শিরোনাম

সাংবাদিকতার পরিচয়ে চৌরাস্তায় একটি চক্র নানা অপরাধে সক্রিয় : নেতৃত্বে শামীম ও হালিম ক্লিনিকের গেইটে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে কর্তৃপক্ষ টঙ্গী পাইলট স্কুল এন্ড গার্লস কলেজ বৃক্ষরোপন, নামাজের ঘর ও কমনরুম উদ্বোধন গাজীপুরে একজনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড উন্মোচিত হয়নি কালীগঞ্জে সাবেক এমপি পুত্র হত্যা রহস্য গাজীপুরে পুত্র হত্যার পর বাবার আত্মহত্যা তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজের মনের শক্তি অনেক

টঙ্গীতে অনুষ্টিত প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে বিশ্ব ইজতেমা সমাপ্তি

দেশ ও বিশ্ব-মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা 

স্টাফ রিপোর্টার, টঙ্গী : দেশ ও বিশ্ব-মুসলিম উম্মাহর শান্তি, ঐক্য এবং উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনার মধ্যদিয়ে টঙ্গীর কহর দরিয়া (তুরাগ নদী )’র তীরে অনুষ্টিত বিশ্ব তাবলিগ জামাতের ৩ দিনব্যাপী প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা আখেরী মোনাজাতের মধ্যদিয়ে গতকাল রোববার সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়েছে। গতকাল রোববার দেশী-বিদেশী ধর্মপ্রাণ প্রায় ২০ লাখ নারী-পুরুষ মুসল্লির উপস্থিতিতে দুপুর ১১ টা ১৬ মিনিটে মোনাজাত শুরু করেন। দুপুর ১১ টা ৪৬ মিনিটে প্রায় ৩০ মিনিট ব্যাপী আখেরী মোনাজাত পরিচালনা ভারতের মাওলানা মোহাম্মদ সা’দ। গত শুক্রবার ৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিল বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা হবে ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত।
এসময় টঙ্গীর চেরাগআলী থেকে আব্দুল্লাপুর হয়ে কামারপাড়া ও টঙ্গীর ষ্টেশন রোড থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। গতকাল রোববার ইজতেমার শেষ দিন ভোররাত থেকে মোনাজাত শুরুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত টঙ্গীর চারদিক থেকে ছুটে আসে বিভিন্ন বয়সের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ নারী ও পুরুষ। এছাড়াও লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যানবাহন না পেয়ে এবং মানুষের ভীড়ে ইজতেমা ময়দানে পৌছাতে না পেরে (মোবাইল, রেডিও ও টেলিভিশনে সরাসরি ইজতেমা ময়দান থেকে প্রচারিত) বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় বসেই মোনাজাতে অংশ গ্রহন করেছেন। আখেরী মোনাজাতের কারনে রোববার ভোর রাত হতে ঢাকার বিশ্ব রোড থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা, তুরাগ থানার দৌড় মোড় থেকে টঙ্গী হয়ে কালিগঞ্জ রোডের টিএন্ডটি বাজার পর্যন্ত এক মাত্র ট্রেন ব্যতিত সকল যানবাহন বন্ধ করে দেয় স্থানীয় জেলা ও ঢাকা জেলা প্রশাসন। আখেরী মোনাজাতের পূর্বে ঘন্টাব্যাপী ইজতেমা মাঠের উত্তর দিকে তাশকিলের কামরায় স্থাপিত বিশেষ ভাবে তৈরি মঞ্চ থেকে হেদায়েতি বয়ান করা হয়। বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের উদ্দ্যেশে হেদায়তি বয়ানের আগে বাদ ফজর বয়ান করেন- বাংলাদেশী মাওলানা জমির উদ্দিন শেখ। পরে সকাল ৯ টা থেকে হেদায়েতি বয়ান করেন ভারতের মাওলানা সা’দ। বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ যোবায়ের। এ বয়ান ছিল মুলত নতুন ভাবে যারা বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় বের হবেন তাদের উদ্দ্যেশে। চিল্লায় গিয়ে কিভাবে দ্বিনের দাওয়াতের কাজ করবেন, কিভাবে মুসল্লিরা ইবাদত বন্দেগী এবং মসজিদে মসজিদে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করবেন সেসব বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। প্রতিটি খিত্তা থেকে জিম্মাদারগনের সহায়তায় নতুন তালিকাভুক্ত মুসল্লিদের তাশকিলের কামরায় সমবেত করা হয়।
হেদায়েতি বয়ানে বলা হয় ঃ- হেদায়তী বয়ানে ভারতের সাদ বলেন, ইসলামে নামাজের স্থান মানুষের দেহের মাথার মতো। নামাজ হলো আল্লাহর হুকুম। আল্লাহর হুকুম পুরা হলে তার ওয়াদা পূরণ হয়ে যায়। যার দিলে আল্লাহর একিন পয়দা হবে সে আল্লাহর হুকুমকে অগ্রাধিকারদেবে। নামাজের ফজিলত বান্দা তখনই পাবে, যখন কেউ রাসুল (সাঃ)এর  মতো করে নামাজ পড়ে। ভাল মউত তাদেরই হবে, যারা আল্লাহর হুকুম  ও রাসুল (সাঃ)-এর হুকুম মত চলে। নামাজ হলো সবচে’ উঁচু আমল। নামাজ ছাড়া ইসলাম কল্পনা করা যায় না। আল্লাহ্র ভান্ডার থেকে কিছু নেয়ার সবচে’ বড় উপায় হলো নামাজ। কাফের নামাজ পড়বে এটা সম্ভব। কিন্তু একজন মুসলমান নামাজ পড়বেন না, এটা চিন্তা করা যায় না। টাকা পয়সা দিয়ে দুনিয়ার কোন সমস্যার সমাধান নিশ্চিত নয়। কিন্তু আল্লাহ্র আমল সব সমস্যা সমাধান হবে এটা নিশ্চিত। নামাজ মানুষকে সকল হারাম কাজ করা থেকে বিরত রাখে। নামাজের পর দোয়া কবুল হয়। দুনিয়ার সব সমস্যা মোকাবিলায় নামাজ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ্র ভান্ডার থেকে কোন কিছু নেয়ার একমাত্র উপায় হলো নামাজ।  মসজিদে ও ঘরে দীনি আমলের তালিম আনতে হবে। এ কাজে ২৪ ঘন্টার মধ্যে ৮ ঘন্টা, কমপক্ষে আড়াই ঘন্টা দীনের দাওয়াতির মেহনত করতে হবে। দাওয়াতে মেহনতের কাজে পায়ে হেটে চললে আল্লাহর গোস্সা কমে। আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে কান্নাকাটি করলে আল্লাহ ফরিয়াদকারীকে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।
আখেরী মোনাজাতে বলা হয় ঃ- আখেরী মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি ভারতের হযরত মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ। তিনি আরবি ও উর্দু ভাষায় মোনাজাত করেন। তিনি সকাল ১১ টা ১৬ মিনিটে মোনাজাত শুরু করেন, তা চলে ১১টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত মিনিট পর্যন্ত। মোনাজাত শুরু হতেই পুরো এলাকা জুড়ে নেমে আসে পিন পতন নীরবতা। বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা- মুসিবত থেকে হেফাজত করার জন্য দুই হাত তুলে মহান আল্ল¬াহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে রহমত প্রার্থনা করা হয়। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে লাখ লাখ ধর্মপ্রান মুসলমানের কন্ঠে ‘আমিন আল্লাহুমা আমিন’, ‘আমিন, আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত আখেরি মোনাজাত। এ সময় 'আমিন, আল্ল¬াহুম্মা আমিন' ধ্বনিতে মধ্যাহ্নের আকাশ-বাতাস মুখরিত করে মহামহিম ও দয়াময় আল্ল¬াহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় লাখ লাখ মুসল্লি¬ আকুতি জানান। এবারের মোনাজাতে দ্বীনের দাওয়াত সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার তৌফিক কামনা করা হয়। জীবনের সব পাপ-তাপ থেকে মুক্তির জন্য, পরম দয়াময় আল্লাহর দরবারে অনুনয়-বিনয় করে পানাহ ভিক্ষা করছিলেন মুসুল্লীরা। ক্ষমা লাভের আশায় লাখো মানুষের সঙ্গে একত্রে হাত তুলতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন তাঁরা ভোর থেকেই। বহু মানুষের অংশগ্রহণে ইহলোকের মঙ্গল, পরলোকের ক্ষমা, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও বিশ্বশান্তি কামনার মধ্য দিয়ে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে গতকাল রোববার। রোববার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাতে প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ অংশ নিয়েছেন বলে সংশি¬ষ্ট সূত্রের ধারণা।
এদিকে ইজতেমাস্থলে পোঁছুতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মোনাজাতের জন্য পুরানা খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন সিট বিছিয়ে বসে পড়েন। এছাড়াও পাশ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাঁদে, যানবাহনের ছাঁদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায়  মুসুল্লীরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সেদিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পড়া মানুষ । সবাই অপেক্ষায় আছেন কখন শুরু হবে সেই কাঙ্খিত আখেরি মোনাজাত। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশে-পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোন কোন  প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না। নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি মহিলারাও ভিড় ঠেলে  মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছেন।
মুসল্লিরা আল্লাহর রাস্তায় বের হলে হরতাল অবরোধ কোনো সমস্যা নয় ঃ- বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতে মুসল্লীরা এসেছিলেন অবরোধ উপেক্ষা করে। আল্লাহর রাস্তায় যারা বের হবেন, হরতাল অবরোধ তাদের কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারবে না বলে মুসল্লীদের দাবী। ইজতেমায় যোগ দিতে অবরোধ বাধা হতে পারেনি। এবার জামাতবদ্ধ হয়ে দাওয়াতের কাজে বের হতেও অবরোধ কোনো বাধা হয়নি। ।
বিশ্ব ইজতেমায় জামাত গঠিত ঃ- এক চিল্লা, তিন চিল্লার জামাত তৈরী করে দাওয়াতের উদ্দেশে বের হওয়ার প্রস্তুতিও ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। গতকাল রোববার মোনাজাত শেষে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ৫ হাজার জামাত পাঠানোর জন্য মুরব্বীরা তালিকাও তৈরী করে ফেলেছেন। দুই পর্বে অনুষ্টিত বিশ্ব ইজতেমার পর ময়দান থেকে বিভিন্ন মেয়াদে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দ্বিনের দাওয়াত পৌছে দিতে প্রায় ৫ হাজার জামাত পাঠানো হবে। এবছর নতুন জামাত গুলো ঢাকার কাকরাইল মসজিদ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মোতাবেক বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
বিদেশি মেহমান ১৪ হাজার ঃ- এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়াসহ শতাধিক দেশের তাবলিগ জামাতের প্রায় ১৪ হাজার বিদেশি মেহমান এবারের ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক বিদেশি মেহমান আগমন করেন বলে জিম্মাদার মাওলানা গিয়াস উদ্দিন এ প্রতিনিধিকে জানান। তিনি আরো জানান, বিদেশী মেহমানদের কিছু সংখ্যক মেহমান আজ রোববার সন্ধ্যা থেকে দেশে ফেরা শুরু করলেও তাদের একটি বিশাল অংশ ইজতেমা মাঠে আরো কয়েকদিন অবস্থান করবেন এবং দ্বিতীয় বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাত শেষে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে মসজিদে মসজিদে গিয়ে দ্বিনের দাওয়াতের কাজ সেরে নিজ নিজ দেশে ফিরবেন যাবেন।
ভিআইপিদের মোনাজাতে অংশগ্রহণ ঃ- প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতে গনভবন থেকে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, বঙ্গ ভবন থেকে মোনাজাতে রাষ্ট্রপতি এ্যাড, আব্দুল হামিদ এবং গুলশানস্থ বিএনপির কার্যালয়ে বসে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মোনাজাতে অংশ নেন, এছাড়াও বিশ্ব ইজতেমায় আগত লাখ লাখ মুসল্লির সঙ্গে ইজতেমা ময়দানের পূর্ব পাশে শহীদ আহসান উল্লাহ মাষ্টার স্টেডিয়ামে স্থাপিত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসে আখেরী মোনাজাতে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম.এ মান্নান, যুগ্ম সচিব মোঃ আব্দুল খালেক, জেলা প্রশাসক মোঃ নূরুল ইসলাম, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আক্তারুজ্জামান, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ হারুন অর রশীদ পিপিএম, টঙ্গী-জয়দেবপুর সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহান শাহ আলম। এছাড়াও বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব, উপ-সচিব, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্য, বিভিন্ন কুটনৈতিক, বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রিক মিডিয়ার সংবাদকর্মী, স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ইজতেমা ময়দান ও তার আশপাশের এলাকা থেকে মোনাজাতে অংশ নেন।
বাসা বাড়িতে মেহমান ঃ- টঙ্গীর আবাসিক বাসা বাড়ি গুলোতে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে মেহমানদের উপস্থিতি লক্ষ্য করার মতো। শীতের মধ্যে অতিরিক্ত মেহমানদের উপস্থিতিতে বাড়ির গৃহকর্তাসহ গৃহকর্তারা অনেকটা চাপের মুখে রয়েছেন। গৃহকর্তারা জানান, দ্রব্য মুল্যের উর্দ্ধগতির ফলে সাধারণ মানুষ দিশেহারা এ অবস্থায় অতিথি আপ্যায়ণে এ এলাকার বাড়িওয়ালা ও গৃহকর্তারা কোনঠাসায় পড়েছেন। টঙ্গীর গাজীবাড়ি এলাকার বাড়িওয়ালা ও চাল ব্যবসায়ী মোঃ হারুন, গোপালপুরের রোমানের বাড়ির ভাড়াটিয়া মোঃ রফিকুল ইসলাম ওরফে কোকিল ভাই ও হুমায়ুন কবীরের ভাড়াটিয়া ব্যবসায়ী মোঃ রতন মিয়া  টিএন্ডটির মুদি ব্যবসায়ী সিদ্দিক ট্রেডাসের মালিক মোঃ সিদ্দিকুর রহমান জানান, ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কাচাঁ বাজার ও চাল ব্যবসায়ীরা হঠাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি করায় এবং ইজতেমায় আগত মেহমানদের আপ্যায়নে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। সরকারের উচিৎ এসব অর্থলোভী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা।
মোনাজাতে আশপাশে মাইক না থাকায় ঃ- বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের বাইরে আশপাশের এলাকায় প্রথম পর্বের আখেরী মোনাজাতে মাইক না দেয়ায় এবং মোনাজাতের সময় নির্ধারিত না থাকায় দুর-দুরান্ত থেকে আসা লাখ লাখ মুসল্লি চরম ভোগান্তির শিকার হয়। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এবারও প্রথম পর্বে আগত মুসল্লিদের সুবিধার্থে ইজতেমা পরিচালনা কমিটি চারপাশে মাইক না দেয়ার ফলে এবং মোনাজাতের নির্ধারিত সময় বেধে না দেয়ায় লাখ লাখ মুসল্লিদের মধ্যে সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানের বাইরে ষ্টেশন রোড, নতুনবাজার, টিএন্ডটি, মিলগেইট, চেরাগআলী, হোসেন মার্কেট এলাকায় মোনাজাত শুরুর পূর্বেই একাধিকবার মোনাজাত ধরা এবং ছাড়ার হুলুস্থল সৃষ্টি হয়। এত করে মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে অবশ্য দুপুর ১১ টা ১৬ মিনিটে মোনাজাত শুরু হয়ে ১১ টা ৪৬ মিনিটে শেষ হয়। মোনাজাতে আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা বলেন, আগামীতে যেন কোন মুসল্লিকে এধরনের উদ্ভট বিভ্রাটে পড়তে না হয় বিশ্ব ইজতেমা পরিচালনাকারীদের প্রতি তারা এ আহব্বান জানান।
টেলিভিশন-মুঠোফোন ও ওয়্যারলেস সেটে মোনাজাত ঃ- ইজতেমা মাঠে না এসেও মোনাজাতের সময় হাত তুলেছেন অসংখ্য মানুষ। গাজীপুরের চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মাঠ, ভোগড়া মধ্যপাড়া স্কুল মাঠ, নলজানি ওয়্যারলেস মাঠ, ভুরুলিয়া ওয়াপদা মাঠ, কালিয়াকৈর উপজেলার রতনপুর, আন্দারমানিক, সফিপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ওয়্যালেস সেটে, মুঠোফোনের ও মাধ্যমে মোনাজাত প্রচার করা হয়। এসব স্থানে নারীদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। আবার টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করার কারনে অনেকে বাসায় বসে মোনাজাতে অংশ নিয়েছে।
মোবাইল নেটওয়ার্ক সমস্যা ঃ রোববার ইজতেমা ময়দান ও টঙ্গী থেকে কোন মোবাইলেই দেশের বিভিন্নস্থানে নেটওর্য়াক যোগাযোগ সম্ভব হয়নি। মাঝে মধ্যে লাইন পেলেও মূহুর্তেই কেটে যাচ্ছিল। মোবাইল ফোন কোম্পানীগুলো নেটওর্য়াক সুবিধা দিতে ইজতেমা উপলক্ষে ইজতেমার আশপাশ এলাকায় অতিরিক্ত মোবাইল টাওয়ার সংযোগ করেও এ সমস্যার পুরো সমাধান দিতে পারেনি।
বিশ্ব ইজতেমায় আরো ৪ মুসল্লির মৃত্যু ঃ- গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল রোববার দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে আরো ৪ মুসলিরø মৃত্যু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার মৃত রূপচাঁদ সরকারের ছেলে মকবুল হোসেন (৭৫), একই জেলার মোক্তার হোসেনের ছেলে তোয়াজ্জেল হোসেন (৫৯), সিলেটের সামসুদ্দিনের ছেলে সাইদুর রহমান (২০) ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের মৃত সাহেব আলীর ছেলে সোবহান (৭০)। এনিয়ে ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ জনে বলে জিম্মাদার মাওলানা মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান।
আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রন ঃ- গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইজতেমায় ভেজাল পন্যসামগ্রী বেচাকেনা, যানবাহন নিয়ন্ত্রণসহ আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রায় ৪৭ টি বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়াও স্থানীয় প্রশাসন এলাকার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, চুরি, ছিনতাই, অজ্ঞান পাটির সদস্যদের গত শনিবার রাত থেকে রেরাববার দুপুর ২টা পর্যন্তÍ টঙ্গী মডেল থানায় পকেটমার, ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধে পুলিশ প্রায় ৩১ জন, তুরাগ থানা পুলিশ ২৩ জন ও উত্তরা থানা পুলিশ ৩২ জনসহ বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে টহলরত র‌্যাব ও টহল পুলিশ বিভিন্ন অপরাধে আরো প্রায় ৪৫ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।
বিশেষ ট্রেন চলাচল ঃ- এদিকে ইজতেমার আখেরী মোনাজের মুসল্লিদেও যাতায়াতের সুবিধাথে নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে টঙ্গী ও জয়দেবপুর থেকে টঙ্গীতে বিশেষ ২১টি ট্রেন গতকাল ভোর রাত থেকে চালু হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৩০০ শত বিআরটিসি বাস, র‌্যাবের িিবশেষ পরিবহন ব্যবস্থা, এসব যানবাহন র‌্যাব ও পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। ট্রাফিক ও যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণের জন্য টঙ্গী মুখী জামালপুর, ময়মনসিংহ, আখাউড়া, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট থেকে স্পেশাল একাধিক ট্রেন চালু করেছে বাংলাদেশ রেরওয়ে। তছাড়াও আখেরী মোনাজাতের আগে ও পরে ইনওয়ার্ড ও আউটওয়ার্ড এসব ট্রেন চালু থাকবে বলে টঙ্গী রেলওয়ে সুত্র জানায়।
স্বাস্থ্যসেবা প্রদান ঃ- গত শনিবার রাত ৮ টা থেকে গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত ৪০ টি বে-সরকারী মেডিকেল ক্যাম্পে প্রায় ৪৮ হাজার এবং টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে ৪৩ শত ৭৩ জন মুসল্লিকে ঠান্ডা, জ্বর, ডায়রিয়া, পেঠের ব্যাথা, ও বুকের ব্যথার চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে গতকাল দুপুর পর্যন্ত আরো ১০ জন মুসল্লিকে ভর্তি এবং ১৯ জনকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। টঙ্গী সরকারী হাসপাতালে ঔষধ ও পানি সংকট থাকায় সাধারণ মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে বলে হাসপাতালর একটি সুত্র এ প্রতিনিধিকে জানান। এছাড়া সব মিলিযে প্রায় ৪২ জন মুসল্লিকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, হৃদরোগ ইনিষ্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইজতেমায় ধুলোবালি ও পয়ঃনিস্কাশন দুর্ভোগ ঃ- ইজতেমায় আখেরী মোনাজাতে অংশ নিতে আসা লাখ লাখ মুসল্লির দূভোর্গ আর ভোগান্তির অন্ত ছিল না। মুসল্লিদের আগমনের সাথে সাথে মাঠের চারপাশে ধুলো উড়ছে। এদিকে ইজতেমা ময়দানে ধুলোবালি আর হিমেল ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করায় মুসল্লিরা দুর্ভোগে পড়েছেন ক্ষানিকটা। তাছাড়া ইজতেমা ময়দানে মুসল্লিদের জন্য ব্যয় বহুল টাকায় তৈরি পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো দু-দিনেই ভরে গিয়ে চরম দুগর্ন্ধ ছড়াচ্ছে।  ইজতেমা ময়দানের চারপাশে এবং কহর দরিয়া (তুরাগ) এর অর্ধেক অংশ দখল করে কলকারখানা স্থাপন করায় কলকারখানার ময়লা আর্বজনা এবং তাদের বিষাক্ত পানি নির্গমের ফলে কহর দরিয়া তুরাগের দুষিত পানি দূগর্ন্ধময় হয়েছে ফলে মুসল্লিরা অজু ও গোসল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন।
নকল ও ভেজাল পন্যে সয়লাব ঃ- বিশ্ব ইজতেমা প্রস্তুতি কমিটির শীর্ষ এক মুরুব্বী জানান, বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে টঙ্গীসহ আশ-পাশের এলাকায় এক শ্রেণীর মজুদদার ও অর্থলোভী ব্যবসায়ী নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য সামগ্রী মজুদসহ মুল্য বৃদ্ধির জটি চালিয়ে যাচ্ছে বেশ চতুরতার সাথে। এবারও বিশ্ব ইজতেমায় নকল ও ভেজালপন্য বিক্রয়ের হিড়িক পড়ে গেছে। আশ-পাশের এলাকা গুলোতে চলমান হোটেল, রেস্তোরাগুলো প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমার সময় কৌশলে অধিক মোনাফা আয়ের উদ্দেশ্যে পচা-বাসি খাবার দ্বিগুন মুল্যে বিক্রি করায় মুসল্লি¬রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মুসল্লিরা জানান, এসব নোংরা পরিবেশে তৈরি খাবার খেয়ে ও ভেজাল পন্যসামগ্রী ব্যবহার করে বয়োবৃদ্ধ মুসল্লিরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে একাধিক এধরনের ভেজাল ও নকল জুস, তরল পানীয়সহ তেল, আচার, সেমাই, চানাচুর কারখানা রয়েছে। এসকল নকল ও ভেজালপন্য সামগ্রী তৈরি ও বিক্রয় রোধসহ বাজার নিয়ন্ত্রনে রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের এগিয়ে আসার মাধ্যমে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে রেখে এসব ব্যবসায়ীদের প্রতিহত করা প্রয়োজন বলে টঙ্গীবাসী মনে করেন।
বহিরাগত পুলিশের চাঁদাবাজি ঃ- ঢাকার বাইরের জেলা থেকে আসা কতিপয় পোষাকধারী পুলিশ সদস্যদের টহল ডিউটি করার নামে পানি বিক্রেতা ও ফুটপাতের দোকানীদের কাছ থেকে ৫০/২০০ টাকা করে বখরা আদায় করতে দেখা গেছে। শুধু তাই নয় গতকাল আখেরী মোনাজাতের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গী বাজার, বাটা গেইট, আনারকলি, ষ্টেশন রোড, মন্নু গেইট, মিলবাজার, অলিম্পিয়া গেইট, নতুনবাজার, টঙ্গী রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকায় একাধিক টহলরত পুলিশ সদস্যকে রাস্তার পাশে ফুটপাতের ছোট খাটো দোকান মালিকসহ হকারদের কাছ থেকে চা খাওয়ার কথা বলে এ টাকা আদায় করতে দেখা গেছে অনেকটা প্রকাশ্যেই। কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করলে দোকান থেকে সিগারেট, পানিসহ বিভিন্ন পন্যসামগ্রী হাতিয়ে নিতে দেখা যায়।
ইজতেমায় চাঁদাবাজদের উপদ্রব ঃ-  বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সরকার দলীয় স্থানীয় যুবলীগের ৪/৫ জন নামধারী নেতা আব্দুল্লাহপুর থেকে মিলগেইটের ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গীর ষ্টেশন রোড থেকে কামারপাড়া ব্রিজের দু’পাশ এবং ইজতেমা ময়দানের ভেতরে ফুটপাতের দোকানপাটসহ বড় বড় দোকানপাট বসিয়ে এবং বিভিন্ন দোকানপাট থেকে প্রকাশ্যে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে। এছাড়াও কতিপয় নামধারী আরো ১০/১৫ জন নেতা রাস্তার দু’পাশে দোকান প্রতি ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেছে বলে একাধিক দোকান মালিকরা জানিয়েছে। এছাড়াও ফুটপাতের হকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে অনেকটা ফিল্মী ষ্টাইলে চাঁদা তোলা হচ্ছে বলেও সুত্রটি জানায়।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ঃ- মন্নু টেক্সটাইলস মিলস, অলিম্পিয়া টেক্সটাইলস মিলস, কামারপাড়া মাঠসহ টঙ্গী কামারপাড়া রোডের দুপাশে গড়ে উঠা বাজারগুলোর ব্যবসায়ীরা জানান, জায়গার মালিক পক্ষ বিশেষ করে যারা লিজ নিয়েছেন তারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি এক বর্গফুট জায়গার ভাড়া নিচ্ছেন ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা, বিদ্যুৎ বিল নিচ্ছেন প্রতি বাল্পে ২ শত থেকে ৪ শত টাকা, পানির বিল নিচ্ছেন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। যা ব্যবসায়ীদের জন্য জুলুম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়াও পুলিশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চিচকে চাঁদাবাজদের টাকা দিতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত অথচ এবার বাজার গুলোতে বেচা-কেনা নেই বললেই চলে। এভাবে চলতে আগামীতে আর ইজতেমায় ব্যবসা করা যাবে না বলে একাধিক ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও পরিবহন সংকটে মুসল্লিরা ঃ- অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আগত ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিদের কাছ থেকে পরিবহন মালিকসহ তাদের শ্রমিক কর্মচারীরা বাংলাদেশ সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়াকে উপেক্ষা করে দ্বিগুন ভাড়া আদায় করায় মুসুল্লিরা চরম দুর্ভোগ ও হয়রানীর শিকার হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার মহাখালী থেকে টঙ্গী হয়ে কালীগঞ্জ এবং ভৈরব রোড, ময়মনসিংহ রোড, টাঙ্গাইল রোড, শেরপুর রোড, কিশোরগঞ্জ রোড এবং গাজীপুর রোডের যাত্রীবাহী বাসগুলো দ্বিগুন হারে নিজেদের ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করছে বলে একাধিক মুসল্লি¬ অভিযোগ করেছেন। বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিরা তাদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ইজতেমা চলাকালীন সময়ে সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বাসষ্টেশনে আইন শৃংখলারক্ষকারী বাহিনী দ্বারা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন। এছাড়াও গতকাল মুসল্লিরা বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ করে পরিবহন সংকট দেখা দেয়ায় মুসল্লিদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতেও দেখা গেছে।
ট্রাফিক পুলিশ ও বিআরটিএ বানিজ্য ঃ- একাধিক ট্রাক ও বাস ড্রাইভার জানায়, কতিপয় কয়েক জন সার্জেন্ট টঙ্গীর ষ্টেশন রোড, টঙ্গী বাজার, কামারপাড়া রোড, বোডবাজার, বাইপাস চৌরাস্তা, জয়দেবপুর চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী ও সালনা এলাকায় কর্তব্যরত থাকা অবস্থায় প্রকাশ্যে তাদের কাছ থেকে ১শ’ থেকে ৫শ’ পর্যন্ত টাকা আদায় করে থাকে। কোন গাড়ীর চালক টাকা দিতে অস্বীকার করলে তার কাগজপত্র রেখে দেয়া হয় অথবা রেকার-১ এর চালক, রেকার-২ এর চালকসহ তাদের সহযোগীরা মিলে তাদের (যানবাহন চালকদের) ডেকে এনে রেকার লাগিয়ে সরকারী নিয়ম বর্হিভুত মনগড়া জরিমানা করে অযথা হয়রানী অথবা সরকারী কাজে ব্যবহারের অজুহাতে আটকে রাখে এবং ৪/৫ ঘন্টা পর ১০০০/=থেকে ২,০০০/= হাজার টাকার  বিনিময়ে সেগুলো ছেড়ে দেয়।
ওজুর পানি ও পত্রিকা বিক্রির ধুম ঃ- বিশ্ব ইজতেমাকে পুঁজি করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী গতকাল বিশ্ব ইজতেমার আখেরী মোনাজাতের পুর্ব মুহুর্তে আশপাশের এলাকায় পানি সংকট দেখা দেয়ায় এবং মুসল্লিরা ময়দানে প্রবেশ করতে না পারায় বাইরে অবস্থান নিলে মোনাজাতের পূর্ব মূহুর্তে ময়দানের আশপাশে প্রকাশ্যে ওজ’ুর পানি বিক্রি শুরু করে। প্রতি বদনা ওজু’র পানি ১০/১৫ টাকায়, প্রতি পত্রিকার পাতা ৩/৫ টাকায়, প্লাষ্টিকের বস্তা প্রতিটি ১৫/২০ টাকায় এবং ছালার বস্তা প্রতিটি ২০/২৫ টাকায় বিক্রির করতে দেখা গেছে।
কয়েক হাজার পরিত্যক্ত জুতা ও শত মন পত্রিকার কাগজ ঃ- আখেরী মোনাজাত শেষে হুড়োহুড়ি করে ইজতেমা ময়দান থেকে বের হতে গিয়ে কয়েক হাজার জুতা ও সেন্ডেল ফেলেই খালি পায়ে মাঠ ত্যাগ করেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এছাড়াও মোনাজাত শেষে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের সড়ক গুলোকে শতশত মন পত্রিকার কাগজ এবং কয়েক হাজার জুতা ও সেন্ডেল পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় কিছু লোক ও ঠোকাইরা পরিত্যক্ত জুতা ও সেন্ডেল বস্তায় ভরে নিয়ে যায়।
মোনাজাত শেষে যানজট ঃ- মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়া মানুষ একযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে ফেরার চেষ্টা করেন। এতে টঙ্গীর আশে-পাশের সড়ক-মহাসড়ক গুলোতে সৃষ্টি হয় জনজট ও যানজট। ফলে আবারো পায়ে হেটে গন্তব্যে রওনা দেয় মুসুল্লীরা। আর পাঁয়ে হাঁটা মুসুল্লীদের চাপে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মুসুল্লীদের যানবাহন রোববার এরির্পোট লেখা পর্যন্ত থেমে থাকে ইজতেমা মাঠের আশে-পাশের জনগুত্বপূর্ণ এলাকা।