় একজন কৃষক। ভোগান্তি সঙ্গে করে ইজতেমায় শামিল হতে পারলেও বাড়ি ফিরে যাওয়া নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে এই মুসল্লির মনে। তিনি বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চলছে। মারামারি কাটাকাটির মধ্যে পড়ে যেতে পারি। মেঘলা আকাশ ও কনকনে শীতকে উপেক্ষা করে আমরা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে বাড়ি পৌঁছাতে পারি সেই দিকটা যেন সরকারি ও বিরোধীদল বিবেচনা করে। অন্তত ইজতেমার ২ টা দিন দেশের পরিস্থিতি যেন ভালো থাক। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া এলাকার মোঃ সামছুদ্দিন (৮০) জানান, তিনি স্বাধীনতার পর থেকে যতবার টঙ্গীতে ইজতেমা অনুষ্টিত হয়েছে ততবারই এসেছি তবে হরতাল ও অবরোধের কারণে মুসল্লি কম হয়েছে অন্য বছরের তুলনায়। অনেকে বাড়তি ভাড়া ও হরতাল আতঙ্কে আসেননি। অনেকে গাড়ি ভাড়া করে ইজতেমায় এসেছেন।
ভিআইপিদের আগমন ঃ- এদিকে আজ রোববারের বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি এডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় নেতা হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম রওশন এরশাদ, তিন বাহিনী প্রধানগণ, সচিব, কুনৈতিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশ গ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
মুসল্লিদের দূর্ভোগ ঃ- ইজতেমায় আসা লাখ লাখ মুসল্লির দূভোর্গ আর ভোগান্তির অন্ত নেই। একদিকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর হিমেল ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় এবং ইজতেমা ময়দানে কাঁদা পানি জমে মুসল্লিরা জড়োসড়ো হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের জন্য ব্যয় বহুল টাকায় তৈরি পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো দু-দিনেই ভরে গিয়ে চরম দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে। অপরদিকে দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপিসহ ২০ দলের ডাকা অনিদিষ্টকালের অবরোধের কারনে বিভিন্ন জেলা থেকে বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা পরিবহন সংকটে পড়ে যেমন যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তবে দুপুরের পরে বৃষ্টি থেমে গিয়ে ক্ষানিকটা রোদ্রের আভা ছড়িয়ে পড়লে মুসল্লিরা কিছুটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলতে দেখা গেছে।
টঙ্গীতে হঠাৎ পলিথিন সিটের দাম বৃদ্ধি ঃ শনিবার বৃষ্টির কারণে মুসুল্লীদের পলিথিন সিটের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ ইজতেমাস্থলের আশে-পাশের বাজারে ব্যবসায়িরা পলিথিন সিটের দাম বাড়িয়ে দেয়। নোয়াখালী থেকে আসা মুসুল্লী আমজাদ হোসেন জানান, আগে যে পলিথিনের প্রতি গজের দাম ছিল ১০টাকা থেকে ১৫টাকা, তার মূল্য বেড়ে হয়েছে ২৫-৩০টাকা, আর যে পলিথিন সিটের প্রতি গঝ ছিল ২০-২৫টাকা তা বেড়ে হয়েছে ৪০-৫০টাকা। মন্নু গেইট এলাকায় ভাসমান পলিথিন বিক্রেতা  আব্দুল কাদের ও মিজানুর রহমান  জানান, বৃষ্টিতে ভিজে কষ্ট করে দূরের বাজার থেকে চড়া দামে পলিথিন সিট ইজতেমা ময়দান এলাকায় এনে বিক্রি করছি। তাই আমরা ওই সিটের দাম একটু বেশি নিচ্ছি। 
ট্রেন চলাচল ঃ- এদিকে পুর্বের ন্যায় এবারও ইজতেমা চলাকালীন সময়ে ট্রাফিক ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য টঙ্গী মুখী স্পেশাল একাধিক ট্রেন চালু করেছে। এছাড়াও আজ আখেরী মোনাজাতের আগে ও পরে ইনওয়ার্ড ও আউটওয়ার্ড শতাধিক ট্রেন চালু থাকবে বলে টঙ্গী রেলওয়ে ষ্টেশন মাষ্টার এপ্রতিনিধিকে জানান।
ফ্রি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ঃ- দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্টিত বিশ্ব ইজতেমায় গত শুক্রবার বিকেল ৪ টা থেকে গতকাল বিকেল ৫ টা পর্যন্ত প্রায় ৪০ টি বে-সরকারী মেডিকেল ক্যাম্পে প্রায় ২১৬০ জন এবং টঙ্গী সরকারী হাসপাতালসহ তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা মন্নু, বাটা, হোন্ডা রোডে স্থাপিত ক্যাম্প গুলোতে প্রায় ১৮২১ মুসল্লিকে ঠান্ডা, জ্বর, ডায়রিয়া, পেঠের ব্যাথা, ও বুকের ব্যথার চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে গতকাল ৫ টা পর্যন্ত  আরো ১৪ জন মুসল্লিকে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া প্রায় ১৯ জন মুসল্লিকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনিষ্টিটিউটসহ ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার ঃ- পুলিশ ও র‌্যাব কন্ট্রোল রুম সুত্রে জানা যায়, বিশ্ব  ইজতেমা ময়দানে আসা মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও দূর্ভোগ লাগবে আশ-পাশে অবৈধ স্থাপনা উচেছদ, পচা-বাসী, ভেজাল, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রনের লক্ষ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইজতেমায় বিশুদ্ধ খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করতে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ভ্রাম্যমান আদালত কাজ করছে। এছাড়াও প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা স্থলে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে র‌্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ইজতেমা ময়দানে আইনশৃংখলা রক্ষায় কঠোর নিরাপত্তা পালন করেছে। ইজতেমা ময়দানের চারপাশে প্রায় ১০ হাজারের অধিক র‌্যাব, পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তা ও সদস্যরা দ্বায়িত্ব পালন করছেন এবং বিপুল পরিমান আনসার মোতায়েন রয়েছে ।
ভ্রাম্যমান আদালত ঃ ইজতেমা মাঠের আশপাশ এলাকায় শুক্রবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ৫টি ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে খাদ্য দ্রব্য আইনে ভেজাল খাদ্য দ্রব্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও বিক্রির অপরাধে ১৫টি মামলা এবং ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে লাগানো বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন, সিনেমার অশ্লীল পোষ্টার উচ্ছেদ করা হয়েছে।
বিভিন্ন অপরাধে আটক ঃ এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন গতকাল শনিবার বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এলাকার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, চুরি, ছিনতাই, অজ্ঞান পাটিরসদস্যদের পূর্ববতী তালিকা অনুযায়ী গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছে। টঙ্গী মডেল থানায় পকেটমার, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধে পুলিশ প্রায় ১৩ জন, তুরাগ থানা পুলিশ ১১ জন ও উত্তরা থানা পুলিশ ৯ জনসহ বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে টহলরত র‌্যাব ও পুলিশ বিভিন্ন অপরাধে আরো ১৪ জনকে আটক করে স্থানীয় স্ব-স্ব থানায় হস্তান্তর করেছে।
ইজতেমায় বিট ভাড়ার নামে চাঁদাবাজী ঃ-  বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় স্থানীয় যুবলীগ নেতা শাহ আলম, ফারুক হোসেন ওরফে পাইভ ফারুক, খোরশেদ আলমসহ ৪/৫ জন নামধারী নেতার নেতৃত্বে কতিপয় চাঁদাবাজরা আব্দুল্লাহপুর থেকে মিলগেইটের ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গীর ষ্টেশন রোড থেকে কামারপাড়া ব্রিজের দু’পাশ এবং ইজতেমা ময়দানের ভেতরে রাস্তার দু’পাশে অস্থায়ী ফুটপাতের দোকানপাট ও বিটসহ বড় বড় দোকানপাট বসিয়ে এবং বিভিন্ন দোকানপাট থেকে ভাড়া হিসেবে ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা ভাড়া করছে। এছাড়াও মিল গেইটের তৃণমূল নেতা মিন্নত আলী মিনু, নিউ মন্নু কটন ফাইন মিলসের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক গনি মিয়ার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি সমর্থিত ১০/১৫ জন নেতা মন্নু মাঠ এবং যুবদল ও বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান ডুব্লি, যুবলীগ নেতা শফিউদ্দিন শফি, রফিকুল ইসলাম রফিক হোন্ডা রোড এবং মাজার রোড বাজার স্থানীয় কতিপয় যুবলীগ নেতাদের নেতৃত্বে দোকান ও বিট প্রতি বাড়া ৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করেছে বলে একাধিক দোকান মালিকরা জানিয়েছে। এছাড়াও ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেকটা ফিল্মী ষ্টাইলে পানি, বিদুৎ ব্যবহারের নামে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করছে বলেও সুত্রটি জানায়। এছাড়াও তৃনমুল নেতা মিন্নত আলী মিনুর বিরুদ্ধে মদ ও নারী কেলেংকারী এমনকি পুত্রবধুকে ধর্ষনের অভিযোগ ও মামলাসহ বিশ্ব ইজতেমায় মন্নু মাঠ লিজ নেয়ার নামে সাধারন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ পানি ছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে লোক পাঠিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ বানিজ্য ঃ- একাধিক ট্রাক ও বাস ড্রাইভার জানায়, কতিপয় ৩/৪ জন ট্রাফিক সার্জেন্ট টঙ্গীর ষ্টেশন রোড, টঙ্গী বাজার, কামারপাড়া রোড, বোডবাজার, বাইপাস চৌরাস্তা, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী ও সালনা এলাকায় কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে তাদের কাছ থেকে ১শ’ থেকে ৫শ’ পর্যন্ত টাকা আদায় করছে। কোন গাড়ীর চালক টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার কাগজপত্র রেখে দেয়া হয় অথবা রেকার-১ এর চালক, রেকার-২ এর চালকসহ তাদের সহযোগীরা মিলে তাদের (যানবাহন চালকদের) ডেকে এনে রেকার লাগিয়ে সরকারী নিয়ম বর্হিভুত মনগড়া জরিমানা করে অযথা হয়রানী অথবা সরকারী কাজে ব্যবহারের অজুহাতে আটকে রাখে এবং ৪/৫ ঘন্টা পর ১০০০/=থেকে ২,০০০/= হাজার টাকার  বিনিময়ে সেগুলো ছেড়ে দেয়। অন্যথায় ইজতেমার কাজে ব্যবহারের নামে যানবাহন রিকুইজিশন করে অযথা মেঘনা রোড, তালতলা রোড, মিলগেইট সোনালী টৌবাকো রোডে ফেলে রেখেছে। এব্যাপারে জেলা যানবাহন কর্মকর্তার (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার এখানে যে সব গাড়ী রয়েছে সেগুলো ট্রাফিস সার্জেন্টরা আটক করে এখানে রেখে গেছে। যানবাহন আটক বা ছাড়ার মালিক সার্জেন্টরা এব্যপারে আমি কিছু জানি না। সার্জেন্ট আনিছুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, প্রতিদিন কতগুলো যানবাহন ধরা হচ্ছে তার রির্পোট এএসপি মহোদয়ের কাছে আছে।
আরো ৩ মুসল্লির মৃত্যু ঃ- গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল বিকেল ৪ টা পর্যন্তÍ  ইজতেমা ময়দানে আরো ৩ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। (ইন্নালিল্লাহে -- রাজেউন)। নিহতরা হলেন- বরিশালের টিকাম্বর এলাকার আলী আজিম হাওলাদার (৬৫), ময়মনসিংহের আবুল হাসেম (৬০) ও  নীলফামারীর গোলাম আযম খান (৫৮) হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন। গতকাল তাদের নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। এনিয়ে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মোট ৮ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে এবং প্রথম পর্বে মৃত্যু হয়েছে ১১ মুসল্লির মৃত্যু হয়েছিলো। শনিবার ফজরের নামাজের পর ইজতেমা ময়দানে নিহতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার বাদ ফজর ও জোহর নামাজে জানাজা শেষে লাশ তাদের গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়েছে।
যৌতুক বিহীন বিয়ে অনুষ্টিত ঃ- গতকাল শনিবার বাদ আসর বিশ্ব ইজতেমায় ১১৮ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়ে পরিচালনা করেন মাওলানা মো. জুহায়ের। তাবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আসর বয়ান মঞ্চের পাশে বসে যৌতুক বিহীন বিয়ের আসর। কনের সম্মতিতে বর ও কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রূপা বা উহার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নব দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে মোনাজাত মাধ্যমে দোয়া করা হয় এবং মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খোরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
যেসব এলাকায় গাড়ি চলবে না : গাজীপুরের ট্রাফিক পুলিশের সহকারি পুলিশ সুপার মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শনিবার রাত ২টার পর থেকে রোববার আখেরি মোনাজাতের সময় পর্যন্ত গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে কুড়িল বিশ্বরোড ও সাভারের বাইপাইল থেকে আব্দুল-াহপুর পর্যন্ত এ্যাম্বুলেন্স ও পুলিশের গাড়ি ছাড়া সাধারণ যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
ইজতেমায় আগত মুসল্লি¬দের গাড়ি পার্কিং : গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকায় আগত মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য ঢাকা পুলিশ হেডকোয়াটার্স ও গাজীপুর জেলা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লি¬¬¬দের যানবাহন পার্কিংয়ের জন্য স্থান নির্ধারণ করেছে ট্রাফিক বিভাগ: ঢাকা মহানগর এলাকা- (১) সাধারণ পার্কিং-১: উত্তরা রাজউক কলেজের আশেপাশে এবং ৬ ও ৮ নং সেক্টর, (২) সিলেট বিভাগ পার্কিং : উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর, (৩) বরিশাল বিভাগ-ধউর ব্রীজ ক্রসিং সংলগ্ন পার্কিং (আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের খালি জায়গা) (৪) ঢাকা বিভাগ পার্কিং- উত্তরা সোনারগাঁও জনপথ সড়কের পূর্ব হতে পশ্চিম মাথা, (৫) খুলনা বিভাগ পার্কিং-উত্তরা ১০ ও ১১নং সেক্টরের সড়কের উভয়পাশে, (৬) রংপুর বিভাগ- প্রত্যাশা হাউজিং, (৭) চট্টগ্রাম বিভাগ- গাউসুল আজম এভিনিউ (১৩নং সেক্টর রোডের পূর্ব প্রান্ত হতে পশ্চিম প্রান্ত হয়ে গরীবে নেওয়াজ রোড), (৮) রাজশাহী বিভাগ পার্কিং- কামারপাড়া হাউজিং মাঠ ও উত্তরা ১০নং সেক্টরের খালি জায়গা। গাজীপুর জেলা- (১) টঙ্গীর কে-২/নেভি সিগারেট ফ্যাক্টরির পাশে, (২) কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিলস গেট গ্যাপ ও পূর্ব পাশের ফাকা জায়গায়, (৩) কাদেরিয়া টেক্সটাইল মিল প্রাঙ্গণ, (৪) মেঘনা টেক্সটাইল মিলের পাশের রাস্তার উভয়াপাশে (৫) সফিউদ্দিন সরকার একাডেমী মাঠ, (৬) সফিউদ্দিন সরকার মাঠের উত্তরপাশে টিআইসি মাঠ, (৭) জয়দেবপুর- চৌরাস্তা ট্রাকস্ট্যান্ড, (৮) চান্দনা-হাইস্কুল মাঠ ও (৯) ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ মাঠ। ঢাকা জেলা : আশুলিয়া কলেজ মাঠ ও আশুলিয়া হাইস্কুল মাঠ।
যেসব স্থানে গাড়ি পার্কিং নিষেধ : ঢাকার মহাখালি ক্রসিং থেকে টঙ্গী হয়ে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মহাসড়কের দুইপাশ, উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল রাস্তার দুইপাশ, প্রগতি সরণীস্থ মধ্যবাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রগতি সরণীস্থ সড়কের দুই পাশ।