যে কারনে গাজীপুরে বিএনপি জনসভা করতে পারেনি
॥ এম.এ. ফরিদ ॥
বিএনপি গত ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরে জনসভা করার ঘোষণা দিয়েছিল। ওই একই দিনে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ মাঠে জনসভা করার কর্মসূচী ঘোষণা করে। বিএনপি ও জেলা ছাত্রলীগ যেহুতু একই দিনে একই স্থানে জনসভা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তখন জেলায় উত্তেজনা দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক। জেলা বিএনপির নেতারা যে কোন মূল্যে জনসভা করার কথা মিডিয়াকে জানান। অপরদিকে জেলা ছাত্রলীগও বিএনপির জনসভাকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়। জেলা ছাত্রলীগের কর্মসূচীকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সমর্থন দেয় এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটাক্ষ করায় তারেক জিয়া ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত বিএনপিকে কোথাও জনসভা করতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দেয়। গাজীপুরে বিএনপি জনসভা করার কথা ঘোষণা করার পর ছাত্রলীগ পুরো সিটি কর্পোরেশন এলাকায় প্রতিদিন মিছিল মিটিং করে আসছিল। অপর দিকে বিএনপি নেতা অধ্যাপক এম.এ. মান্নান ও নীচের সারির জেলা পর্যায়ের দু একজন নেতা ছাড়া আর কাউকে তেমন ভাবে মাঠে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে জেলা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা জনসভার আগের দিন বিকেল পর্যন্ত মাঠ দখলে রাখেন। অনেকে ভেবেছিলেন এই প্রথম জেলায় হয়তো বড় ধরনের কোন দাঙ্গা-হাঙ্গামা হতে যাচ্ছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও যে ভাবে হম্বিতম্বি করলেন তা থেকেও বোঝা যাচ্ছিল কিছু একটা হতে যাচ্ছে। বিএনপির দীর্ঘদিনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলন করে সাংবাদিকদের জানান, তারা যে কোন মূল্যে গাজীপুরে সমাবেশ করবেন। এমন কোন শক্তি নেই যে, তাদের জনসভা বন্ধ করতে পারবে। তিনি আরো বলেছিলেন, তারা গাজীপুুরে আসবেন এবং যেখানেই বাধা আসবে সেখানেই জনসভা হবে। অথচ বিধিবাম সেদিন তারা ঘর থেকেই বের হননি। এমনকি গাজীপুর বিএনপির নেতা-কর্মী কাউকে রাস্তায় দেখা যায় নি। গাজীপুর প্রশাসন অবশ্য বিকেলে ১৪৪ ধারা জারী করেন। বিএনপি মাঠে শক্তি প্রদর্শন করতে না পারার কারন হিসেবে জানা গেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য। অবশ্য যারা সচেতন মহল ও রাজনীতির সংগে সম্পৃত্ত যারা তারা এসব জানেন। তারপরও সকলের অবগতির জন্য একটু উল্লেখ না করার লোভটা সামলাতে পরলাম না। গাজীপুরে বিএনপির অবস্থা কুল রাখি না মান রাখির মতো অবস্থা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে অন্তর দন্দের কারনে রয়েছে একে অপরের সঙ্গে রেষারেষি। হাসান-মান্নান দ্বন্দতো সকলের জানা। অন্য দিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বিগ্রেডিয়ার (অব:) হান্নান শাহ এর রয়েছে একটি বিদ্রোহী পক্ষ। তাছাড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন ও সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল হক বাবুল অপর একটি বিদ্রোহী পক্ষ। কারও সাথে কারও সম্পর্ক নেই। মাঝে মধ্যে রাজনৈতিক কারনে এক মঞ্চে এদের দেখা গেলেও চরম অভ্যন্তরীন কোন্দল রয়েছে সবার মাঝে। কে কখন কাকে নিয়ন্ত্রণ করছে তা বোঝা মুস্কিল। তাদের এমন বিরোধের কারনে কর্মীরা বিভ্রান্তিতে থাকেন। ফলে কোন কর্মসূচী ঘোষণা করা হলে তা সফল করা সম্ভব হয় না। একটি বিশেষ সূত্র জানায়, ২৭ ডিসেম্বর বিএনপির জনসভা হোক এটা কোন জেলা পর্যায়ের বিএনপির কোন নেতারাই চাননি। বরং তারা চেয়েছিলেন প্রশাসন যেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাহলেই তাদের যেন কুলমান দুই দিগই রক্ষা হয়। এজন্য ঘোষিত কর্মসূচী সফল করার জন্য কোন নেতা কর্মীকে মাঠে দেখা যায়নি। যেহুতু বিএনপি ধোকাবাজদের একটি দল তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের খুশি করতে ওই দিন হরতালের মতো ভূয়া একটি কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল জেলা বিএনপি। হরতাল সফল করার মতো কোন নেতা কর্মীকে অনুবিক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুজে পাওয়া গেল না। উল্টো হরতালের মতো হঠকারী কর্মসূচী ঘোষণা করে তারা পালিয়ে নিজেদের রক্ষা করে যেন প্রাণে বেঁচে গেল। কেবল মাত্র নাশকতা করার জন্যই তারা এধরনের কর্মসূচী দিয়েছেন বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। ওই দিন জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসহ যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। জেলায় সম্মানিত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ব্যপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। হরতালের সমর্থনে কোথাও কোন মিছিল পিকেটিং না হলেও বিএনপির কিছু সন্ত্রাসী বড়বাড়ী এলাকায় সাংবাদিকদের বহনকারী একটি মাইক্রোবাসে হামলা চালায়। কাপুরুষচিত এ হামলার নিন্দা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। অনেক সংগঠন এ ঘটনার নিন্দা জানান। এখানে উল্লেখ না করে পারছি না যে, বিএনপির গাজীপুরের নেতারা কোন সময়েই রাস্তায় নেমে মিছিল কিংবা মিটিং করেন না। তারা গোপন স্থানে থেকে মিডিয়ার মাধ্যমে উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে থাকেন। তাদের অন্তর দ্বন্দ ও হঠকারী সিদ্ধান্ত গাজীপুরবাসীকে শুধু লজ্জায় দেয় না বরং তারা বিভ্রান্তিতেও পড়ে। এখানে আর একটি কথা পাঠকের কাছে তুলে ধরতে চাই সেটি হলো গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপি সারা দেশে অবরোধ কর্মসূচী পালন করে আসছে। সেই কর্মসূচীও গাজীপুর বিএনপি পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। উল্টো তারা গত ৪ ডিসেম্বর স্বদলবলে প্রায় শতাধিক নেতাকর্মীদের নিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণে চলে যান। এ দেশের জনগনের সঙ্গে তারা আর কতো তামাশা করবেন। একদিকে কর্মসূচী ও অন্যদিকে প্রমোদ ভ্রমন। এই হচ্ছে গাজীপুর জেলা বিএনপির আসল চরিত্র। এদের চিনে রাখুন প্রিয় গাজীপুরবাসী।